ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিপৎসীমার ওপরে বাগেরহাটের নদ-নদীর পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
বিপৎসীমার ওপরে বাগেরহাটের নদ-নদীর পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বাগেরহাট: বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারে বাগেরহাটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। রোববার (১৪ আগস্ট) দুপুরের জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পায়।

ফলে জেলার কচুয়া, বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা ও শরণখোলা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

শুধু নিম্নাঞ্চল নয়, বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী সড়ক, রাহাতের মোড়, বাসাবাটি, মুনিগঞ্জ, মেইনরোড, প্রধান ডাকঘর সড়কসহ মোরেলগঞ্জ ও মোংলা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে এসব এলাকার জনজীবন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব ও নদী-খাল দিয়ে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টিতে আমন ধানের উপকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

অন্যদিকে লঘু চাপের প্রভাবে মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অফিস। বৈরি আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া ফিশিং ট্রলারগুলো নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। গত ৫দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার গাওখালী গ্রামের গৃহিণী স্বর্ণা ঋতু বৈরাগী বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানিতে রান্নার চুলাসহ সব তলিয়ে গেছে। ফলে রান্না-খাওয়া বন্ধ রয়েছে।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের ওসমান শেখ বলেন, জোয়ারের পানিতে বাড়ি-ঘর যেমন ডুবে গেছে, তেমনি বাড়ির সামনের মাটির রাস্তাও কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। খুব বিপদে রয়েছি আমরা। ঘরে পানি, বের হতে পারছি না। আর কাদার জন্য রাস্তায়ও যেতে পারছি না।

বাগেরহাট শহরের রিকশা চালক শাহিন হওলাদার বলেন, সবকিছুর যা দাম আমাগো মতো মানুষের আর বাঁচার উপায় নেই। তারপর অবিরাম বৃষ্টিতে ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আয় করতে না পারলে আমরা খাব কী?

মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার লাভলু শেখ বলেন, পানগুছি নদীর পানি স্বাভাবিকর চেয়ে কমপক্ষে ৪ ফুট বেড়েছে। জোয়ারের পানিতে উপজেলা সদর, মোরেলগঞ্জ বাজারসহ নদীর তীরবর্তী বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পৌর শহরে বাস করেও যদি পানিতে ভাসতে হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব?

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, গত কয়েক দিন ধরে জেয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় তিন-চার ফুট বাড়ছে। প্রজনন কেন্দ্রের রাস্তাসহ সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকা দিনে দুইবার প্লাবিত হচ্ছে। তবে কোনো প্রাণীর ক্ষতি হয়নি।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমরেশ চন্দ্র ঢালী বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটসহ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোয় বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বেড়েছে। পূর্ণিমা এবং বায়ুচাপের তারতম্য বেশি হওয়ায় নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উঁচু জোয়ার হচ্ছে। নিম্নচাপের কারণে মোংলাসহ দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে তিন নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে বাগেরহাটের নদ-নদীর পানি। ফলে জেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে জেলায় পাউবোর বাঁধ স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো বাঁধ ঝুঁকিতে নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমনের ক্ষেতের দারুণ উপকার হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বৃষ্টিতে আমন চাষিরা উপকৃত হবেন।

বাংলাদেশ  সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।