ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

পৌষের শীতেই জবুথবু রাজশাহীর মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২২
পৌষের শীতেই জবুথবু রাজশাহীর মানুষ

রাজশাহী: রাজশাহীতে বয়ে চলেছে মৌসুমের দ্বিতীয় শৈত্যপ্রবাহ। পৌষের শেষে এসে ঘন কুয়াশায় প্রায় পুরোদিনই মুড়ে থাকছে পদ্মাপাড়ের এ শহর।

দিনভর উত্তরে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে পথে-প্রান্তরে থাকা ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষগুলোকে। খোলা জায়গায় থাকা এ মানুষগুলো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছেন। একটু উষ্ণতার খোঁজে পথের পামে খড়কুটো কুড়িয়ে আগুন জ্বেলে ঘিরে বসে থাকছেন।  

শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় করছেন পুরনো শীতবস্ত্রের মার্কেটে। আর সামর্থ্যবানরা দৌড়াচ্ছেন অভিজাত মার্কেট ও শপিংমলে। হালে তাই শীতবস্ত্রের কেনাবেচা জমজমাট হয়ে উঠেছে।  

এছাড়া সমাজের দুস্থ মানুষজন একটি কম্বলের জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণের লম্বা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এরইমধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন বস্তি এলাকায় এসব শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।  

এরপরও একটি বড় অংশ শীতবস্ত্রের বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। এ শীতে তারা নিদারুণ কষ্টে দিনরাত পার করছেন। ফলে জীবনযাত্রায় অচলবস্তা কাটছে না। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও কর্মজীবী মানুষগুলো সবচয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শীতের কারণে কাজ কমে গেছে। তাই অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।  

এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছিল রাজশাহী। এ সময় দৃষ্টিসীমা নেমে আসায় রাজশাহীর সড়ক-মহাসড়কের যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সকাল ১০টার দিকে সূর্যের মুখ দেখা গেছে। পরে ধীরে ধীরে কুয়াশা কেটে গেছে। কিন্তু বিকেলে সূর্য পশ্চিমে ঢলতেই আবারও ঘন কুয়াশায় মুড়ে আসছে প্রকৃতি। এতে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও গুটিশুটি হয়ে পড়েছে। শীতে হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।  

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান,   শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে নবজাতক শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বয়সের শিশু ও বয়স্করাও শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসছেন। আক্রান্তদের অনেকেই কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলেও জানান এ চিকিৎসক।  

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক এএসএম গাউস-উজ-জামান বাংলানিউজকে জানান, বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ মঙ্গলবারের চেয়ে ১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়লেও শীত কমেনি।  

জানতে চাইলে গাউস-উজ-জামান বলেন, তাপমাত্রা সাধারণত ১০ থেকে ৮ ডিগ্রির নিচে নামলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর ৮ থেকে ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ও ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই অনুযায়ী রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বুধবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।  

এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া অফিস বলছে, এটিই ছিল এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। অর্থাৎ সামান্য বিরতি দিয়ে রাজশাহীর ওপর দিয়ে আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।  

দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া এ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আরও ২-৩ দিন স্থায়ী হতে পারে। এ সময় মৃদু শৈত্যপ্রবাহটি মাঝারি থেকে আরও তীব্র হতে পারে। প্রথমে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থেকে তাপমাত্রা আরও কমে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হতে পারে। তখন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।  

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর আগে গত ৩ জানুয়ারি রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২ জানুয়ারি ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১ জানুয়ারি ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩১ ডিসেম্বর ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৩০ ডিসেম্বর ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মূলত ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকেই তাপমাত্রা আবারও ক্রমাগতভাবে কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২২
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।