ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বদলে যাচ্ছে ভবিষ্যতের জাহাজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৮
বদলে যাচ্ছে ভবিষ্যতের জাহাজ ...

ঢাকা: জাহাজ থেকে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমানোর উদ্দেশ্যে প্রায় ৫০ হাজার নৌবহরে নতুন প্রযুক্তি যোগ করার পরিকল্পনা চলছে। আন্তর্জাতিক রুটে যাতায়াতকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে বিশ্বের ২ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী করা হয়, একই পরিমাণ কার্বন নির্গমন ঘটে প্লেন থেকেও।

বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী নৌপরিবহন শিল্প থেকে কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন প্রযুক্তি সংযোগ করার বিষয়ে কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মনে করে, ২০৫০ সালের মধ্যে খুবই কার্যকরভাবে এ খাত থেকে নির্গত গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

এজন্য জাহাজগুলোকে চলাচলের জন্য জীবাশ্ম-জ্বালানির বদলে বায়ুশক্তিকে কাজে লাগানোর কথাও মাথায় রাখা হয়েছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নীতিনির্ধারকদের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী শুধু বর্তমান প্রচলিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ সফলতা অর্জন সহজেই সম্ভব।

ডেনমার্কের একটি জাহাজ কোম্পানি ইতোমধ্যেই জ্বালানি ব্যবহার ও গতিবেগ কমিয়ে আনার মাধ্যমে কার্বন নির্গমনের হার ৩০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক জাহাজ হালকা অ্যালুমিনিয়ামের বদলে ভারী স্টিলের তৈরি। তাছাড়া, সেগুলোতে কাঠামোর ঘর্ষণ কমানোর বিশেষ কোটিং-এর মতো বিভিন্ন অ্যানার্জি-সেভিং প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় না।

এদিকে সর্বোচ্চ গতির চেয়ে একটু ধীরে জাহাজ চলাচলে ড্র্যাগ ও ফ্রিকশন কম উৎপন্ন হয়, ফলে কার্বন নির্গমন কমে। তাছাড়া অপেক্ষাকৃত সরু ডিজাইনের কাঠামোও একই কারণে কম কার্বন নির্গমন ঘটায়। ২০১৩ সালে পরিলক্ষিত এসব পরিমাপের বেশ কিছু বর্তমান প্রচলিত জাহাজে যোগ করা হবে ২০৩০ সাল নাগাদ।  

কার্বন নির্গমন ঠেকানোর আরেকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে নতুন নির্মিত কার্গো জাহাজগুলোতে। জাপানি প্রতিষ্ঠান ইকো মেরিন পাওয়ার এবং দ্য অ্যাকুয়ারিয়াস ইকোশিপ সারি সারি পাল ও সোলার প্যানেল যুক্ত একটি কার্গো জাহাজ নির্মাণ করেছে। একই পদ্ধতিতে ওয়েল ট্যাংকার, ক্রুজ শিপসহ আরও অনেক রকম নৌযান পরিচালিত করা সম্ভব। এতে প্রচলিত জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা শতভাগ ফুরোবে না, তবে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমাবে ৪০ শতাংশ।

জাপানি শিপিং কোম্পানি এনওয়াইকে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি নতুন কন্টেইনার জাহাজের ডিজাইন নিয়ে কাজ করছে যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে হাইড্রোজেন এবং একইসঙ্গে চার হাজার বর্গ মিটারের পাল দিয়ে ব্যবহার করবে বায়ুশক্তি। এ পদ্ধতিতে কার্বন নির্গমন প্রতিরোধ করা যাবে ৭০ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যেই প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী নির্মিত হবে জাহাজটি।  

এদিকে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান শিপিং লাইন ওয়ালিনিয়াস উইলহেল্মসেন প্রায় ১০ হাজার গাড়ি পরিবহনযোগ্য একটি হালকা কার্গো জাহাজের নকশা প্রস্তাব করেছে। জাহাজটি চলবে ইলেক্ট্রিসিটির মাধ্যমে, যার অর্ধেক আসবে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও স্রোতশক্তিকে কাজে লাগিয়ে, বাকি অর্ধেক আসবে হাইড্রোজেন শক্তিকে রূপান্তরিত করে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি ২০২৫ সালের মধ্যেই ভাসবে তাদের জাহাজটি।

সুতরাং, কার্বন নির্গমন প্রতিরোধের আরেকটা কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে প্রচলিত পেট্রোলিয়ামভিত্তিক জ্বালানিগুলোকে নিষিদ্ধ করা। এর বদলে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) হিসেবে হাইড্রোজেন শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশ্বে ইতোমধ্যেই শতাধিক এলএনজি চালিত জাহাজ চলাচল করছে। বিশ্বের প্রথম এলএনজি গ্যাস চালিত জাহাজ ‘ভাইকিংস গ্রেস’, আর তা চলাচল করে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের মধ্যে।

বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৮
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।