ইতিমধ্যে ক্রেতা সামলাতে সানার আল কাসির রোডের দোকানিরা অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিয়েছেন। যাতে বিক্রি বেশি করা যায় আর ক্রেতার চাপ সামলানো যায়।
২০১৫ সালের ২৫ মার্চ থেকে সৌদি আরব দেশটিতে যুদ্ধ শুরু করেছে। যুদ্ধের কারণে খুব একটা ভালো যায়নি ইয়েমেনবাসীর গত দুই বছরের ঈদ। বিমান হামলা ও রক্তপাতকে সঙ্গে নিয়ে তারা ঈদের কেনাকাটা ও ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। তবে এবাররের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে যুদ্ধের ঘা এখনও শুকায়নি। এই ক্ষত নিয়েই ঈদেরর প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে ইয়েমেনবাসীর।
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আরব দেশ ইয়েমেন। আয়তন ৫ লাখ ২৭ হাজার ৮২৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার।
যুদ্ধ সত্ত্বেও ইয়েমেনিদের কেউ কেউ এখনও নিজস্ব ছকে জীবনযাপন শুরু করছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যুদ্ধকে তারা প্রতিনিয়ত ব্যাপার মনে করছেন। জীবনের আনন্দঘন মুহূর্তগুলোকে আর হাতছাড়া করতে চান না তারা।
ইয়েমেনি সাংবাদিক ফাতিক আল রোদাইনি এক টুইট বার্তায় জানান, ‘যুদ্ধ ইয়েমেনবাসীকে ঈদ উদযাপন থেকে বিরত রাখতে পারেনি। কারণ যুদ্ধ এখন স্বাভাবিক অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ’
তিনি আরও জানান, ‘প্রথম যখন সৌদি আরব হামলা চালায়, তখন ইয়েমেনিরা মাত্র ২টি মসজিদে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। অথচ পুরোনো এই নগরিতে ১০৩টি মসজিদ রয়েছে। সেবার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনটা ছিল ঝুকিপূর্ণ। আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে ঘুরে বেড়ানো ছিলো আতঙ্কের বিষয়। এ বছর অবস্থার একটু উন্নতি হযেছে। আশা করা যায়, ইয়েমেনিরা এবার ভালোভাবেই ঈদ উদযাপন করতে পারবে। সবাইকে ঈদ মোবারক। ’
এবার ইয়েমেনের ঈদ বাজারে দুই-তিন বছরের যুদ্ধকে অনুসরণ করে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার জন্য এক ধরনের খেলনা পাওয়া যাচ্ছে। সেসব খেলনার জন্য বাচ্চারা বায়না ধরছে। গত দুই-তিন বছর ধরে তারা যে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বসবাস করছে তা অনুকরণ করে খেলছে বাচ্চার।
ইয়েমেনিরা সচরাচর দেশে তৈরি বাহারি ডিজাইনের পোশাক পরিধান করে থাকেন। এসব পোশাকের মাঝে রয়েছে, নারীদের জন্য নানা রকম কালো রংয়ের আবায়া, হিজাব, নিকাব ও ছেলেদের আকর্ষণীয় জুব্বা, শার্ট, প্যান্ট ও বাচ্চাদের জন্য নানা ডিজাইনের পোশাক।
ইয়েমেনের সমাজ খুবই রক্ষণশীল। নারীরা তাদের ঐতিয্যগত পোশাকেই ঘর থেকে বের হন। হিজাব ছাড়া বের হলে কটূ কথা শুনতে হয় তাদের। তাই ঈদেও রক্ষণশীল পোশাকেই আগ্রহী ইয়েমেনের নারীরা।
ঈদবাজারে ইয়েমেনিরা খাবারের প্রতিও বেশ গুরুত্ব দেন। ইয়েমেনে সাধারণত ঘরে তৈরি রুটি আর পাথরের বাসন-কোসনে তরকারি রান্না করা হয়।
ঈদের খাবারের দস্তরখানে রুটি, ফাভা বিন ও কলিজা থাকে। আর সাথে থাকে দুধ, চা এবং এলাচ।
ইয়েমেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো- ‘বিন্তুল সাহন। ’ ইংরেজিতে অনুবাদ করলে এর মানে দাঁড়ায়- ডটার অব দ্য প্লেট বা পাত্রের কন্যা। আগুনে ছ্যাঁকা ময়দার পিঠা স্তরিভূত করে এটা বানানো হয়। আর পরিবেশনের সময় এর ওপরে মধু দেওয়া হয়। ডেজার্ট হিসেবে নয়, এটা খাওয়া হয় মূল খাবার হিসেবে। এসব খাবার তৈরিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী খরিদ করতে খাবারের বাজারেও ভিড় লেগে। সবমিলিয়ে বলা চলে, ইয়েমেনিদের এবারের ঈদের আমেজ অন্য বছরগুলো থেকে একটু ভিন্ন।
-আল আসওয়াতুল আলামিয়া অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
এমএইউ/