শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক বন। বনের একেকটি গাছ উজাড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণীও।
লাউয়াছড়া শ্রীমঙ্গলের একটি সংরক্ষিত বন। চোরাকারবারিদের কবলে পড়ে স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে এ বনটিও। কমে যাচ্ছে প্রাণীর সংখ্যা।
মায়াহরিণ লাউয়াছড়া বনের অন্যতম একটি প্রাণী। কিন্তু দিনে দিনে সংখ্যা কমছে এদের। তবে আশার কথা লাউয়াছড়ায় মায়াহরিণের পরীক্ষামূলক কৃত্রিম প্রজননের উদ্যোগ নিয়েছে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
মায়াহরিণকে প্রকৃতির মাঝে টিকিয়ে রাখতে কৃত্রিম প্রজননের কথা মাথায় রেখে এ উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রায় চল্লিশ শতক জায়গা নির্বাচন করে এরইমধ্যে নির্মিত হয়েছে আবাস।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়ায় গিয়ে দেখা যায়, তিনটি মায়াহরিণের নারী দু’টি খাবার খেতে ব্যস্ত। একমাত্র পুরুষ হরিণটি তখন বিশ্রামরত। তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। মায়া, রানি ও জেমস।
গাজর প্রিয় খাবার বলে হরিণগুলোর মুখের সামনে তুলে ধরা মাত্র মিনিটের মধ্যেই চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ এলাকায় প্রায়ই মায়াহরিণ দেখি; কিন্তু একটিও মায়াহরিণের বাচ্চা দেখি না। আমার শঙ্কা জাগে– তবে কি শিয়াল, অগজর বা অন্য প্রাণী কি মায়াহরিণের বাচ্চাগুলোকে খেয়ে ফেলে?
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবতে থাকি। এ ভাবনা থেকে আমাদের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে পরীক্ষামূলকভাবে আমি মায়াহরিণের একটি প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। দু’টি নারী এবং একটি পুরুষ মায়াহরিণ এখানে রয়েছে।
প্রজনন কেন্দ্রটি মাত্র একমাস চালু করা হয়েছে বলে জানান এসিএফ।
এদের খাবার সম্পর্কে এসিএফ তবিবুর রহমান বলেন, গাজর, বহেরা, ডুমুর, বাঁধাকপি, ফুলকপি প্রভৃতি খাবার দিতে হয় হরিণগুলোকে। দৈনিক পাঁচ কেজি করে খাবার খায় এরা। সে হিসেবে দৈনিক ১৮০ টাকার সবজি ও ফল দেওয়া লাগে।
এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগটিকে সফল করতে প্রাণিবিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেওয়ার কথা জানান তিনি।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়ার ইন্টারপিটিশন সেন্টারে তিনটি হরিণ দিয়ে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে একটি উদ্যোগ নিয়েছি। এটি সফল হলে প্রকৃতির মাঝে মায়াহরিণের বাচ্চাদের নির্দিষ্ট সময় পরে ছেড়ে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
বিবিবি/এএ