গলায় ক্যামেরা, চোখে চশমা, মাথায় বাংলাদেশের পতাকা আর পরনে টু কোয়ার্টার প্যান্ট। সবকিছুর বাইরে গিয়ে মাইকের পরিচয় ‘আমি সমারসেট সমর্থক’।
কেন? প্রশ্নটা শুনেই শেরে বাংলার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে বসে মাইক বললেন, ‘ও তো আমাদের সমারসেটেই বেড়ে উঠেছে। ’ কেবল দুইটি ম্যাচই দেখতে এসেছেন বাংলাদেশে। ক্রিকেটের জন্য তার ভ্রমণ এবারই অবশ্য প্রথম নয়, খেলা দেখতে গিয়েছিলেন অ্যান্টিগায়ও। ভারতে কয়েকবার গেলেও আসেননি বাংলাদেশে, ক্রিকেটীয় উপলক্ষটা তাই হারাতে চাননি একদমই।
ডাক্তারি জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন, এখন সময়টা কাটাতে চান নিজের মতো করে। জীবনের বড় অংশজুড়ে তার ক্রিকেটটাই আছে। প্রায় সব খেলাই দেখেন, তবুও তার কাছে আলাদা ক্রিকেট। খেলাটার প্রেমে কীভাবে পড়লেন? ‘খুব ছোটবেলায়। এক সময় তো খেলতামও। দেখতেই পাচ্ছেন এখন বয়স হয়ে গেছে!’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের খোঁজ নিয়মিত রাখেন। ক’দিন আগে ভারতকে হারানোর খবর জানেন। মনে আছে সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় তামিম ইকবালের লর্ডসের সেই সেঞ্চুরির কথা, এরপরের উদযাপনও। আজও আশায় ছিলেন ভালো কিছু করবেন, না পারায় মাইককে হতাশই হতে হয়েছে।
তিনি অবশ্য এসেছেন অনিশ্চয়তা ভরা এক সফরে। টিকিট কীভাবে পাবেন, জানতেন না। ইনডোরের সামনে গিয়ে লম্বা লাইন পেরিয়ে পেয়েছেন আরাধ্য টিকিট। পরের ম্যাচের পাবেন কি না, সেটাও জানেন না এখনও। সফরসঙ্গী নেই, নেই পরিচিত কেউও। মাইক অবশ্য ‘একটু বেশিই ব্যস্ত শহর’ ঢাকায়; এতেই ‘মজা পাচ্ছেন’ বেশ।
স্ত্রী লারা ক্রিকেটটা পছন্দ করেন, তবে মাইকের মতো ঘুরে বেড়াতে চান না একদমই। দুই মেয়ের একজন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছে জানালেন সেটিও। দীর্ঘ জীবনে ক্রিকেটকে বদলে যেতে দেখেছেন চোখের সামনে। কাউন্টি নিয়ে কৌতূহল দেখে ১০ বছর ধরে সমারসেটের সদস্য মাইক নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন পরের কথাগুলো।
‘কাউন্টি একসময় খুব জমজমাট ছিল। প্রতীক্ষায় থাকতাম সমারসেট কবে খেলতে নামবে। কিছুটা চাপে আছে এখন। অনেক ফরম্যাট পৃথিবীজুড়ে। আইপিএল আছে। কাউন্টিতে তো অনেক সময় লাগে। তবে এখনও কিন্তু ভালোই প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হয়। যুক্তরাজ্যে জনপ্রিয়তাও আছে। ’
কথাগুলো বলতে বলতেই ইংল্যান্ডকে নিয়েও উচ্ছ্বাসের কথা জানালেন মাইক। বিধ্বংসী ক্রিকেটের পথে ছুটে চলা দলটা তার হৃদয়ের আঙিনার বরাবরই। বললেন, ‘এটা অসাধারণ (যেভাবে খেলছে)। বিশেষ করে টেস্ট দলটা! বেন স্টোকস দারুণ অধিনায়ক। অ্যাশেজ আসছে, আশা করি সেখানেও এটা দেখতে পাব। গত ১২ মাসে কিন্তু খুব বেশি দল আমাদের হারাতে পারেনি!’
ইংল্যান্ড ক্রিকেটের স্মৃতিতেই বাংলাদেশ আছে ভালোভাবে, মাইকও ব্যতিক্রম নন। এদেশের আইকনিক জয়গুলোর একটি এসেছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। বলা হয়, ওই হারই মোড় বদলে দিয়েছে ইংলিশ ক্রিকেটের। ইংল্যান্ডের মানুষদের বাংলাদেশের কাছে হারের খারাপ লাগার ক্ষত আদতে কেমন?
মাইক দিচ্ছিলেন সে জবাব, ‘আমার তো একটুও খারাপ লাগেনি। কেন লাগবে? যারা ভালো খেলবে, তাদেরই জয় হবে। কারও কাছে হারলেই আমার খারাপ লাগে না, যে ভালো খেলেছে জিতেছে...। বাংলাদেশ তো গত ১০ বছর ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছে। ’
আদতে মাইক যে ক্রিকেটেরই অনুরাগী- তার প্রমাণ মিলবে একটা ঘটনা বললে। তার সঙ্গে কথা শুরু হওয়ার খানিক আগেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে তার জুটি কিছুটা ভয়ই ধরিয়ে দিচ্ছিল প্রতিপক্ষকে।
শান্ত যখন আউট হলেন, মাইক তাই উচ্ছ্বাসে ভাসলেন কিছুটা। বাংলাদেশি ব্যাটার সাজঘরে ফেরার পথ ধরতেই দিলেন করতালিও। ক্রিকেটের জয়গান গেয়ে মাইক বাকি জীবন হয়ে থাকতে চান টেস্ট অনুরাগী।
কণ্ঠ সমীহ আর সম্মান নিয়ে বাংলাদেশ, তাদের ওয়ানডেতে ভালো করা নিয়ে প্রশংসা করলেন। প্রায় পাঁচ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে স্রেফ ক্রিকেটের টানে চলে আসা বার্ধক্যের পথে হাঁটা মাইকের জন্য শুভকামনা জানিয়ে ফিরতে হলো অবশ্য ক্রিকেটেরই টানে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ