ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

২০১৯ সালে বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ২০ শতাংশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
২০১৯ সালে বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ২০ শতাংশ বক্তব্য রাখছেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (কেপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাংলাদেশে বায়ু দূষণের পরিমাণ গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (কেপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবীণ ও শিশুদের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব রোধে করণীয় শীর্ষক নাগরিক সংলাপে তিনি এ কথা জানান। সংলাপের আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, কেপসের এক গবেষণায় দেখা যায়, গত ১৩ মাসে (নভেম্বর ২০১৮ থেকে নভেম্বর ২০১৯) ঢাকার মানুষ মাত্র দুই শতাংশ (নয় দিন) সময় ভালো বায়ু গ্রহণ করেছে, ৪৮ শতাংশ (১৮৮ দিন) মধ্যম থেকে সতর্কতামূলক দূষিত বায়ু গ্রহণ করেছে, ২৮ শতাংশ (১০৭ দিন) অস্বাস্থ্যকর বায়ু, ২১ শতাংশ (৮২ দিন) খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু এবং এক শতাংশ (৫দিন) মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর বায়ু গ্রহণ করেছে। ২০১৯ সালে বায়ুদূষণে পরিমাণ ২০১৮ সাল থেকে গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি বলেন, এসব দূষণের কারণে মানুষ ফুসফুসের ক্যানসার, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, কিডনির রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, জন্মগত ত্রুটি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব, হার্ট অ্যাটাক, যকৃৎ সমস্যা, গর্ভবতী মায়েদের ওপর প্রভাব, চর্মরোগ ও নিউমোনিয়ার মতো নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।  

কেপসের পরিচালক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এর মতে বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যায়। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে ৪৬ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু ঢাকায় ১০ হাজার মানুষ বায়ু দূষণের কারণে মারা যায়। ইউনিসেফের এক গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বের ৩০ কোটি শিশু দূষিত বায়ু বেষ্টিত এলাকায় বাস করে। যার মধ্যে ২২ কোটি দক্ষিণ এশিয়ায়। বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর পাঁচ বছর বয়সী ছয় লাখ শিশু মারা যায়। শিশু ও বৃদ্ধরা বায়ু দূষণের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ জীবন দশার এ সময়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে তারা অল্পতেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অপরদিকে ছোট বাচ্চাদের ফুসফুস বড়দের মতো পরিণত না হওয়ার ফলে বায়ু দূষণের প্রভাব তাদের ওপর বেশি পড়ে। বাচ্চাদের নাকের ভেতরের লোম থাকে না ফলে অতি সহজেই তাদের শ্বাসনালীতে ধুলাবালি পৌঁছে যায়।

তিনি বলেন, এ বায়ুদূষণ রোধে আমাদের কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। সবার আগে দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ঢাকার আশপাশের ইটের ভাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আগুনে পোড়ানোর সিমেন্টের ইট এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। সপ্তাহের ভিন্ন দিনে জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলার ব্যবস্থা করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে। সেবা দেওয়া সংস্থার সংস্কার কাজে সমন্বয় এনে স্বল্পসময়ে সংস্কার শেষ করতে হবে। নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা যাবে না, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত করতে হবে। যাতে যেখানে-সেখানে নগর বর্জ্য উন্মুক্তভাবে পোড়ানো না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, প্রচলিত আইনকে যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুফল প্রয়োগ ও সর্বোপরি জনগণকে বায়ুদূষণ সামগ্রিক বিষয়ে তথ্য দেওয়া, শিক্ষিতকরণে উদ্বুদ্ধকরণ করে বায়ু দূষণ রোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
এসএমএকে/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।