ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে বিরল প্রজাতির ‘তারকা কচ্ছপ’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে বিরল প্রজাতির ‘তারকা কচ্ছপ’ ছবি: জি এম মুজিবুর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে ফিরে: কাছিম ও কচ্ছপ উদ্ধার কেন্দ্রটিতে এক অন্যরকম পরিবেশ। সবুজ বেষ্টনীর মধ্যে সুনশান নীরবতা।

যত্ন করে ছোট ছোট পুকুরে রাখা হয়েছে নানা প্রজাতির কচ্ছপ। ৬টি পুকুরে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার কচ্ছপ রয়েছে।
 
বেষ্টনীর মধ্যে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে কচ্ছপের বিচরণ। কোনোটি আবার পুকুর থেকে পাড়ে উঠে এসেছে। ধীরে ধীরে বেষ্টনীর মধ্যে পা বাড়ালেই হাজারও কচ্ছপের বিচরণ উপভোগ করা যাবে। পানির মধ্য থেকেও লুকোচুরি খেলছে এরা। মাঝে মধ্যে মাথা বের করে উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
 
এই বেষ্টনীর মধ্যে আলাদা পুকুরে শুক্রবার (৯ অক্টোবর) ১৬৮টি বাদামি রংয়ের ‘তারকা কচ্ছপ’ অবমুক্ত করা হয়। এসব কচ্ছপ বেনাপোল থেকে উদ্ধার করা  হয়েছিল। সাফারি পার্কের নতুন পরিবেশের সঙ্গে এরা মানিয়ে নিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পার্কের সুপারভাইজার মুন্সী আনিসুর রহমান।
 
তিনি বলেন, আমাদের সাফারি পার্কে ১৬৮টি বিরল ‘তারকা কচ্ছপ’ পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। কারণ আগে থেকেই এই বিরল প্রজাতির কচ্ছপ আমাদের পার্কে রয়েছে। কচ্ছপগুলো ভারত থেকে আসা। ভারতের পরিবেশের সঙ্গে আমাদের পরিবেশর খুব বেশি পার্থক্য নেই। বিরল প্রজাতির কচ্ছপগুলো ঠিক মতো খাবার খাচ্ছে। চলাচলেও কোনো সমস্যা নেই।
 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কচ্ছপগুলোর খাবারের মেন্যুতে এখন রাখা হয়েছে বরবটি, কলমিশাক, পুঁইশাক, পাকা পেঁপে, পাকা কলা, শসা। তবে এসব কচ্ছপ তরমুজ ও বাঙ্গি অধিক পছন্দ করে। অন্যান্য কচ্ছপ পুকুর ভরা পানি পছন্দ করলেও এদের পছন্দ স্যাঁতস্যাঁতে সবুজ ঘাস যুক্ত স্থান। পুকুরের উপরে  দেওয়া হয়েছে ছনের ছাউনি।   এর মধ্যে ছোট ছোট পানির ফোয়ারা রয়েছে।  
 
অন্যদিকে সাফারি পার্ক থেকে জানা গেছে, প্রতিটা কচ্ছপের আনুমানিক দাম ৪০ হাজার টাকা। কারণ এসব  কচ্ছপের  মাংসের খুব চাহিদা। এ জাতীয় কচ্ছপ দিয়ে স্যুপ তৈরি করা হয়। আর উপরের শক্ত অংশ দিয়ে অলংকারের বাক্স তৈরি হয়। এই শক্ত অংশ এমনিতেই দেখতে অনেক সুন্দর। দেখে মনে হবে, এক খণ্ড কাঠের টুকরোর উপর  খোদাইয়ের কাজ।
 
তবে সাফারি পার্কে সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার কচ্ছপ রয়েছে। এরা অনেকে প্রকৃতিতেই ডিম পাড়ছে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হচ্ছে। তবে সংরক্ষিত এলাকায় ৬ থেকে ৭ হাজার  কচ্ছপ রাখা হয়েছে। এখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ।
 
সাফারি পার্কের লেক ও প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে অনেক কচ্ছপ। সবুজে ঘেরা সরু ও আঁকা-বাঁকাপথ চলতে চলতে দেখা মিলবে নানা প্রজাতির কচ্ছপ।  
 
এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্কে এশীয় তৃণভোজী এবং মাংসাশী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর আবাস। রয়েছে জলাধার, বাগান ও অজগর শেড।
 
খাবার হিসেবে অজগর শেডে ছেড়ে দেয়া হয়েছে দেশি মুরগি। অজগরের বেষ্টনীর ভেতরে একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে বড় বড় অজগর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর গা ঘেঁষেই গুঁই সাপের বেষ্টনী। এর পরেই আবারও কচ্ছপের বেষ্টনী। এর মধ্যে ধূম, সুন্ধি, চিত্রা, হলদে কাইটে, কড়ি কাইটে ও সিলেট কড়িকাইটে কচ্ছপের বসবাস। এই বেষ্টনীর পাশের একটি পুকুর আবার ঘড়িয়ালের দখলে।
 
এখান থেকে কয়েক মিনিট পায়ে হাঁটলেই কুমিরের বেষ্টনী। পৃথক পৃথক বেষ্টনীতে রয়েছে ২০টা কুমির। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ৫টা এবং লোনা পানির কুমির ১৫টা।
 
এদের মধ্যেও পেয়ার তৈরি হয়েছে। আগামীতে ব্যপকভাবে কুমির বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
 
কুমিরের খাবার মেন্যুতে রাখা হয়েছে মাংস ও মাছ। তবে তীব্র শীতে তিন মাস কোনো খাবার খায় না কুমির। পুকুর পাড়ে কাদা মাটিতে কুমিরের গড়াগড়ি ও মেটো পথে কচ্ছপের হঠাৎ উপস্থিতি সত্যিই এক অন্যরকম  ভালোলাগা এনে দেবে দর্শনার্থীদের মধ্যে।
 
বাংলাদেশ সময: ০১০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
এমআইএস/জেডএম

** বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে মাছের সঙ্গে খেলা!
** মানুষের ঠোঁট থেকে খাবার ঠুকরে নেওয়া ম্যাকাও
** সিংহ শাবকের পুরুষ মা!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।