[কখনো জেলে, কখনো কৃষক, কখনোবা কঠোর পরিশ্রমী দিনমজুর। দারিদ্রের যাতাকলে নিষ্পেষিত জীবন।
উপকূলের প্রান্তিক জনপদ ঘুরে: ছেলে-মেয়ে সমান অধিকার! কিন্তু এই ‘সমান অধিকার’ ম্লান বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। জন্ম থেকেই বঞ্চনা নিয়ে বেড়ে ওঠে এখানকার কন্যা শিশু।
গরিব বাবা-মায়ের পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাকে ‘অভিশাপ’ হিসেবে দেখা হয় উপকূলের বিভিন্ন চরাঞ্চলে। আর তাই জন্মের পর থেকেই তাকে হতে হয় বৈষম্যের শিকার। অধিকাংশ কন্যা শিশুকে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে দেওয়া হয় না। বাবা-মা ভাবেন মেয়েদের পেছনে অহেতুক টাকা খরচ করে লাভ নেই!
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই কন্যা শিশুরা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয় না। খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছেদ এমন কি সামাজিক মর্যাদায় তারা অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে। চরাঞ্চলে এ হার সবচেয়ে বেশি। শিশু সুরক্ষার জন্য শিশু নীতিমালা, শিশু অধিকার আইন থাকলেও তা উপকূলের কন্যা শিশুদের জন্য ভিন্ন।
অন্যের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে বেলি আক্তার (১০)। অন্যদিকে বেলির ছোট ভাই চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা।
বেলি আক্তার বাংলানিউজকে বলে, ‘ছোট ভাইকে সব সময় বাপ মায় বেশি ভালোবাসে। খাওয়ানের সময় ভালো ভালো খাওন অর জন্য। অরে নিয়মিত স্কুলে পাডায় আর মুই মায়ের লগে মানের বাসায় কাম(কাজ) করি। ’
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের পলিটিক্যাল ফেলো ও নারী নেত্রী বিথী হাওলাদার পূজা বাংলানিউজকে বলেন, কন্যা শিশু হিসেবে জন্ম নেওয়াটাই এ সমাজে যেন পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের সব স্তরে তাদের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে শিক্ষার হার কম থাকায় সেখানে কন্যা শিশুর প্রতি অবহেলা একটু বেশি।
বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু বাংলানিউজকে বলেন, মূলত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ গবিব হওয়ায় তাদের মধ্যে সচেতনতা কম। তাই কন্যা শিশু অবহেলার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে অগ্রগতি ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে কন্যা শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ ছাড়াও গ্রামের অনগ্রসর বাবা-মাকে বোঝাতে হবে যে, কন্যা শিশুরাও শিক্ষিত হয়ে বড় হলে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করতে সক্ষম। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ইউনিসেফ শিশুদের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়ে পৃথিবীর প্রায় ১৬০টি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ ক্ষেত্রে গ্রামগঞ্জে ও দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ইউনিসেফ নির্মিত কার্টুন ছবি মীনা প্রদর্শন করলে শিশুদের অধিকার রক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সুন্দর জীবন বিকাশে অভিভাবকরা সচেতন হবে। শিশুর সুনিশ্চিত ভবিষ্যত গড়তে ছেলে-মেয়ে উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
পিসি
উপকূল থেকে উপকূল
উপকূলের শিশু-০৬
অবহেলিত কন্যাশিশু
সুমন সিকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।