শুক্রবার মিরপুরে জাতীয় দলের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন ছিল দুপুর বারোটায়। মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমানরা অবশ্য এলেন আরও আগে।
বেলা গড়াতেই শোনা গেল, জুম্মার দিন বলে ‘ম্যাচ সিনারিও প্রস্তুতি’ শুরু হবে দুপুর দুইটার পর। ব্যস্ততা অবশ্য কমলো না তাতে। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল গেলেন ইনডোরে, তার সঙ্গী ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। গিয়েছিলেন আরও এক ব্যাটারও, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গ দিয়েছেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, পিচের মাঝে দাঁড়িয়েই তাদের কথাও হয়েছে লম্বা সময়।
ইংল্যান্ড সিরিজের পুরোটাজুড়েই বাংলাদেশের অনুশীলন হবে ইনডোরে। ওখানে আজ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন স্পিনারদের খেলার পরীক্ষা দিচ্ছেন হাথুরুর সামনে। তামিম তখন খেললেন বোলিং মেশিন আর গ্রানাইটে। তার জন্য ছুটে আসছিল একের পর এক বাউন্সার।
জফরা আর্চার, মার্ক উডদের বিপক্ষে নতুন বলটা তামিমেরই খেলতে হবে। ওই প্রস্তুতিই সেরে নিয়েছেন তিনি। বোলিং মেশিনের বল ফুরিয়ে যেতেই এসে টুকটাক কথা বলেছেন জেমি সিডন্সের সঙ্গে, দুজন আলাপও করেছেন সময় নিয়ে। ‘ম্যাচ সিনারিও প্রস্তুতি’তে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসকে খেলতে হয়েছে নতুন বল। তাসকিনের বাউন্সারে অবশ্য তামিমকে দেখা গেছে ‘ডাক’ করতে।
এমন প্রস্তুতিতে রান তেমন জরুরি নয়। তবে সংখ্যাটা বললে ব্যাটিংয়ের ধরণ বুঝতে কিছুটা সাহায্য হতে পারে- তিন বোলার তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজ ও মিরাজের ৬ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে কোনো উইকেট দেননি তারা। তামিম ইকবাল ১১ আর লিটন দাসের ব্যাট থেকে এসেছে ২০ রান। তারা আসলে কেমন ব্যাটিং করতে চেয়েছেন? ওই ব্যাখ্যাই আলাপের সময় বলছিলেন দল সংশ্লিষ্ট একজন।
দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে বাংলাদেশের ওয়ানডে খেলার ধরণ এখন এই- প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট দেওয়া যাবে না। রান যা তোলার তুলতে হবে ১১ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে। লিটন-তামিমও তাদের প্রথম দফায় খেলা ১০ ওভারে কোনো উইকেট দেননি।
তামিমদের ছয় ওভারের পর বিরতি ছিল। কোচের কাছে এসে বেশ কিছুক্ষণ হিসাব বোঝার পর একে একে ব্যাটিংয়ে এসেছেন প্রায় সব ব্যাটার। এর মধ্যে তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম ব্যাটিং করেছেন একাধিকবার।
পুরো ম্যাচই ডাগআউটের আশেপাশে দাঁড়িয়ে দেখেছেন হাথুরু। পেসারদের বোলিংয়ের সময় সরব ছিলেন অ্যালান ডোনাল্ডও। গত কয়েকদিন নিয়মিত হয়ে যাওয়া দৃশ্যটা দেখা গেছে শুক্রবারও। পেসারদের বোলিংয়ের বেলায় ডোনাল্ড উইকেটের সোজা দাঁড়িয়ে নিয়েছেন একেবারে ‘আম্পায়ার ভিউ’। মাঝেমধ্যে করেছেন ভিডিও।
তিনি, স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ সুযোগ পেলেই কথা বলেছেন বোলারদের সঙ্গে। ডাগআউটে ফিরে এলে জেমির সঙ্গে কথা হয়েছে ব্যাটারদেরও। আলাপ অবশ্য সবচেয়ে বড় ছিল হাথুরুসিংহের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসের। মাঠে যখন প্রস্তুতি চলছিল, তখন তারা তিনজন সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন।
কিছুক্ষণ বাদে তাতে যোগ দেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সও। আলাপটা যে ব্যাটিং নিয়ে ছিল, আঁচ করা গেছে দূর থেকেই। টেকনিক্যাল কোনো সমস্যার কারণেই কী? প্রশ্নটা শুনতেই দলের সংশ্লিষ্ট একজন বলছিলেন, ‘শচীনেরও টেকনিক্যাল সমস্যা আছে...। ’
গত দুদিনে মিরপুরের হাইলাইট হয়তো হাথুরু-ক্রিকেটার রসায়ন। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রজেক্টর নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাদের উপলব্ধি করিয়েছেন, ‘তোমাদের সব খুঁটিনাটি জেনেই এসেছি’, দিয়েছেন ‘একাত্মতার’ ডাক।
শুক্রবার দেখে মনে হয়েছে, বেশি দ্রুত হলেও ঝুঁকি নিয়ে কথাটা বলাই যায় ‘কাজটার ব্যাপারে হাথুরু বেশ সিরিয়াস’। এমন হলে তো বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই লাভ অবশ্যই। একজন অবশ্য কথায় কথায় বলছিলেন, ‘হাথুরুর ওপর প্রত্যাশার চাপটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। শুরুতেই এমন চাপ দেওয়া ঠিক না...। ’ কিন্তু নাম যখন চন্ডিকা, সামনে বিশ্বকাপ; চাপ তো থাকবেই। প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হবে? সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে সময়।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম