ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

জলবায়ু পরিবর্তন

এক পৃথিবীর মৃত্যু মানে অন্য পৃথিবীর জন্ম!

বাংলানিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৫
এক পৃথিবীর মৃত্যু মানে অন্য পৃথিবীর জন্ম!

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর মরণদশা ঘনিয়ে আসছে--- এমন কথাই বলা হচ্ছে গত ক’দশকজুড়ে। আসলেই কি তাই? না, একদল বিজ্ঞানী বলছেন অন্য কথা।

পৃথিবী নিজেই তার মৃত্যু ঠেকাবে—বলছেন তারা। এমন একজন বিজ্ঞানী হচ্ছেন ক্লাউস উইন্টার (Klaus Winter)। তিনি স্মিথসোনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর কেমন দশা হবে, বছরকয় আগে তারই একটা পরীক্ষা চালান পানামার একটি ল্যাবে। তিনি একটি ছোট্ট গ্রিনহাউসে রোপন করলেন উষ্ণ মণ্ডলীয় এলাকার ১০টি গাছের চারা। ওদের কয়েকটিকে তিনি বেড়ে উঠতে দিলেন গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় অরণ্যের অনুরূপ পরিবেশে---৭৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায়। আর বাকিগুলোকে এর চেয়েও অনেক বেশি তাপমাত্রায়; ভয়ঙ্কর বৈরী পরিবেশে—সর্বনিম্ন ৯৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায়। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে দেখলেন বাঁচতে না-পারার-মতো-পরিবেশেও ওরা দিব্যি টিকে আছে। টিকে আছে শুধু নয়, এগুলো বৈরী পরিবেশেও তরতর করে বাড়ছে।

‘জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের ফলে গোটা অ্যামাজন অরণ্যটিই এক সময় হয়ে উঠবে ধু-ধু মরুভূমি’--বিজ্ঞানীদের আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করে দিল এই ক’টি ক্ষুদে চারাগাছ।

ক্লাইস দেখলেন,পরিবেশ যতো বিরূপই হোক গাছপালা এসবের সাথে নিজেদের ঠিকই মানিয়ে নিতে পারে। কোনো কোনোটি বরং স্বাভাবিক পরিবেশের চেয়েও বিরূপ-বৈরী পরিবেশে আরো বেশি বাড়ে। তিনি যে দশ ধরনের চারা লাগিয়েছিলেন সেগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি মরেছে। বাকিগুলো বাড়বাড়ন্ত।

চারাগাছগুলোর এই টিকে থাকা ও বেড়ে ওঠা থেকে ক্লাউস এই ধারণায় উপনীত হলেন যে, অন্তত গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় এলাকার গাছগালার জন্য অধিক তাপমাত্রা বরং আরো বেশি অনুকূল—‘Warmer temperatures can be a boon for tropical forests.’
যেমন ধরুন, মিশিগান এলাকার বৃষ্টিবনের কথা। সেখানকার গড় তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তবু সেখানে গাছপালা কতো ঘন-নিবিড়!
আর অত্যধিক ঠাণ্ডায়ও গাছ জানে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মন্ত্র। নইলে কি উত্তর মেরুর হিম-যবনিকার মধ্যেও পামগাছ বেড়ে ওঠে আর টিকে থাকে?
  তবে এর মানে এই নয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন হলে গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় অরণ্যের বৃক্ষরাজির ওপর তা একদমই প্রভাব ফেলবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপতা যদি এমন পর্যায়ে চলে যায় যেখানে অভিযোজনের কোনো চেষ্টাই আর কাজে আসবে না, তখন? তখন বলতেই হবে যে, পৃথিবীর মরণদশা কেউ আর ঠেকাতে পারবে না।

এখানেও আশার বাণী শোনাচ্ছেন ক্লাউস উইন্টারের মতো বিজ্ঞানীরা---‘পৃথিবীর এহেন মরণদশা থেকেই জন্ম নেবে অন্য এক পৃথিবী—অন্য এক জীব-পরিবেশ। বিলুপ্ত প্রাণি ও উদ্ভিদের স্থানটি পূরণ করবে নবতর প্রাণি ও উদ্ভিদ: 

‘Mass extinctions will open ecological niches, and environmental changes will create new ones. New creatures will evolve to fill them, guided by unforeseen selection pressures. ’
তাহলে আসুন আমরাও আশায় বুক বাঁধি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।