শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): আমাদের দেশে প্রাণিদের শরীরে এখন স্থান পাচ্ছে রেডিও ট্রান্সমিটার। উল্লেখযোগ্য প্রাণিদের মধ্যে রয়েছে, অজগর ও কচ্ছপ।
কিন্তু কেন এ পদ্ধতি? কেন এ বাড়তি ঝামেলা তাদের শরীরে?
এ বিষয়টি নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় অজগর গবেষণা প্রকল্পের গবেষক ও প্রখ্যাত সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ শাহরীয়ার সিজার রহমান বলেন, রেডিও ট্রান্সমিটার বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিদের উপর গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে আমরা নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। সেই মূল্যবান তথ্যগুলোই এদের প্রকৃতির মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করছে।
যেমন ধরেন, অজগর কিংবা কচ্ছপের কথা- আমাদের দেশে এ প্রাণিগুলো আজ বিপন্ন। ইতোমধ্যে আমরা সাতটি অজগর ও আটটি কচ্ছপের শরীরে রেডিও ট্রান্সমিটার সংযোজন করে বনে ছেড়ে দিয়েছি। একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে, ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে প্রাণিগুলো সম্পর্কে জানা, যোগ করেন সিজার।
বিলুপ্তপ্রায় এসব সরীসৃপ প্রাণিকে প্রকৃতির মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তার সম্পর্কে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করাই মূলত এ গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য বলে তিনি জানান।
রেডিও ট্রান্সমিটার সম্পর্কে সিজার বলেন, আমরা যে রেডিও শুনি সেটিই। এ রেডিওর নির্দিষ্ট মেগাহার্জ থাকে। এটি খুব মডার্ন টেকনোলজি নয়। বন্যপ্রাণি গবেষণার কাজে যে ট্রান্সমিটারটি এদের শরীরে স্থাপন করা হয়, এর একটি সুনির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি থাকে।
‘যেমন মনে করেন, ১শ ৪০ মেগাহার্জ। এ ফ্রিকোয়েন্সিতে আসলেই এক প্রকারের সংকেত মেলে। তখন রিসিভার ওই তথ্যগুলো নেয় ও আমরা তা জানতে পারি। এ পুরো কাজটিই চলে বিশেষ ধরনের একটি অন্টেনার সাহায্যে। ’
তিনি বলেন, আধঘণ্টার একটি ছোট্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অজগরের চামড়ার নিচে ট্রান্সমিটারটি বসিয়ে দেওয়া হয়। দু-তিন দিন পর্যবেক্ষণের পর অবমুক্ত করা হয়। অজগরের মোট ওজনের তুলনায় ট্রান্সমিটারের ওজন শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। ট্রান্সমিটারের ওজন ২০ গ্রাম। দৈর্ঘ্য প্রায় এক দশমিক তিন সেন্টিমিটিার। অনেকটা পেন্সিল ব্যাটারির মতো। ৫শ মিটার থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত এ ট্রান্সমিটারের কার্যক্ষমতা।
‘যেমন ধরেন, ট্রান্সমিটারযুক্ত অজগর সাপটি উত্তরদিকে অবস্থান করছে। তখন অ্যান্টেনা উত্তর দিকে তাক করলে ওইদিক থেকেই সংকেত আসবে। দক্ষিণ দিকে অ্যান্টেনা থাকলে কোনো সংকেত আসবে না। আমাদের হাতে থাকা রেডিওতে ‘বিপ’ ‘বিপ’ ‘বিপ’ সংকেতধ্বনি জানান দেবে এর উপস্থিতি। আমরা নিয়মিত ওই প্রাণিগুলোর উপর মনিটরিং করছি। ’
এ প্রযুক্তিটি বিশ্বের অন্য দেশে ১৯৫৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে। তবে ১৯৭০ সাল থেকে এ ‘রেডিও ট্র্যাকিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্য দেশে প্রতি বছর হাজারো সাপের উপর গবেষণা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, এখন এমন কোনো প্রাণী নেই যার শরীরে এ রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যবহৃত হচ্ছে না। আরও আশ্চর্যের বিষয়, এখন প্রজাপতির মধ্যেও এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ওটা ঠিক রেডিও ট্রান্সমিটার নয়। এর কার্যক্ষমতা অনেকটা এ রকমই।
তিনি আরও বলেন, বিটিআরসি ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে ‘ক্যারিনাম’ সংস্থার উদ্যোগে এ প্রকল্পগুলো আমরা বাস্তবায়ন করে চলেছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫
বিবিবি/এসএস