বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রায় দুই দশক খেলেছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে।
এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলছেন মাশরাফি। নেতৃত্বে, বল হাতে সফলও হচ্ছেন এই পেসার। এর মধ্যে আলোচনায় তার অবসর ইস্যু। কয়েকদিন আগে নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক মাঠ থেকে অবসর প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘খারাপ হয় না। ’ এ নিয়ে বৃহস্পতিবার জানতে চাওয়া হয় মাশরাফির কাছে।
সিলেটে তিনি বলেছেন, ক্রিকেটের শুরু করেছিলেন প্রত্যাশা ছাড়াই। মাশরাফি বলেন, ‘সত্যি বলতে হওয়া উচিত। আমি মনে করি প্রতিটা খেলোয়াড়...বিশেষ করে সাকিব...এখন যারা আছে। আমি নিজেরটা বলতে পারব না কারণ অনেকদিন আগেই ছেড়ে এসেছি (ক্রিকেট)। আমার কোনো প্রত্যাশা নেই। আমি নিজেও বিশ্বাস করি না নিজেদের ক্ষেত্রে। ’
‘আপনাদের এখানে এসে বলে গেছি, যখন ক্রিকেট শুরু করি, তখন জাতীয় দলে খেলবো আশা করি। বাসা থেকে বলা হয়েছিল পড়ালেখা করো, আমি ক্রিকেট বেছে নিয়েছি। তখন এত অর্থ, গাড়ি-বাড়ি কিছুই ছিল না। ক্রিকেট দিয়েই কিন্তু জীবনের সবকিছু হয়েছে। একটা পর্যায়ে ক্রিকেট প্যাশন থেকে পেশা হয়েছে। প্যাশনটা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে একটা পর্যায়ে হয়তো অর্থ না দিলেও ক্রিকেট খেলতাম। ’
মাশরাফি বলছেন এখন ক্রিকেট খেলছেন প্যাশনের জন্য, ‘এমন কোনো অর্থ আমি ক্রিকেট থেকে এখন পাই না। তো এটা শুধু পেশার ব্যাপার না এখন, এটা প্যাশনের ব্যাপার। আমি যখন ক্লাস সিক্স-সেভেন-এইটে পড়ি, তখন থেকেই এই স্পোর্টসটাকে...যখন ক্রিকেটের ওই ইমেজ ছিল না, তখন থেকেই ভালোবেসেছি। এই খেলার প্রতি আমার যে ভালোবাসা আছে হয়তো আরেকজন ক্রিকেটারেরও তাই আছে। হয়তো তার ক্ষেত্রে গেলেও একই কাজ করবে। তারটা তো আমি বলতে পারবো না, আমারটা বলতে পারবো। আমি ক্রিকেট খেলেছি ভালোবেসেছি, এখনও ভালোবাসি এজন্য খেলি। ’
‘কোনো প্রত্যাশা নিয়ে আসিনি, যেতেও চাইনি। তিন বছর আগেও এই প্রত্যাশা নিয়ে এখান থেকে যাইনি যে আমাকে ক্রিকেট বোর্ড থেকে বা কোনো জায়গা থেকে কী দেবে সেই আশায় আমি বসেছিলাম না। আগেও বললাম আমার হ্যাপিনেস আমার কাছে, হ্যাপিনেস কারো কাছে বিক্রিও করতে আসিনি, কিনতেও আসিনি। আমার যেটা মন চেয়েছে, যেটা মনে করি ঘরে গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারবো ঘরে গিয়ে, সেটাই করেছি ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। এজন্য আমি কারো কাছে কিছু আশা করি না। সত্যি বললাম, হাজারবার বললে হাজারবারই বলবো আমি কিছুই আশা করি না। ’
যদিও মাশরাফি মনে করেন, মাঠ থেকে অবসরের সংস্কৃতি থাকা উচিত, ‘অবশ্যই ওই সংস্কৃতিতে যাওয়া উচিত, ওই সংস্কৃতি সেট আপ করা দরকার। যারা আছে এখন, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ, তামিম, কেউ স্বীকার করুক বা না করুক; তারা বাংলাদেশের কিংবদন্তি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। তাদের ক্ষেত্রে যেন ওই সুযোগ বাংলাদেশের মানুষ পায়...তারা যেন ওই সম্মানটা নিয়ে মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারে। দীর্ঘদিন, দীর্ঘসময় তারা শ্রম দিয়েছে। অনেক কিছু ত্যাগ করেই সময় দিয়েছে। মানুষ তো হিসাব করে কত টাকা পেল। কিন্তু তারা যে শ্রম দিয়েছে, দিনের পর দিন ত্যাগ করেছে, এটা কেউ জানে না। ওই সম্মানটা যেন তারা পায়। যারা মধ্য বয়সে আছে, তরুণ আছে, তারা যেন বিশ্বাসটা আসে, আমাদের দেশ থেকে এতটুকু সম্মান নিয়ে যেতে পারবো। ’
মাশরাফি বলছেন তার নিজেকে নিয়ে তেমন কোনো আশা নেই, ‘আমার ক্ষেত্রে কোনো প্রত্যাশা নেই। এ নিয়ে কোনো রাগ, ক্ষোভ, কিছুই না। আমার কোনো ক্ষোভ নাই। কেবল বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা আছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ