ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

২৩ ঘণ্টা রোজা রাখছেন ল্যাপল্যান্ডের মুসলমানরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৯
২৩ ঘণ্টা রোজা রাখছেন ল্যাপল্যান্ডের মুসলমানরা! ২৩ ঘণ্টা রোজ রেখেও যারা ক্লান্ত হয় না। ইফতারের খুশিতে হারিয়ে যায় সারা দিনের ক্লান্তি-ক্লেশ। ছবি: সংগৃহীত

ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার বারতা নিয়ে রমজান আসে। পানাহার বর্জনের এই পরীক্ষায় সবার কষ্ট এক রকম হয় না। কোনো কোনো দেশের মানুষ ১০ ঘণ্টারও কম রোজা রাখেন, আবার কোনো কোনো দেশের রোজাদারেরা রোজা রাখেন দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা!

যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ডেনমার্ক, বেলারুশ, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, কাজাকিস্তান, বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরিতে রোজা রাখার সময় প্রায় ১৯ ঘণ্টা।

আবার মাত্র ৯ ঘণ্টা ৩০ মিনিট রোজা রাখছেন আর্জেন্টিনার মুসলিম বাসিন্দারা।

এছাড়াও ১০ ঘণ্টা রোজা রাখছেন অস্ট্রেলিয়ার মুসলিমরা। অন্যদিকে ১১ ঘণ্টার রোজা রাখছেন আর্জেন্টিনার পার্শ্ববর্তী দেশ ব্রাজিল।

২৩ ঘণ্টা রোজা রেখেও আনন্দাপ্লুত ল্যাপল্যান্ডের মুসলমানরা।  ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ৯-২১ ঘণ্টার মাঝামাঝিতেও পানাহার বর্জনের পরীক্ষা দেন অনেকেই। সে দেশগুলো হলো- মধ্যপ্রাচ্যের মিশরে প্রায় ১৬ ঘণ্টা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনে ১৫ ঘণ্টা, কাতার ১৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট এবং কুয়েত, ইরাক, জর্দান, আলজেরিয়া, মরক্কো, লিবিয়া ও সুদানে ১৪ ঘণ্টা।  পাশাপাশি এশিয়ার পাকিস্তানে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ও ভারতীয় মুসলমানরা ১৪ ঘণ্টা ১৬ মিনিট রোজা রেখে উপবাস থাকেন।

এছাড়াও ফ্রান্সে ১৭ ঘণ্টা ১১ মিনিট, ইতালিতে ১৭ ঘণ্টা, কানাডায় পৌনে ১৫ ঘণ্টা, ফিলিপাইনসে সোয়া ১৪ ঘণ্টা, মালয়েশিয়ায় ১৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, সিঙ্গাপুর ১৩ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট এবং কেনিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় সোয়া ১৩ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়।

২৩ ঘণ্টা রোজা রেখেও আনন্দাপ্লুত ল্যাপল্যান্ডের মুসলমানরা।  ছবি: সংগৃহীত

এর মধ্যে বেশ দীর্ঘ সময় রোজা রাখছেন পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলের মুসলমানরা।  বিশেষত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর (১. আইসল্যান্ড ২. সুইডেন ৩. নরওয়ে ৪. ডেনমার্ক ৫. ফিনল্যান্ড) অধিবাসীরা।
তাদের রোজার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ ঘণ্টা। আবার আইসল্যান্ড ও গ্রীনল্যান্ডে বসবাসরত মুসলমানদের রোজার সময়ের দৈর্ঘ্য গড়ে ২১ ঘণ্টা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এর নর্ডিক অঞ্চলের একটি দেশ ফিনল্যান্ড। জীবনযাত্রার মান যথেষ্ট উন্নত হওয়ায় নানা দিক থেকে বিশ্বের মানুষের মাঝে আজ বেশ আলোচিত একটি দেশ এটি। শীতপ্রধান এ দেশটির মোট জনসংখ্যা পঞ্চাশ লাখের মতো। এর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ মুসলমান।

ইফতারের আনন্দে মুছে যায় ২৩ ঘণ্টা রোজা রাখার ধকল।  ছবি: সংগৃহীত

ফিনল্যান্ডের মুসলমানরা এবারের রোজায় ২২ ঘণ্টারও অধিক সময় রোজা রাখছেন। রাজধানী হেলসিংকি সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানে বসবাসরত রোজাদাররা রোজা রাখেন ২২ ঘণ্টা ১২ মিনিট। এটিই হলো- ফিনল্যান্ডের রোজার সবচেয়ে কম সময়। অন্যান্য এলাকায় রোজার সময় আরও বেশি।

ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে উত্তরের শহর ল্যাপল্যান্ড এলাকায় বসবাসরত মুসলামানরা সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রোজা রাখেন। সেখানে রাত আসে মাত্র ৫৫ মিনিটের জন্য। তাদের প্রতিদিনকার রোজার দৈর্ঘ্য হয় ২৩ ঘণ্টারও বেশি।

ফিনল্যান্ডের একটি ঘরোয়া ইফতার।  ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী থেকে উত্তর দিকের শহরগুলোতে রোজার সময় বেড়ে যায়। ফিনল্যান্ডের উত্তরদিকের বৃহত্তম শহর উলু। সেখানকার রেজাদারগণ ২৩ ঘণ্টা (৭ মিনিট কম) রোজা রাখেন। দেশের উত্তরের অন্যান্য শহরগুলোতে ১ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইফতার ও সাহরি সম্পন্ন করতে হয় রোজাদারদের।

এতো দীর্ঘ সময় রোজা রাখা অনেকটা অসাধ্য হওয়ায় সেখানকার ইসলামিক স্কলাররা ফাতাওয়া দিয়েছেন পার্শ্ববর্তী কোনো মুসলিম দেশের সময় অনুপাতে রোজা রাখতে। কিন্তু ফিনল্যান্ডের অধিবাসীরা এই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা রোজা রাখছেন। আর ইফতার করছেন মাত্র ১ ঘণ্টার জন্য।

এতো দীর্ঘ সময় রোজ রেখেও দৈনিক হাসি-খুশি ও প্রাণবন্ত জীবন।  ছবি: সংগৃহীত

ফিনল্যান্ডে বসবাস করেন নানা দেশীয় মুসলমান। ইরাক, সোমালিয়া, তুরস্ক, থাইল্যান্ডের অনেক মুসলমান এখানে বসবাস করেন।  
তাতারিদের মাধ্যমে দেশটিতে ইসলাম প্রবেশ করলেও নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শরণার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে ফিনল্যান্ডে।

এক সময় ফিনল্যান্ডে সবধরনের ইসলামি কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। ১৯২৫ সালে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী জলসা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মাঝে ফিনল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম কোনো ইসলামি জলসার অনুমোদন দেয়।

ইউরোপের একটি ইফতার পার্টিতে ব্রিটিশ যুবরাজ হ্যারি।  ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘতম দিনের বিষয়টি মাথায় রেখে ফিনল্যান্ডের মুসলমানরা তাদের পার্শ্ববর্তী দেশের সময় অনুযায়ী রোজা পালন করেন। ১৮ ঘণ্টারও বেশি সময় রোজার দৈর্ঘ্য হলে ফিনল্যান্ডের অধিকাংশ মুসলমান পার্শ্ববর্তী দেশের সময়ের সঙ্গে মিল করে রোজা রাখেন।  

ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ডে বসবাসরত মুসলমানরা তাদের রোজার সময় নির্ধারণ করেন সবচেয়ে কাছের মুসলিম দেশ তুরস্কের সময় অনুযায়ী। গতবছর এক ফতোয়ায় তাদেরকে মক্কা অথবা নিকটতম মুসলিম দেশের রোজার সময় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এ বছর তাদের অনেকেই সেই ফতোয়াকে অনুসরণ করছেন।

-‘আল মিসরি আল ইয়াউম’ ও ‘কল্লা ওয়া দাল্লা’ ওয়েস অবলম্বনে

রমজানবিষয়ক যেকোনো ধরনের লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।