ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

এক টুকরো পথও পাকা নেই, বিধ্বস্ত বাঁধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
এক টুকরো পথও পাকা নেই, বিধ্বস্ত বাঁধ ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাবুরা (শ্যামনগর), সাতক্ষীরা থেকে: আইলায় বিধ্বস্ত এক জনপদ দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা। প্রতি দুতিন বছর অন্তর দ্বীপটিতে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয়।

তবে এরপরও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ওয়াপদা বাঁধটির কোন সংস্কার নেই। ভেতরের কিছু পথে ইটের সিলিং থাকলেও পিচ বা কংক্রিট নেই কোথাও।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল গাবুরায়। বৃষ্টিতে আর পথ চলার উপায় থাকে না এখানকার একমাত্র যান মোটরসাইকেলের। নদী পার হলেও কয়েক কিলোমমিটার পথ হেঁটেই পাড়ি দিতে হয়। কিছু স্থানে হাঁটারও উপায় নেই। কাদা এড়াতে অনেকটুকু পথ ঘুরে যেতে হয়।

সরেজমিন গাবুরা ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াপদা রোড। এখানে কোন অংশে ইটও বিছানো নেই। আর প্রতিনিয়তই ভাঙ্গছে বাঁধটি। সরু হতে হতে কিছু জায়গায় এখন কয়েক ইঞ্চি বাকি রয়েছে। বড় কোন ঝড় বা স্রোত এলেই বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে যাবে দ্বীপে।

ওয়াপদা রোডের ৯টি পয়েন্ট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলো হচ্ছে ৩ নং সোরার ক্লোজার, ৬ নং এর স্লুইচ গেট সংলগ্ন রাস্তা, ৫ নং ওয়ার্ডের নাপিতখালি, পাইস্যামারি, গাঁগড়ামারি, লেবুবুনিয়া, জেলিয়াখালি, বড় গাবুরা, কালিবাড়ির পথ।

ইউনিয়নের খোলসাবুনিয়া থেকে চোদ্দরাশি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বেশ প্রশস্ত এ সড়কের দু'পাশে বিস্তৃত চিংড়ির ঘের। পথের বদলে অনেককে ঘের দিয়েই হাঁটতে হয়।

মোটরসাইকেল চালক হেলাল বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষায় এই দশ কিলোমিটার সড়কই মানুষকে হেঁটে পার হতে হয়।

খাল ঘেঁষে খোলসাবুনিয়া-গাইনবাড়ি সড়কটির প্রায় ১২ কিলোমিটার ইটের সিলিং বসানো হয়েছে। তবে বেশ কিছু জায়গায় পথ ভেঙ্গে ইট খালে পড়েছে। মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আজম টিটো বুধবার সকালে বাংলানিউজকে বলেন, ২৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার ওয়াপদা বাঁধের কোথাও পথ নেই এবং কংক্রিটের বাঁধও নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বারবার বলা হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাঁধ ভেঙ্গে গেলেই তারা সেটি জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ভাঙ্গচুর না করলে পাউবো কথা শোনে না।

ইউনিয়নের অভ্যন্তরের পথ সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু জায়গায় ইটের সিলিং দেয়া রয়েছে। কিন্তু পাকা করার বিষয়ে স্থানীয় সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। এ কারণেই এ ইউনিয়নের মানুষ উন্নয়নের স্রোত থেকে বঞ্চিত।

এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা মফিজউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গাবুরায় পিচ ঢালাই দেয়া সম্ভব নয়। সরু পথগুলোর দু'পাশে লবণাক্ত চিংড়ির ঘের। তাই সেখানে ঢালাইয়ের প্রেসার দিলে পথ ভেঙ্গে যাবে।

এর সমাধান হিসেবে কংক্রিটের পথ বা ঘেরগুলোকে পথ থেকে আরো দূরে সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম নিজেও পাউবো'র প্রতি ক্ষোভের কথা জানান। তিনি বলেন, গাবুরা পাউবো-১ এর অধীনে। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে কোন সমন্বয় করে না। কোন পরামর্শও গ্রহণ করে না।

তিনি জানান, গাবুরার ওয়াপদা বাঁধটি ৬০ এর দশকের। তখন পানির নিচে ছিল ২০০ ফুট প্রস্থ। সেটি পিরামিড আকারে ওপরে এসে ১৪ ফুট প্রস্থ হয়। তবে মেরামতের অভাবে এখন অনেক স্থানে ১ ফুটও নেই। আর পানির নিচে ১০০ ফুটও নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
এমএন/জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।