খুশদিল শাহকে তেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হলেন তৌহিদ হৃদয়। তবে ততক্ষণে সিলেট স্ট্রাইকার্সের জয় অনেকটাই হাতের নাগালে।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৪৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় কুমিল্লা। জবাবে দলীয় ১২ রানের ভেতরই পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ হারিসকে হারায় সিলেট। কিন্তু ক্রিজে আসতেই যেন পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন হৃদয়। আগের ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে জয়ের সিলেটের জয়ের নায়ক ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ব্যাটের সেই দাপট ধরে রাখেন এই ম্যাচেও। টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে ৩৭ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি। যার ফলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তারই হাতে।
মিরপুরে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন হৃদয়। ফাইন লেগ বাদে সব অঞ্চল দিয়ে রান করেছেন তিনি। সিলেটকে জয় এনে দেওয়ার পথে দ্বিতীয় উইকেটে ৪৩ রানের জুটি গড়েন এই ব্যাটার। ২১ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ১৯ রানে ফেরেন। খুশদিলের বলে এক্সট্রা কাভারে থাকা ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি।
চারে নেমে হৃদয়ের মতোই সমানতালে ব্যাট চালান জাকির হাসান। কিন্তু দারুণ শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি। সেটা অবশ্য নিজের ভুলেই। মোহাম্মদ নবীর কিছুটা ওপরের লেংথে পড়া ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে থাকা লিটন দাসের হাতে। ১০ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি। নবীকে কাভারের ওপর দিয়ে মারা তার ছক্কাটি ম্যাচের সেরা শট বললেও ভুল হবে না।
জাকিরের বিদায়ের পর মুশফিকের সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়ে জয়ের কাজটা আরও সহজ করে দেন হৃদয়। তিনি আউট হলেও ২৫ বলে ২ চারে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। অপর প্রান্তে ৬ রানে অপরাজিত ছিলেন আকবর আলী। ফজলহক ফারুকিকে চার মেরে ১৪ বল আগে সিলেটের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। মাঝ দিয়ে অবশ্য ১ ছক্কায় ৮ রান করে ফিরে যান থিসারা পেরেরা। কুমিল্লার হয়ে দুটি করে উইকেট নেন নবী ও খুশদিল। ৩ ওভারে ২৫ রান দিয়েও কোনো উইকেটের দেখা পাননি মুস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪৯ রান করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়াস। তাতে জাকের আলীর কৃতিত্বই সবচেয়ে বেশি। তার অবদান ৪৩ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৫৭ রান।
থিসারা পেরেরার করা প্রথম ওভারের প্রথম বলে চার মেরে দারুণ শুরুর আভাস দিয়েছিলেন কুমিল্লার ওপেনার লিটন দাস। বাউন্ডারি ছাড়া করেন তৃতীয় বলেও। কিন্তু সম্ভাবনাময় ইনিংসটিকে অকাল পরিসমাপ্তি দেন ডানহাতি এই ওপেনার। ওভারের চতুর্থ বলেই থার্ড ম্যান অঞ্চলে থাকা মোহাম্মদ হারিসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৮ রানে সেই প্রথম ওভারেই ফিরতে হলো তাকে।
লিটন যেখানে শেষ করলেন সেখানেই যেন শুরুর সৈকত আলীর। মোহাম্মদ আমিরকে চার মেরে রানের খাতা খুলেন তিনি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথম বল করতে এসে তার কাছে টানা তিন চার খেয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেই ওভারে ১৫ রান দেন সিলেট অধিনায়ক।
তবে লিটনের মতো সৈকতও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১২ বলে ২০ রান করে পাকিস্তানি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমের বলে বোল্ড হন তিনি। পরের ওভারে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস (২ রান) মোহাম্মদ আমিরের শিকার হয়ে ফিরলে পাওয়ার প্লের ভেতরই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে কুমিল্লা। স্কোরবোর্ডে তখন সংগ্রহ কেবল ৪৬ রান।
এমন চাপের মুখেই ব্যাটিংয়ে নামেন জাকের আলী। জুটি বাঁধেন একপ্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার দাভিদ মালানের সঙ্গে। তবে তাদের এই জুটি ম্যাচে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। কেননা চতুর্থ উইকেটে ৫৩ রান তুলতে ৪৯ বল খরচ করেন তারা। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেমানান। ৩৯ বলে ৩৭ রান করে ফিরলে হাতখুলে খেলতে থাকেন জাকের। রেজাউর রহমান রাজার এক ওভারে তোলেন ১৫ রান। যদিও শেষ দিকে খুব আতঙ্ক বিরাজ করতে পারেনি তার ব্যাট। এর মাঝেই হতাশ করে ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ নবী। মাশরাফির করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আবু হায়দার রনি ছয় হাঁকানোয় সিলেটকে ১৫০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে কুমিল্লা। সিলেটের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন পেরেরা ও আমির। একটি করে শিকার করেন মাশরাফি ও ইমাদ।
বিপিএলে এনিয়ে দুই ম্যাচের দুটিতেই হারল কুমিল্লা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের কাছে ৩৪ রানে হেরেছিল তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৩
এএইচএস/আরইউ