ঢাকা, শনিবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

‘নগদ আমার ঈদ ফিরায়ে দিছে’

স্টাফ করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
‘নগদ আমার ঈদ ফিরায়ে দিছে’

বিরাট একটা হতাশার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন ঘিওরের দেলোয়ার হোসেন। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকাতে পারছিলেন না এই প্রতিবন্ধী মানুষটি।

কী করে এক প্যাকেট সেমাই অন্তত কিনে আনবেন, বুঝতে পারছিলেন না। হাত খালি হয়ে যাওয়ায় ঈদ নিয়ে তিনি পড়ে যান ভাবনায়।

দেলোয়ার হোসেনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। চান রাতে মোবাইলটা হাতে নিয়েই দেখলেন, তার নগদ অ্যাকাউন্টে চলে এসেছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভাতা। মোবাইল পর্দায় ভেসে আসা সেই ২৫৫০ টাকা তখন দেলোয়ারের কাছে কোটি টাকার মতো। এক পায়ে ভর করে ছুটে গেলেন বাজারে। চার প্যাকেট সেমাই, চিনি, চাল, তেল আর কিছু গোস্ত কিনে নিয়ে ফিরলেন।  

ধরে আসা গলায় দেলোয়ার হোসেন বললেন, ‘এই টাকাটা না পাইলে এবার আর ঈদ করা হইতো না আমার। পোলা-মাইয়ার মুখে তাকাতে পারছিলাম না। নগদ আর সরকার আমার ঈদ ফিরায়ে দিছে। ’ 

কেবল দেলোয়ার নন, এমন কোটি পরিবারের মুখে এই ঈদের আনন্দ এনে দিয়েছে নগদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তর। সারাবছর কয়েক কোটি মানুষকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পৌঁছে দেয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ। তারা সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার ৭৫ শতাংশ বিতরণ করে থাকে।  

সারা দেশে এখন কয়েক কোটি মানুষ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা পাচ্ছেন নগদ- এর মাধ্যমে। চার বছরের যাত্রায় নগদ এখানে এক বিপ্লব করে ফেলেছে। যা বদলে দিয়েছে তাদের সরকারি ভাতার অভিজ্ঞতা। এখন তারা ভাতা পাওয়াটাকে আশীর্বাদ মনে করতে পারছেন।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তিসহ সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা ‘নগদ’ সরাসরি উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার প্রদান এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আর্থিক সহায়তাসহ সব প্রকার অর্থ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে নগদ।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণ শুরু করেন। পরে গত বছর মার্চে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় চুক্তি আবারও নবায়ন করে। চুক্তি অনুসারে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার থেকে ব্যক্তি (জি-টু-পি) পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত মোট ভাতা গ্রহীতার ৭৫ শতাংশকে নগদের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করা হয়।  

সমাজসেবা অধিদপ্তর বিতরণ করে থাকে বিধবা-স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী শিশু ভাতা এবং শিক্ষা উপবৃত্তি। এই ভাতাগুলো যারা পেয়ে থাকেন, তারা স্বভাবতই সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষ। এদেরই একটা বড় অংশ তাদের ভাতা পেলেন ঈদের আগের চার দিনে। এই মানুষগুলোর ঈদটা রঙ্গীন হয়ে গেল এই ভাতার টাকা হাতে পেয়ে।  

এ প্রসঙ্গে নগদ- এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘আমরা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা উপকারভোগীদের কাছে সময়মতো পৌঁছে দিয়ে তাদের ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে পেরে নিজেরাও আনন্দিত। নগদ শুরু থেকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, উপবৃত্তি বিতরণ ও প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার স্বচ্ছভাবে বিতরণ করায় সরকারের প্রথম পছন্দ ডাক বিভাগের নগদ। ’ 

জানা গেছে, ঈদের আগের চার দিনে প্রায় ৮৬১ কোটি টাকা বিতরণ করেছে নগদ। এই ভাতা পৌঁছে গেছে প্রায় কোটি মানুষের হাতে। এই মানুষগুলোর পরিবারে ঈদের আনন্দ এনে দিয়েছে এই ভাতার টাকা। তাদেরই একজন মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর গ্রামের প্রতিবন্ধী দেলোয়ার হোসেন।  

ছয় সদস্যের বড় এক পরিবার দেলোয়ার হোসেনের। সংসারে বাবা-মা আছেন, আছেন স্ত্রী আর দুই ছেলেমেয়ে। এখন সংসারে আয় করার লোক বলতে তিনি একা। একটা পা জন্ম থেকেই নেই। এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে যা আয় করতে পারেন, তাতে সংসার চলে কষ্টে। এর মধ্যে ঈদ কীভাবে উদযাপন করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।  


দেলোয়ার হোসেন বলছিলেন, ‘আমি অনেক চেষ্টা করছি, ঈদের বাজার করার জন্য কিছু টাকা জোগাড় করার জন্য। সমাজসেবা অফিসারদের কাছেও বারবার খবর নিছি। কেউ নিশ্চিত কইরা কিছু বলতে পারে না। ধারও পাচ্ছিলাম না। আমাগো কথা যেমন-তেমন, ঈদে বাচ্চাগো জন্য তো একটু বাজার করা লাগে। নগদ এই টাকাটা না পাঠাইলে সেই বাজারটাও করতে পারতাম না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।