মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। এর জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ভারত।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১২.১ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৭ রান সংগ্রহ করেছে সফরকারী দল।
বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ৩ ওভারের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় ভারত। ইনজুরিতে আক্রান্ত রোহিত শর্মার বদলে ওপেনিংয়ে নামলেও ব্যাট হাতে রান পাননি বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশি পেসার এবাদত হোসেনের পঞ্চম বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ভারতীয় ব্যাটার (৫)।
কোহলির পর টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ানও। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১০ বলে ৮ রান করেন শিখর। এরপর ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে আসা ওয়াশিংটন সুন্দরকে (১১) দ্রুত ফেরান সাকিব আল হসান। বাঁহাতি স্পিনারের প্রথম ওভারের শেষ বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সুন্দর। ৩৯ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ভারত।
বুধবার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের সামনে ২৭২ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে এই সংগ্রহ দেয় স্বাগতিকরা।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে আগের ম্যাচের উদ্বোধনী জুটিতে বদল আনে বাংলাদেশ। লিটন দাসের সঙ্গী হন এনামুল হক বিজয়। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল আছেন ছন্দে। ফ্লিক করেছিলেন, খেলেছিলেন দৃষ্টনন্দন কাভার ড্রাইভও। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। চতুর্থ বলে স্লিপে বিজয়ের ক্যাচ ছাড়েন রোহিত শর্মা। হাতে চোট নিয়ে মাঠও ছাড়তে হয় তাকে। পঞ্চম বল অফ সাইড থেকে কিছুটা সুইং করে প্যাডে লাগে বিজয়ের। সিরাজের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি বিজয়। ৯ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
দশম ওভারে সিরাজের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন তিনি। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যেতে হয় বাংলাদেশ অধিনায়ককে। ২৩ বলে কেবল ৭ রান করেন লিটন।
নাজমুল হোসেন শান্ত পজিশন বদলেও বড় রান পাননি। ৩ চারে ৩৫ বলে ২১ রান করেন তিনি। উমরান মালিকের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। সাকিব ফিরে যান ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয় তার। স্লিপে দাঁড়ানো শেখর ধাওয়ান ক্যাচ ধরেন। ১ চারে ২০ বলে ৮ রান করেন তিনি।
আফিফ হোসেন ও মুশফিকুর রহিমও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ২ চারে ২৪ বলে ১২ রান করে শুরুতে মুশফিক সাজঘরে ফেরত যান ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে একই বোলারের ওভারে বোল্ড হয়ে যান আফিফ।
হুট করে ১৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচে নায়ক হয়ে ম্যাচ জেতানো মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ সব শটের সঙ্গে তিনি খেলছিলেন দায়িত্ব নিয়েও। তার সঙ্গে এই ইনিংসের সবচেয়ে বড় হাইলাইট মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রানের ফেরা।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বেশ কয়েকবার। এখনও দলে থাকার মতো সক্ষমতা আছে কি না, কথা উঠেছিল এ নিয়েও। সবকিছুর প্রমাণ যেন মাঠেই দিতে চাইলেন রিয়াদ। মিরাজের সঙ্গে তার ১৪৭ রানের জুটি ভাঙে ৪৭তম ওভারে এসে।
উমরান মালিকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৭ চারে ৯৬ বলে ৭৭ রান করেন রিয়াদ। তিনি সাজঘরে ফেরার পরও দলকে টেনে নেন মিরাজ। উইকেটের সামনে, পেছনে; বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে পেয়ে যান শতকের দেখা। নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২ হাজার রান ও দুইশ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেন এই অলরাউন্ডার।
অসাধারণ ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত থেকেছে অপরাজিতই। ৮ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসে ৮৩ বলে ১০০ রান করেন মিরাজ। রোমাঞ্চকর অপেক্ষা শেষে ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে পূর্ণ করেন শতক। শেষ পাঁচ ওভারে দলের রান হয় ৬৮। ওয়াশিংটন সুন্দর তিন ও উমরান মালিক- মোহাম্মদ সিরাজ নেন দুই উইকেট করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২২
এমএইচএম