ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

টানা বৃষ্টিতে ফুলে ফেঁপে উঠছে কীর্তিনাশা পদ্মা

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
টানা বৃষ্টিতে ফুলে ফেঁপে উঠছে কীর্তিনাশা পদ্মা

রাজশাহী: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজশাহীতে প্রায় দিনই বৃষ্টি হচ্ছে। টানা এই বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে রাজশাহীর মরা পদ্মায়। ঢেউয়ের ঘনত্বে এরই মধ্যে ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে পদ্মা। ধীরে ধীরে চর ঢাকতে শুরু করেছে পদ্মার পানি। স্রোতের তোড় আবারও আছড়ে পড়ছে নদীর কিনারায়। স্ফীত হয়ে উঠছে কীর্তিনাশা পদ্মা। 

এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ক’দিন পরেই যৌবনা হয়ে উঠবে স্রোতস্বিনী পদ্মা। আর এই পানি বাড়ার সিলসিলা চলবে অক্টোবর পর্যন্ত।

 বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করবে পদ্মা। যদিও গতবছর সেপ্টেম্বরের পর আর পদ্মায় পানি বাড়েনি। ফি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা মাপা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৫১ মিটার। এরপর আর পানি বাড়েনি। এতে রক্ষা পায় ঝুঁকিতে থাকা রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ।  

জানতে চাইলে রাজশাহী আবহওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী আনোয়ারা খাতুন শুক্রবার (১৯ জুন) দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে গত ছয়দিনে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমের বলা যায় এটাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর মধ্যে গত ১৩ জুন ২২ মিলিমিটার, ১৪ জুন ১৫ মিলিমিটার, ১৭ জুন ২ মিলিমিটার, ১৮ জুন ৫৬ মিলিমিটার ও ১৯ জুন ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ু বিস্তৃত হয়েছে। তাই বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত চলবে।

..এছাড়া দেশের এক বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বর্ষার শুরুতে বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে আগামী দশ দিন নদ-নদীর পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে পদ্মায় তেমন প্রভাব না পড়লেও ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি সমতল থেকে বাড়তে পারে। এই সময় কোনো কোনো জায়গায় পানি সমতল থেকে বেড়ে বিপৎসীমার এক মিটারের মধ্যে আসতে পারে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর অববাহিকায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে, জুন মাসের শুরু থেকেই পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডে গেজ রিডার এনামুল হক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১ জুন থেকে পানি বাড়ছে। কোনো কোনো দিন আবার কমছেও। তবে মূলত ১৬ জুনের পর আর কমেনি; কেবলই বাড়ছে। মে-জুন মাসে প্রতিবছরই এমন হয়।

এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে পানি উন্নয়নে বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বলেন- গত ১ জুন রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা মাপা হয়েছিল- ১১ মিটার। এরপর ৩ জুন ছিল ১০ দশমিক ৯৮ মিটার, ৭ জুন ১১ দশমিক ৩৬ মিটার, ৯ জুন ১১ দশমিক ২২ মিটার, ১২ জুন ১০ দশমিক ৯৬ মিটার, ১৩ জুন ১১ দশমিক ৩ মিটার, ১৪ জুন ১১ দশমিক ৪ মিটার, ১৫ জুন ১১ দশমিক ৬ মিটার, ১৬ জুন ১১ দশমিক ২২ মিটার, ১৭ জুন ১১ দশমিক ৩৪ মিটার, ১৮ জুন ১১ দশমিক ৪৮ মিটার এবং আজ ১৯ জুন বেলা ১২টায় সবশেষ পদ্মার পানির উচ্চতা মাপা হয় ১১ দশমিক ৭১ মিটার।

রাজশাহী পয়েন্ট পদ্মার বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। অর্থাৎ রাজশাহীতে বর্তমানে বিপৎসীমার ৬ দশমিক ৭৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা।     

অতীতের পরিসংখ্যান টেনে পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, পানি বাড়া নিয়ে উৎকণ্ঠার কিছু নেই। গেল ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা (১৮.৫০) অতিক্রম করেছে মাত্র দু’বার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার।  

এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। এর পর আর এই রেকর্ড ভাঙেনি বলেও উল্লেখ করেন রাজাশাহী পাউবোর এই গেজ রিডার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।