ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ভাঙন আতঙ্কে রাজবাড়ীর শত শত পরিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৮
ভাঙন আতঙ্কে রাজবাড়ীর শত শত পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রাজবাড়ীর শত শত পরিবার

রাজবাড়ী: বর্ষা মৌসুম শুরুর আরো দু’মাস বাকি। কিন্তু, এরই মধ্যে রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। 

এদিকে, শহররক্ষা বাঁধটিও রয়েছে হুমকির মুখে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন পদ্মা তীরবর্তী শত শত পরিবার।

এরপরও নদী শাসনে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।  

স্থানীয়দের শঙ্কা দ্রুত নদী শাসনে স্থায়ী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগমী বর্ষায়ই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে শহর রক্ষা বাঁধটি।  

রাজবাড়ীর উড়াকান্দা এলাকার কৃষক আকবার সরদার বাংলানিউজকে বলেন, গেল বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মানদীর গ্রাসে বাপ-দাদার ভিটেমাটি, চাষাবাদের জমি সবই হারিয়েছি। সবকিছু হারিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কপালে নিয়ে পরিবার পরিজনসহ আশ্রয় নিয়েছি রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধের এ পাড়ে অন্যের জমিতে। এ বছর নদী ভাঙে কী না সে চিন্তায় আছি। কারণ, বর্ষা প্রায় চলে এসেছে, এদিকে নদী ভাঙতে ভাঙতে এসে ঠেকেছে শহররক্ষা বাঁধের কাছাকাছি। কিন্তু, বাঁধ রক্ষায় এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, রাজবাড়ীর উড়াকান্দা, অন্তারমোড়, নয়নসুখ, চরবরাট, বেথুরী, সাঁজাপুর, বেতকা ও চর দেলুন্দিসহ কয়েকটি গ্রামে আমার মতো এমন শত শত পরিবার রয়েছে। পরিবারগুলো প্রতি মুহূর্তে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। নদী শাসনে সরকার দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ না নিলে পদ্মা তীরবর্তী এসব পরিবার শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও হারাবে।  

এরই মধ্যে চরবরাট, বেথুরী, সাঁজাপুর, বেতকা ও চর দেলুন্দি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে বিলীন হতে শুরু করেছে ফসলি জমি।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদীতে তীব্র স্রোত শুরু না হলেও বর্ষা শুরুর আগেই ঝড়ো বাতাসে নদীতে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল ঢেউ। আর এ ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙতে শুরু করেছে পদ্মা পাড়।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সরকার আজ পর্যন্ত তা শুরু করতে পারেনি। গত বছর পদ্মার ভাঙনে শত শত ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে মানুষ মানবেতন জীবন-যাপন করলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে।  

দ্রুত বাঁধ রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ না নিলে এ বছর বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে রাজবাড়ী শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে, রাজবাড়ী শহররক্ষা বেড়িবাঁধকে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য পদ্মা তীরবর্তী যুবকেরা দীর্ঘদিন ধরে ‘বেড়ীবাঁধ রক্ষা আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে একটি সংগঠন খুলে ফেসবুকে তাদের দাবি জানিয়ে আসছেন।  ভাঙন আতঙ্কে রাজবাড়ীর শত শত পরিবার

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বাংলানিউজকে জানান, নদী ভাঙনের কবল থেকে রাজবাড়ী শহররক্ষাকারী বাঁধটি রক্ষার জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ৩৪২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। নৌ বাহিনীর প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপ ইয়ার্ড অবিলম্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
 
শিগগিরই কাজ শুরুর আশ্বাস দিলেও, ঠিক কতোদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি জেলা প্রশাসক।  

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার জানান, প্রকল্প অনুমোদন হলেও বর্ষা চলে আসায় এ বছর শহররক্ষা বাঁধ রক্ষায় স্থায়ী কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। প্রকল্পের আওতায় আপাতত জিও ব্যাগ দিয়ে শহররক্ষা বাঁধ ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে লক্ষ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সভা হওয়ার কথা রয়েছে।

বর্ষা মৌসুম শেষে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।