ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

আগামী সপ্তাহ থেকে আগারগাঁও ‘নীরব এলাকা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২১
আগামী সপ্তাহ থেকে আগারগাঁও ‘নীরব এলাকা’

ঢাকা: শব্দদূষণ রোধে আগামী সপ্তাহ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আগারগাঁও এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফউদ্দিন। এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্য এলাকায় একই কার্যক্রম পরিচালিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

বুধবার (৯ জুন) পরিবেশ অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের/গণমাধ্যমকর্মীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

মহাপরিচালক বলেন, হাইড্রলিক হর্নের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, পাঠ্যপুস্তকে শব্দদূষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা, আইনের কঠোর প্রয়োগ, শিল্প-কারখানায় সহায়ক উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে আমরা সচেষ্ট থাকবো।  

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নানাবিধ দূষণে জর্জরিত। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূষণ ইত্যাদি বর্তমানে তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। নগর জীবনে শব্দদূষণ দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, শব্দের মাত্রা ৫৫ ডেসিবেলের বেশি হলেই তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শ্রবণক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও শব্দদূষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। এজন্য প্রয়োজন এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া। এক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য।  

প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর (যুগ্ম সচিব)। তিনি বলেন, শব্দদূষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২০-২০২২ মেয়াদে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ, বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ, যৌতুক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সংবাদকর্মীরা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরকে সহায়তা করে যাচ্ছেন। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণেও আমরা তাদের পাশে পাবো বলে বিশ্বাস করি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা। তিনি বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন কার্যক্রম নিতে পারেন, যেমন- সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, গবেষণানির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ, শব্দের উৎস ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ, নিয়মিত শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যবিধি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ, শব্দদূষণের ক্ষতির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশ, ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ, টিভি চ্যানেলগুলোতে স্ক্রল ও টিভিসি প্রচার, দিবসভিত্তিক প্রচারণা ইত্যাদি। এছাড়াও সাধারণ জনগণের মতামত প্রচারের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তারা পরামর্শ দিতে পারেন।

আয়োজনে অপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আয়োজনের বিশেষ অতিথি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান প্রফেসর শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞান যত এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের জীবন সহজ হয়ে উঠছে। শব্দদূষণ শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলে। শ্রবণক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্লান্তি, অবসাদ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। শব্দদূষণে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপরও মারাত্মক প্রভাব পড়ে।  

প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, যানবাহনজনিত শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক আইন খুব কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। শব্দদূষণের উৎস যেমন কলকারখানা বা নির্মাণকাজে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যেও সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা  আসবে।

আয়োজনের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন বলেন, শব্দদূষণের ভয়াবহতার ফলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।  

প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রধান অতিথি তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার বলেন, যেকোনো ক্যাম্পেইন সফল করতে হলে পরিকল্পনা ও অর্থের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারদের সম্পৃক্ত ও সচেতন করা জরুরি। এক্ষেত্রে মিডিয়া কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে শুধু তথ্য দেওয়া বা ক্যাম্পেইন করাই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি এর ফলাফল নিশ্চিত করাও জরুরি।  

আয়োজনে গণমাধ্যমকর্মীরা বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন, যেমন- বিধিমালা সংশোধন, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, হাইড্রলিক হর্নের আমদানি বন্ধ, সরকারি গাড়িতে হাইড্রলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধ, নীরব এলাকা ঘোষণার পাশাপাশি বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে শব্দদূষণের বিষয়টি যুক্ত করা, জনসচেতনতা বাড়ানো, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২১
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।