ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

নিঝুম দ্বীপে বিকশিত হচ্ছে ‘কমিউনিটি ট্যুরিজম’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
নিঝুম দ্বীপে বিকশিত হচ্ছে ‘কমিউনিটি ট্যুরিজম’ নিজেদের থাকার ঘরের পাশে পর্যটকদের জন্য ঘর তৈরি করে রেখেছেন স্কুল শিক্ষক জাহিদুর রহমান

নিঝুম দ্বীপ (নোয়াখালী) থেকে ফিরে: নিঝুম দ্বীপ বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমান। স্কুলের পেছনেই তার বাড়ি। নিজেদের থাকার ঘরের পাশে তৈরি করেছেন অতিরিক্ত দু’টো ঘর। সে ঘর দু’টো তিনি পর্যটকদের ভাড়া দেন। প্রতি রুম ভাড়া দিয়ে দিনে আয় করেন ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা।

মৌসুমে প্রায় পুরো মাসই ভাড়া থাকে রুম দু’টো। এছাড়া পর্যটকরা ইচ্ছে করলে টাকা দিয়ে খেতে পারেন তার বাড়িতেই।

স্কুল শিক্ষক জাহিদুরের মতো এমন আরও অনেকেই এগিয়ে এসেছেন নিঝুম দ্বীপের কমিউনিটি ট্যুরিজমকে বিকশিত করতে।   
  
পর্যটন খাতে এগিয়ে থাকা দেশগুলোতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা অনেক আগ থেকেই। এটাকে বলা হয় কমিউনিটি ট্যুরিজম, যেখানে পর্যটকদের আবাসন থেকে শুরু করে আপ্যায়নসহ সব ধরনের সেবা স্থানীয়রাই দেন। নিঝুম দ্বীপে পর্যটনের এমন বিকাশে আনন্দিত পর্যটকরাও। সম্প্রতি দ্বীপের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনটাই জানা গেছে।  

দ্বীপের নামার বাজার এলাকায় কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হাসান শাহরিয়ারের সঙ্গে। পরিবার নিয়ে দ্বীপটিতে ঘুরতে এসেছেন তিনি। তিনি জানান, প্রথমদিন তাকে বিপাকেই পড়তে হয়েছে। দু’ঘণ্টা এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করেও কোনো রিসোর্ট অথবা হোটেল খালি পাননি তিনি। পরে স্থানীয় একজনের কাছে জানতে পারেন কমিউনিটি ট্যুরিজমের বিষয়ে। খবর নিয়ে এলাকার একজনের বাড়িতেই উঠেছেন তিনি। দু’দিন ধরে সে বাড়ির দু’টো ঘরে আছেন। ওই বাড়িতে ব্যবস্থা হয়েছে খাবারেরও। হাসান শাহরিয়ার জানান, এটি একটি চমৎকার ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থাটি বিকশিত হওয়ার প্রয়োজন আছে।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা, নামার বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখন এ বিষয়ে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের সেবা দিয়ে নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

নিঝুম দ্বীপের উন্নয়ন ও কমিউনিটি ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করছে ‘দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা’। সংস্থাটির দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জীবিকায়ন প্রকল্পের কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান জানান, কমিউনিটি ট্যুরিজমের বাণিজ্যিক প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এ ট্যুরিজমের উন্নয়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে সংস্থার সদস্য ও সাধারণ স্থানীয়দের আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।  

এ কর্মকর্তা আরও জানান, কমিউনিটি ট্যুরিজমের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান, স্থানীয়ভাবে পর্যটন পরিবেশ ও পর্যটন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। এর মধ্য দিয়ে টেকসই পর্যটন উন্নয়ন ঘটবে, প্রাকৃতিক, ও ঐতিহ্যগত সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। পর্যটন শিল্পের সেবার মানোন্নয়ন ঘটবে। অপরদিকে আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হবে স্থানীয়রা, যা ইকো ট্যুরিজমকে বহুদূর এগিয়ে নেবে।  

নিঝুম দ্বীপে আগত পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ব্যবস্থায় সম্ভাবনার পাশাপাশি প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি। পর্যটকরা গ্রামের এক বাড়িতে থাকবেন-তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা জরুরি।

অবশ্য এ ব্যাপারে আন্তরিকতার কথা জানিয়েছেন নিঝুম দ্বীপ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আবদুল মোতালেব। তিনি জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশ সব সময় প্রস্তুত। কোনো পর্যটক যদি বিশেষ নিরাপত্তা চান তাহলে তা দিতেও রাজি তারা। এছাড়া দিন-রাতের পুরোটা সময় দ্বীপের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার থাকে।  

কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটনের সঙ্গে। তিনি জানান, নিঝুম দ্বীপের পর্যটন বিকাশে সরকারের রয়েছে নানা পরিকল্পনা। সরকারের এ পরিকল্পনার সঙ্গে সাধারণ জনগোষ্ঠীও যদি কাজ করতে চায় তাহলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা তাদের দেওয়া হবে।  

দ্বীপে আগত কয়েকজন পর্যটক জানান, বিশ্বের অনেক দেশেই কমিউনিটি ট্যুরিজমকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। পর্যটনের সঙ্গে যেসব দেশ স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে, তারাই সফলতার মুখ দেখেছে। টেকসই পর্যটন খাতের বিকাশে কমিউনিটি ট্যুরিজম বিকশিত করা গেলে স্থানীয়রা যেমন উপকৃত হবে, তেমনিভাবে শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের পর্যটন এগিয়ে যাবে অনেক দূর।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
এসএইচডি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।