ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

অসময়ে বাঙ্গি চাষে হানিফের সাফল্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
অসময়ে বাঙ্গি চাষে হানিফের সাফল্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটার ছোট টেংরা গ্রাম ঘুরে এসে: নিজের কাজ নিজে করে যে সফল হওয়া যায় তা প্রমাণ করে দিলেন প্রান্তিক জনপদের চাষি মো. হানিফ হাওলাদার। অসময়ে বাঙ্গি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজ এলাকায় প্রশংসনীয়ও হয়েছেন হানিফ। বিদ্যালয়ের চৌকাট না ডিঙালেও ৪ সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি।

এ দেশে সাধারণত বাঙ্গি চাষ হয় মাঘ থেকে চৈত্র মাসের মধ্যে। কিন্তু অসময়ে বৈশাখে বাঙ্গি চাষ করেন বরগুনার পাথরঘাটার মো. হানিফ হাওলাদার।

যা আষাঢ় মাসের মধ্যেই পরিপক্ক হয়ে ওঠে। প্রতিদিন তার খেত থেকে বাঙ্গি তুলছেন বস্তা ভরে। ৩ একর জমির মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ জমিতে অসময়ে বাঙ্গি চাষ করে প্রতিবছরই লাভের মুখ দেখছেন।

অসময়ে বাঙ্গি চাষ করে হানিফ এলাকায় তাক লাগিয়ে  দিয়েছেন। অনেকেই তার কাছে অসময়ে বাঙ্গি চাষের পরামর্শ নিতে আসছেন। সময়ের চেয়ে অসময়ে চাষে যেমন বেকারত্ব ঘোচে তেমনি দামও ভালো পাওয়া যায়।

সরেজমিন প্রান্তিক জনপদ ছোট টেংরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল জলভূমি। পানি থৈ-থৈ করে। এ অঞ্চলের মানুষ তরমুজ বা বাঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হলেও, চাষের সঙ্গে মোটেও সম্পৃক্ত নেই। কিন্তু প্রায় ৩ একর জমিতে ছোট টেংরা গ্রামের মো. হানিফ বাঙ্গিসহ বিভিন্ন প্রজাতের কৃষি দিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন। হানিফ এলাকার একজন মডেল কৃষক বলে দাবিও করছেন এখানকার বাসিন্দারা।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকথা হয় স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত সফল কৃষক হানিফের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমে অন্যের জমি চাষাবাদ করতেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা উপার্জন করেছেন, সে টাকা জমিয়ে প্রথমে মাত্র ৩ কাঠা জমি কিনে রবি শস্য চাষ করেন। সেই থেকে আস্তে আস্তে এখন প্রায় ৩ একর জমি ক্রয় করে তাতে চাষ করছেন, বাঙ্গি, আখ, বরবটি, শিম, টমেটো, পুই শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়াসহ শীতকালীন বিভিন্ন প্রজাতের শবজি।

এছাড়া এসব সবজির নিচে রয়েছে ৩টি মৎস্য খামার। যেখানে হানিফ টাকা খরচ করেছেন ৩ লাখ। যা থেকে আয়ের আশা করছেন অন্তত ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা।

হানিফ আরও জানান, অসময়ে বাঙ্গি চাষ করে ইতোমধ্যেই প্রায় ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এখনো যা রয়েছে  তাতে আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন তিনি। ইতোমধ্যেই বরবটি, লাউ, লাউ শাক, লাল শাক, করলা, উস্তা, ঝিংগা, আখসহ বিভিন্ন প্রজাতির শবজি এপর্যন্ত আড়াই লাখ টাকার উপরে বিক্রি করেছেন।

হানিফের দেখাদেখি তার ভাই মো. শাহ আলম, প্রভাষক দুলালসহ কয়েকজনে মাছের ঘের ও কৃষির প্রতি ঝুকেছেন। ইতোমধ্যেই তারা হানিফের মতো কৃষি কাজে অনেকটা এগিয়ে গেছেন।

কৃষক শাহ আলম বলেন, হানিফ এ গ্রামের নয় গোটা পাথরঘাটায় একজন সফল ও মডেল কৃষক। তার কাছ থেকে আমরা প্রায় সময় পরামর্শ নিয়ে থাকি। সহকর্মী ডেইলি স্টারের বরিশালের ফটো সাংবাদিক রহমান আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, পেশার তাগিদে ছবি তুলতে দক্ষিণাঞ্চলের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমি যাইনি। তবে হানিফের মতো কৃষক আমার চোখে পড়েনি। হানিফ একজন মডেল কৃষক বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএ বিষয় পাথরঘাটা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাজইতো কৃষকদের সঙ্গে। তবে হানিফের বিষয়ে সত্যিকার আমি মুগ্ধ। এ রকমের কৃষকই আমরা খুঁজি।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ মো. কামরুল হুদা এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমি এই প্রথম আপনার কাছে শুনেছি। তবে এসব চাষি আমাদের দেশের সম্পদ। তিনি আরও বলেন, হানিফকে সফল চাষি হিসেবে সর্বোচ্চ পর্যায় নেওয়ার চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।