রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী থেকে: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এলাকার খাল এবং নালাগুলো থেকে মিঠাপানি সরিয়ে লবণপানি তোলা হয়েছে।
লবণ পানির প্রভাবে এলাকার কৃষিক্ষেতের তরমুজ, মরিচ, বিভিন্ন ধরনের ডাল, আলু গাছসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চাষিরা।
এ চিত্র পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ১০ গ্রামের। এ কারণে চাষিরা রবি মৌসুমের ফসল নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
চাষিরা বলছেন, এখনই লবণপানি ওঠানো বন্ধ করা না হলে ওই এলাকার প্রায় অর্ধকোটি টাকার রবিশস্য নষ্ট হয়ে যাবে। লোকসান গুণতে হবে চাষিদের। মার খাবে পরের ফসলও।
সূত্র বলছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতা বাগদাচিংড়ি চাষ করার জন্য তাদের লোকজন দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের সাতটি স্লুইসগেট খুলে খাল এবং নালাগুলোর মিঠাপানি সরিয়ে তাতে লবণপানি তুলছেন।
এ নিয়ে স্থানীয় হাট-বাজারে কয়েক দফা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। কিন্তু, তাতে কোনো সুরাহা হয়নি। সরেনি খালের লবণপানি।
স্থানীয় চাষি ও একাধিক ইউপি সদস্য জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল ইসলাম লিটু এবং বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওমর ফারুক তাদের লোকজন দিয়ে বাগদাচিংড়ির ঘেরের জন্য এলাকার খাল এবং নালাগুলোতে লবণপানি ওঠাচ্ছেন।
রাতের আঁধারে ইউনিয়নের চরগঙ্গা, চরহালিম, তুলাতুলী, চরবোগলা, নিজকাটা, ছাতিয়ান পাড়া ও টুঙ্গিবাড়িয়ায় অবস্থিত সাতটি স্লুইসগেট খুলে নালা এবং খালগুলো থেকে মিঠাপানি সরিয়ে দেওয়া হয়।
একইভাবে ওই সাতটি স্লুইসগেট দিয়ে নদী থেকে লবণপানি তুলে খাল এবং নালাগুলো ভরে ফেলা হয়।
ইউনিয়নের (ইউপি) তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি লোকজন নিয়ে চেষ্টা করছেন নালা ও খাল থেকে লবণপানি সরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে চিংড়ি চাষিদের লোকজন আবার লবণপানি তুলে দিচ্ছে।
ছাতিয়ানপাড়া গ্রামের তরমুজচাষি মো. হানিফ হাওলাদার জানান, তিনি এ বছর ১২ একর জামিতে তরমুজের চাষ করেছেন।
কিন্তু, এলাকায় লবণপানি ওঠানোর কারণে তার ক্ষেতের সব তরমুজগাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
তক্তাবুনিয়া গ্রামের চাষি মোহাম্মাদ আলম জানান, তার ক্ষেতে যথেষ্ট পরিমাণে প্লেইনডাল, মরিচগাছসহ অন্যান্য রবিশস্যের গাছ রয়েছে। লবণপানি পেলে এগুলো সব নষ্ট হয়ে যাবে।
তিনি জানান, ওই সাতটি স্লুইসগেট দিয়ে যে লবণপানি তোলা হয়েছে, তাতে তক্তাবুনিয়া, গাববুনিয়া, সামচাঁদ, গাইয়াপাড়া, তুলাতলী, চরগঙ্গা, চরহালিম, চরবোগলা, নিজকাটা, ছাতিয়ানপাড়া, টুঙ্গিবাড়িয়া ও মধুখালী গ্রামে পঞ্চাশ লাখ টাকার রবি ফসলের ক্ষতি হবে।
গাববুনিয়া গ্রামের চাষি মো. আলমগীর হোসেন জানান, তিনি অন্যের জমি রেখে এ বছর চরগঙ্গায় তরমুজের চাষ করছেন। এলাকার খালগুলোতে লবণপানি তোলায় সব তরমুজচাষি হুমকির মুখে পড়েছেন।
তিনি জানান, সম্প্রতি চরগঙ্গা বাজারে লবণপানি তোলার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন চাষিরা। কিন্তু, তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল ইসলাম লিটু বলেন, ‘আমি কোথাও লবণপানি তুলিনি। এলাকায় কয়েকটি কালভার্টের কাজ চলছে। এ জন্য খাল থেকে পানি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কৃষকেরা আন্দোলন করছেন। ’
বড় বাইশদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘শুনেছি চরগঙ্গার স্লুইসগেট থেকে লবণপানি উঠেছে। তবে আমার এলাকায় কোনো লবণপানি ওঠানো হয়নি। এ ব্যাপারে আমি আর কিছু জানি না। ’
জানতে চাইলে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জয়নুল আবেদীন জানান, বড়বাইশদিয়ার বিভিন্ন গ্রামের খালে লবণপানি ওঠানোর অভিযোগ তিনি মৌখিকভাবে শুনেছেন। তবে কেউ যদি তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪