ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

শরণখোলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৮
শরণখোলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী ভাঙন কবলিত এলাকায় বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে

বাগেরহাট: বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের বিভিন্ন জায়গায় অব্যাহত ভাঙনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে শত শত বিঘা আবাদি জমি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এ জনপদের মানুষ।

সম্প্রতি একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বেড়িবাঁধের আশপাশে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো। এছাড়া ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে কেউ কেউ জীবনের তাগিদে এলাকা ছেড়ে অন্য জনপদে পাড়ি জমিয়েছে।

এদিকে ভাঙন কবলিত এলাকায় বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (সিইআইপি) নামে প্রকল্প। তবে তাদের এ চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধি।

জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে জলোচ্ছ্বাসে ৩৫/১ পোল্ডার ভেঙে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণহানির হয়েছিল সহস্রাধিক। ওই এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি ওঠে। এ দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বাব্যাংকের অর্থায়নে ‘সিইআইপি’ নামে প্রকল্পের আওতায় ৩০০ কাটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ৩৫/১ পোল্ডারে আওতায় ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ ২০১৬ সালে জানুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু এ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নদী শাসন না করার ফলে একাধিক জায়গা ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হতে থাকে। এরপর জোড়াতালি দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী খাঁ বাংলানিউজকে বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে বার বার ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। বাপ দাদার ভিটামাটি বিলীন হয়ে গেছে নদী গর্ভে। এখন অন্যের জায়গায় বসবাস করছি। কিন্তু আতঙ্কে আছি কখন এ জায়গা থেকে চলে যেতে হয়। ’

একই গ্রামের দেলোয়ার বয়াতি বলেন, কয়েক দিনের ভাঙনে কয়েকশ মিটার বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ কখনোই সম্পন্ন হবে না। আগে নদী শাসন করে বেড়িবাঁধ দিতে হবে। কোনো কোনো জায়গা থেকে জোয়ারের পানি উপচে বেড়িবাঁধের ভেতরে ঢুকে পড়ছে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) রিয়াদুল পঞ্চায়েত বাংলানিউজকে বলেন, ‘তাফালবাড়ী, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমাদের বগী, গাবতলা, সাতঘর ও সাউথখালী গ্রামের মানুষ নদী ভাঙনের কারণে আতঙ্কে রয়েছে। বর্তমানে ভাঙনের মাত্রা বাড়ছে, বাড়ছে জোয়ারের পানিও। যেকোনো সময় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়লে এলাকার কৃষি জমি ও  মৎস্য চাষে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার মানুষ এমনিতেই আতঙ্কে থাকে কখন কি হয়ে যায়। তারপর আছে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা। ’

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বলেশ্বর নদীর তীরে হওয়ায় এমনিতেই এ এলাকা প্রাকৃতিকভাবে ঝড় ও জলচ্ছাসের মধ্যে বসবাস করে। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে বলেশ্বর নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। এ বেড়িবাঁধ নির্মাণের আগে নদী শাসন করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নদী শাসন না করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করায় নির্মাণাধীন অবস্থায় বারবার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ’

নতুন নতুন স্থান ভাঙন ও ঝুঁকির কথা স্বীকার করে সিইআইপি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা নদী শাসন করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। প্রস্তাবনা পাস হলে নদী শাসনের কাজ শুরু করা হবে। ’

তবে বর্তমানে যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেসব স্থান জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ  সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।