ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২০
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি

জামালপুর: জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে জামালপুর বাহাদুরবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকায় ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান জানান, রোববার সকালে পানি ১৯.৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে স্বাভাবিক পানির স্তর হচ্ছে ১৯.৫০।

এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে পুর্বাভাস দিয়েছে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ।  

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পানি দ্রুত বেড়েই চলেছে। এতে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ির নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে।

পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলের ফসলের ক্ষেত, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা সদরের কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।

বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মেলান্দহের মাহমুদপুর থেকে ইসলামপুরের উলিয়া সড়ক যোগাযোগ। পানির তীব্র স্রোতে দেওয়ানগঞ্জের মণ্ডল বাজার এলাকায় সড়ক ভেঙে পড়ায় দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউপির দক্ষিণ চিনাডুলি, দেওয়ানপাড়া, ডেবরাইপ্যাচ, বলিয়াদহ, পশ্চিম বামনা, বেলগাছা ইউপির কছিমার চর, দেলীপাড়, গুঠাইল, সাপধরী ইউপির আকন্দপাড়া, পূর্ব  চেঙ্গানিয়ারসহ নদীপাড়ের আরো বেশকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও পার্থশী, নোয়ারপাড়া ও পলবান্দা ইউপির লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে।

বন্যাকবলিত এলাকা।  ছবি: বাংলানিউজপানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউপির মদনের চর, বিলেরপাড়, ডেরুরুবিল, চর গাজীরপাড়া, উত্তর আচ্চাকান্দি, কতুবেরচর, বাংগালপাড়া, নয়াবাড়ি, চরকামালেরবার্ত্তী, চর আইরমারী গ্রাম, মেরুরচর ইউপির মাইছানিরচর, ভাটি কলকিহারা, উজান কলকিহারা, পূর্ব কলকিহারা, চিনারচর, বাঘাডুবি, খেওয়ারচর, ঘুঘুরাকান্দি, ফকিরপাড়া, নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর, সাজিমারা, নয়াপাড়া, পাগলাপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া সরিষাবাড়ির আওনা, কুলপালচর, কুমারপাড়া, নলসন্ধ্যা, মিরকুটিয়া, কাজলগাঁও, দমোদরপুর, চর পোগলদিঘা, কালিপুর, শ্যামপুর, মালিপাড়া, বিন্নাফৈর, টাকুরিয়া, মানিক পোটল, গোবিন্দ পোটল, চর সরিষাবাড়ি, চর নান্দিনা, আদ্রা, ছাতারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।  

ইসলামপুরের সাপধরী ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, এই ইউনিয়নের নতুন চরাঞ্চলে আষাঢ় মাসেই বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে সাপধরীর প্রজাপতি, চরশিশুয়া, চরনন্দনের পাড়া, আমতলি, কাশারীডোবা, কটাপুর, ইন্দুল্যামারী, আকন্দপাড়া, কোদাল ধোয়া, মণ্ডলপাড়া, বিশরশি ও চেঙ্গানিয়ায় অসংখ্য কৃষকের পাট ও আউশ ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব চরাঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার বাড়িঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যেই বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

ইসলামপুরের বেলগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, এ বছরের আগাম বন্যায় যমুনার বুকে জেগে ওঠা খোলাবাড়ী, জিগাতলা, বরুল, মন্নিয়া ও বেলগাছায় কৃষকের পাট ও ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

ইসলামপুর ইউএনও মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া ও আগাম বন্যার বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সবাইকে নিয়ে বন্যা মোকাবিলায় কাজ করা হবে। এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, নদী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। যমুনায় খুব দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে। সেই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদীর পানিও বাড়ছে। বন্যা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।    

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।