নীল নদের পানির বরকতে মিশরের জমিন থাকে অনেক উর্বর। তাই ‘মিশর নীল নদীর দান’ বলা হয়।
রমজানের শুরু থেকেই তাদের চেহারায় ভেসে উঠে আনন্দের ছাপ। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগ, কোথাও আবার কোনো সেবামূলক সংস্থার অধীনে আয়োজন করা হয় ‘মায়েদাতুর রাহমান’ নামক ইফতার পরিবেশনের প্লাটফর্ম। সেখানে সবাই ইফতার করতে পারে। কোনো ধরনের ভেদাভেদ ছাড়া ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মুসলিম-খ্রিষ্টান প্রত্যেকেই একত্রিত হন ‘মায়েদাতুর রাহমানে’।
রমজানে মিশরীয়রা হরেক রকম খাবার তৈরি করেন। ইফতারে তাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয় পানীয় হলো ‘তামারুল হিন্দি’, উরুকছুছ, ও ছুবিয়া। সাধারণত তারা খেজুর ও অন্যান্য পানীয় দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তারা অন্য খাবার গ্রহণ করেন। সবচেয়ে ব্যতিক্রম একটি বিষয় হলো, মিশরে ইফতারের সময় হলেই ভেসে আসে কামানের ধ্বনি। এটা বহুকাল ধরে চলে আসা তাদের একটি সামাজিক প্রচলন। সেই ৮৫৯ হিজরিতে ইখশিদি আমল থেকে চালু হয় এই নিয়ম।
কিংবদন্তি বলে, কামানের গোলা ছোড়ার মাধ্যমে ইফতারের সময় ঘোষণার ঐহিত্য ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়। যখন ঘড়ি বা অন্যান্য প্রযুক্তি ছিল না, তখন মানুষকে ইফতারের সময়ের জানান দিতে এটাই ছিল একমাত্র পন্থা। অনেক ইতিহাসবিদের মতে, মিশরে ১০ম শতকে ফাতিমিদ খলিফা ইফতারের সময় ঘোষণার জন্য কায়রোর মুকাতাম পাহাড়ে একটি কামান বসানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তিতে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ে।
পবিত্র রমজানে আরেকটি বিষয় যেটি মিশরে বেশী দৃশ্যমান হয়, তাহলো পবিত্র কোরআনের প্রতি তাদের যত্ন ও ভালোবাসা। বলা হয়, পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে হিজাজে। আর এ কোরআন উত্তমরূপে তেলাওয়াত হয়েছে মিশরে। পুরো রমজান জুড়ে সেখানে থাকে কোরআনচর্চার পরিবেশ। সবজায়গা থেকে শুনা যায় কোরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ।
বিশ্বের বড় বড় নন্দিত ক্বারিদের জন্ম মিশরে। উল্লেখ্য ক্বারি আব্দুল বাসেত আব্দুস সামাদ, শাইখ মাহমুদ খলিল আল-হুসারি, শাইখ আস-সিদ্দিক আল-মিনশাওভিসহ আরো অনেক। সবজায়গা থেকে ভেসে আসে তাদের সুমিষ্ট কন্ঠে তেলাওয়াতের ধ্বনি। অভ্যাসগতভাবেই মিশরীয়রা তেলাওয়াত করতে ও তেলাওয়াত শুনতে পছন্দ করে।
ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত পুরো সময়টাই সবজায়গায় থাকে ইবাদত করার মনোরম পরিবেশ। মাগরিবের কিছুক্ষণ পর থেকেই মানুষ ছুটে যায় তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করতে। প্রতিরাতে ইমামগণ তারাবিতে অর্ধেক পারা তেলাওয়াত করেন। কোনো কোনো মসজিদ তিন-চার পারাও তেলাওয়াত করা হয়। বিভিন্ন কেরাতে (তেলাওয়াত-শৈলী) ইমামরা নামাজ পড়ান।
তারাবির নামাজের মধ্যেভাগে থাকে সংক্ষিপ্ত বিরতি ও আলোচনা। তারাবি শেষে মুসাল্লিরা তাদের নিজ নিজ ঘরে ফেরেন। তিন-চার ঘণ্টা বিশ্রামের পরে তারা আবার ফিরে যান মাসজিদে; তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য। তারা জামাতবদ্ধ হয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করেন। বলাবাহুল্য যে, মিশরের প্রায় মাসজিদেই থাকে মহিলাদের নামাজের ব্যাবস্থা। মাজহাব গত দিক থেকে মিশরের আধিকাংশ মানুষ শাফেয়ি মাযহাব অনুসরণ করেন। সর্বোপরি পুরো রমজানে তারা আমলের সঙ্গে কাটান।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া
রমজানবিষয়ক যেকোনো ধরনের লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
এমএমইউ