ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিপন্ন ‘ফলস কোবরা’র দেখা দ্বিতীয়বার

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৬
বিপন্ন ‘ফলস কোবরা’র দেখা দ্বিতীয়বার ছবি: তানিয়া খান (তিনি একজন বন্যপ্রাণি গবেষক ও আলোকচিত্রী)- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বনের জঙ্গলঘেরা নানান বাঁকগুলো পেরিয়ে যেতেই হঠাৎ দেখা গেলো একটি বড় আকারের সাপ! অল্প দূরে ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সেইসঙ্গে তার মুখ থেকে...

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): বনের জঙ্গলঘেরা নানান বাঁকগুলো পেরিয়ে যেতেই হঠাৎ দেখা গেলো একটি বড় আকারের সাপ! অল্প দূরে ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সেইসঙ্গে তার মুখ থেকে বেরোচ্ছে ‘ফসস, ফসস’ হুংকার ধ্বনি! এমন ভয়ানক শব্দে চেতনা হয় কিংকর্তব্যবিমূঢ়! সে মুহুর্তে মানুষের কী করা উচিত বুঝে-ওঠা দায়!

তিন বছর আগে অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর ২০১৩ সালে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর বনে প্রথমবারের মতো একটি বড় আকারের ‘ফলস কোবরা’ (False Cobra) সাপ দেখে বাংলানিউজকে নিজের অনুভূতি তুলে ধরেন বন্যপ্রাণি গবেষক ও আলোকচিত্রী তানিয়া খান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মন চাইছিল ওর কাছে গিয়ে ওকে ভালো করে একটুখানি দেখি, কিন্তু আমার বিবেক আর বুদ্ধি আমাকে বারবার এই কথা বলছে - না, তুমি এখন আর সামনে যেও না। ’

সাপ তার নিজস্ব এলাকায় অচেনা কারোর অনুপ্রবেশ পছন্দ করে না। অনাহুতের এমন আগমন এক মুহুর্তে তাকে ব্যাপক চিন্তিত করে তুলে। তাই এই ফণাধারণ তার স্বভাবজাত পর্যবেক্ষণ এবং আত্মরক্ষার গোপন কৌশল। আর ওদিকে সেই আগন্তুক ব্যক্তিটি তখন চরম ভয় আর ব্যাপক উৎকণ্ঠার উপলব্ধিগুলোকে নিয়ে কী করবে বুঝে উঠতে পারেন না। সাধারণ জনগণের মধ্যে সাপ দেখার অবস্থাগুলো সাধারণত এমনই হয়।

এ-তো গেলো তিন বছর আগের কথা। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর এই এলাকায় দ্বিতীয়বারের মতো মাঝারি আকারে ‘ফলস কোবলা’ পাওয়া গেলো। বাংলাদেশে এই সাপটি দেখার দু’টি রেকর্ডই তানিয়া খানের।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি কমলগঞ্জের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনের আদমপুর বিট এলাকায় যাই। বনে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ বাঁশবাগানের কাছে এই সাপটিকে দেখতে পাই। এরা সাধারণত মিশ্র চিরসবুজ বনে ও পাহাড়ি ছড়ার কাছাকাছি থাকে। সাধারণত বিশেষ করে এরা ব্যাঙ ও গিরগিটি জাতীয় প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে। মৌলভীবাজারে কোবরাকে ‘আঠালি সাপ’ বলে থাকে।

সাপটির আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, তিন বছর আগে দেখা পাওয়া ওই সাপটি ছিল পরিণত বয়সের এবং তার দৈর্ঘ ছিল ৫ ফুট। দ্বিতীয়বার দেখা পাওয়া সাপটি পরিণত বয়সের নয় এবং তার দৈর্ঘ ছিল প্রায় ৩ ফুটের মতো। এরা লাফিয়ে ফণা তোলে এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন। পানি ও মাটিতে সমানভাবে দ্রুত দৌড়াতে পারে।

সাপটির ‘বিষ’ প্রসঙ্গে তানিয়া বলেন, কোবরা সাপের বিষ থাকে। কিন্তু তা নাকি বিষ নয়। এ কারণে এটিকে ‘ফলস কোবরা’ বলা হয়ে থাকে। সাপটি দেখতে বেশ সুন্দর; অবিকল কোবরার মতো।

ফলস কোবরার বৈজ্ঞানিক নাম Pseudoxenodon macrops। বাংলাদেশে এ সাপটি একেবারেই বিরল। তাই এর সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যও অপ্রতুল। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ (আইইউসিএন) ফলস কোবরাকে ‘বিপন্ন’ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে।
আইইউসিএন ও বন বিভাগের প্রকাশিত ‘রেড লিস্ট অব বাংলাদেশ’ (২০১৫) গ্রন্থে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মৌলভীবাজারের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনের আদমপুর বন বিটের একটি ছড়ার কাছে ফলস কোবরা দেখার রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশে আর কোথাও সাপটি দেখা যাওয়ার বিষয়ে তথ্য নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৬
বিবিবি/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।