ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

বেড়িবাঁধের অভাবে ভাঙা গড়ার জীবন

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
বেড়িবাঁধের অভাবে ভাঙা গড়ার জীবন

সোনাগাজী ( ফেনী) থেকে: ফেনী জেলার সাগরবেষ্টিত জনপদকে লোনা পানি ও নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় তৈরি বেড়িবাঁধ। ১৯৬০-৬৫ সালে নির্মিত বেড়িবাঁধটির আওতা না বাড়লেও স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জনসংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ।

সীমানার বাইরেও জন্ম নিয়েছে অনেক গ্রাম। ফলে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা এসব গ্রাম বারবার আক্রান্ত হচ্ছে জ্বলোচ্ছ্বাস আর নদী ভাঙনে।

জানা যায়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও বর্ধিত এই জনসংখ্যার বাসস্থানের চাপ সামলাতে মানুষ একে একে বেড়িবাঁধের বাইরে এসে বসত গড়ে। কিন্তু সাগর উত্তাল হলেই জোয়ারে ভেসে যায় তাদের সে ঘর, স্বপ্ন। প্রতিবছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বারবার নিঃস্ব হয় তারা।

এদিকে প্রাকৃতিক নিয়মে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চর ও গ্রামের আয়তন বেড়ে যাওয়ায় নতুন বাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। সরকারি জমিও পড়ে রয়েছে। তবে শুধু উদ্যোগের অভাবে এসব গ্রাম রক্ষায় নতুন বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে না।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আউটার বেড়ি বাঁধ নির্মাণ হলে হাজার হাজার মানুষ যেমন বাঁচবে তেমনি বাঁচবে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। এখন যেখানে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বছরে মাত্র একবার ফসল (ধান) চাষ করা যায়। বেড়িবাঁধ নির্মিত হলে সেখানে বছরে তিনবার ধান উৎপাদন সম্ভব। যা দিয়ে পুরো বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের খাদ্য চাহিদা পূরণ হতে পারে।

জনপদে বন্যা বা জোয়ারের লোনা পানি প্রবেশ বন্ধ করতে স্লুইস গেটই ভরসা। কিন্তু ষাটের দশকে তৈরি গোটা দশেক স্লুইস গেটেরও এখন করুণ দশা। বন্যা বা জোয়ারে পানি ঢোকা বন্ধ করতে সেসব খুব বেশি কাজে আসছে না। ফলাফল হিসেবে বারবার ফসল হারাচ্ছে কৃষক।
সোনাগাজীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের বাইরে গড়ে উঠেছে সদর ইউনিয়নের চরখোন্দকার গ্রাম, সুজাপুর, চরচান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পূর্ব চরচান্দিয়া, দক্ষিণ চরচান্দিয়া, চর বড়ধলী গ্রাম ও চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ ও আদর্শগ্রাম।

হাজার হাজার মানুষের বসবাসে পূর্ণ এসব গ্রামে আউটার বেড়িবাঁধ না থাকায় জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানি নিত্য দুর্ভোগের অংশ।

সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতেও এসব গ্রামের বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, মৎস্য সম্পদসহ গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
 
সরেজমিনের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, রোয়ানুর জ্বলোচ্ছ্বাসের পানি ওঠার পর সদ্য তৈরি রাস্তাঘাটগুলো ভেঙে পড়েছে। বাড়িঘরগুলোতে এখনো জোয়ার-ভাটার পানি ওঠানামা করছে। স্বাভাবিক জোয়ারেই তলিয়ে যায় কারো কারো ঘরের মেঝে। তখন মুখে খাবার দেওয়ার জন্য চুলা জ্বালানোও কঠিন হয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপকূলের মানুষ ও তাদের সম্পদ বাঁচাতে সোনাগাজীর চর আবদুল্যাহর সঙ্গে মিরসরাই এর ইছাখালীর শিল্পাঞ্চল যুক্ত করে আউটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে এসব এলাকা দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে।

এ বিষয়ে দক্ষিণ চর চান্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন খোকন বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক দশক আগে তৈরি বেড়িবাঁধের বাইরে গড়ে ওঠা গ্রামগুলোকে বাঁচাতে আউটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। না হলে এখানকার মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করা সম্ভব নয়।
 
তিনি বলেন, এখন চাষীরা আল্লাহর ওয়াস্তে বছরে একবার ফসল ফলাচ্ছে। যে কোন সময় তা জোয়ারে বা লোনা পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি বেড়ি বাঁধ নতুন করে নির্মিত হয়, তাহলে কয়েকগুণ ফসলের নিশ্চয়তা মিলবে।

এ বাঁধ নির্মাণে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ লাগবে না জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি খাস জমি পড়ে আছে। কোন সময় সরকার বাঁধ নির্মাণ করতে পারে। এজন্য শুধু পরিকল্পনা চাই। আশা করি সরকার এ বিষয়টির দিকে নজর দেবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
জেপি/জেডএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।