ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

প্রজন্মকে পরিবেশমনষ্ক করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাব গঠনের পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২১
প্রজন্মকে পরিবেশমনষ্ক করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাব গঠনের পরামর্শ

ঢাকা: নতুন প্রজন্মকে পরিবেশমনষ্ক করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশ ক্লাব গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

তারা মনে করছেন, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মকে যত বেশি যুক্ত করা যাবে আন্দোলন ততই শক্তিশালী হবে।



শনিবার (৫ জুন) ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২১ উপলক্ষে জুম প্লাটফর্মে পরিবেশকর্মী ও তরুণদের অংশগ্রহণে ‘তরুণ প্রজন্মের হাতেই প্রকৃতি ও পরিবেশের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা এবং পদক্ষেপকে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। এবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন’ (বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার), আর স্লোগান-‘প্রকৃতি সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি। ’

পবার সম্পাদক ও গ্রিন ফোর্স সমন্বয়ক মেসবাহ সুমনের সঞ্চালনা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, ও পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাসসের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রকৃতির ওপর নানা ধরনের অত্যাচার, অনাচার হওয়ার ফলে নানা ক্ষতিকারক ভাইরাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে বিপর্যয় ডেকে আনছে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তরুণদের সচেষ্ট হতে হবে। সম্পদ আহরণের লোভে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে সচেষ্ট হতে হবে। শিক্ষা সচেতনতার সঙ্গে আমাদের পরিবেশ সচেতনতার শিক্ষাও দরকার। বর্ণ পরিচয়ের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ পরিচয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, আমরা সময় ফিরিয়ে দিতে পারি না। আমরা গাছপালা লাগাতে পারি, আমাদের শহরগুলো সবুজ করতে পারি, আমাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন করতে পারি এবং নদী ও উপকূল পরিষ্কার করতে পারি। জীবন ও জীবিকার জন্য প্রকৃতি ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় আমাদের প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ এবং সর্বস্তরের জনগণের বিশেষ করে যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ।

বিজিএমইএর হেড অব সাসটেইনেবিলিটি (জয়েন্ট সেক্রেটারি) মনোয়ার হোসেন বলেন, তরুণ উদ্যোগক্তারা পরিবেশবান্ধব। দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা এখন পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে আগ্রহী। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ড তাদের সোর্সিং তালিকায় পরিবেশবান্ধব কারখানা রাখতে চায়। বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি সংখ্যক পরিবেশবান্ধব (গ্রিন ফ্যাক্টরি) পোশাক কারখানা রয়েছে।

আলোচনায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবেশ বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ তরুণ প্রজন্মকে নিতে হবে। পরিবেশগত শিক্ষাতেই রয়েছে পরিবেশগত সমস্যার সমাধান। সব আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে পরিবেশ শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে তার মাত্রা বুঝতে পারলে মোকাবিলা করার রাস্তা তৈরি সম্ভব হবে। সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।

প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার ও প্রকৃতি সংরক্ষণে পবার পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে।

পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগের সঙ্গে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে হবে। শিশু-কিশোর-তরুণদের পরিবেশ মনষ্ক করতে ও পরিবেশ শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশ ক্লাব গঠন করার উদ্যোগ নিতে হবে।

ইকোসিস্টেমকে জানতে বুঝতে ও পুনরুদ্ধার করতে কিশোর-তরুণদের মধ্যে পরিবেশ ও প্রকৃতি বিষয়ে আরও বোঝাপড়া, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জ্ঞানের প্রয়োজন। কিশোর-তরুণদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সহজবোধ্য ভাষায় ও সহজে ব্যবহারযোগ্য অনলাইন কোর্স চালু করতে পারে।

বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য, পরিবেশগত দক্ষতা এবং জ্ঞানের বিকাশকে অনুপ্রাণিত করতে তরুণ প্রজন্মকে ‘ইকোপ্রেনার’ হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

অর্থনৈতিক লাভের পাশাপাশি আমাদের ইকোসিস্টেমের মূল্য সম্পর্কে জানতে হবে। রেসপন্সিবল ট্যুরিজম অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটকদের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ নিয়মাবলী তৈরি করে প্রচারে ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার জন্য প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কোয়ালিটি ট্যুরিজমের কৌশল গ্রহণ করতে হবে।  

‘জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮’ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষ কেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারা নিশ্চিত করতে কবে।

নগর পরিকল্পনায় প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিবেশগত বিপর্যয় এড়াতে দেশের স্থানীয় পর্যায়ের সব উন্নয়নকে পরিকল্পনার মধ্যে আনতে হবে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পবার সম্পাদক ব্যারিষ্টার নিশাত মাহমুদ, গ্রিন ফোর্স সদস্য ফারজানা ইয়াসমীন পপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের সভাপতি আবু সাদাত মো. সায়েম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২১
এমআইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।