ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

দেশের ক্রিকেটে পরিবর্তনের সুবাতাস 

সালেক সুফী  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
দেশের ক্রিকেটে পরিবর্তনের সুবাতাস 

পর পর দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিবর্ণ বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্প্রতি পরিবর্তনের সুবাতাস লেগেছে। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জয়, ঢাকা টেস্ট ম্যাচে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে দাপুটে জয়ের পর আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাইলফলক স্থাপনকারী ওয়ানডে সিরিজ জয় প্রমাণ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটের রেলগাড়িটা সঠিক পথে উঠে এসেছে।

 

বাংলাদেশ ক্রিকেটে পঞ্চপাণ্ডব খাত ৫ জন বিশ্বমানের ক্রিকেটারের গোধূলিবেলায় একাধিক মানসম্পন্ন ক্রিকেটার সঠিক উইকেটে সঠিক পরিচর্যায় বিকশিত হচ্ছে সঠিক সময়ে। মাশরাফি বিন মর্তুজা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে দলেও অনিশ্চিত। একমাত্র তুখোড় খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান এখনো আপন মহিমায় দেদীপ্যমান।  ২০২৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশের শেষ সুযোগ স্বর্ণযুগের ক্রিকেটারদের সঙ্গে তরুণ প্রতিভাদের মণিকাঞ্চন সংযোগ ঘটিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের।  

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই শুভ পরিবর্তন কোনো অলৌকিক কারণে ঘটেনি। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের হাতেও নেই কোনো আলাদিনের প্রদীপ। পরিবর্তন হয়েছে বিসিবির কিছু লাগসই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে। প্রথম পরিবর্তন ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটের চরিত্র পাল্টে দেয়া। বাংলাদেশে এখন অন্তত দুটি মাঠে (চট্টগ্রাম এবং সিলেট) পেস-বান্ধব স্পোর্টিং উইকেট আছে। শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উইকেট অন্তত বিপিএল-২০২৩ থেকে বদলে গেছে। ভালো উইকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং প্রতিভা অ্যালান ডোনাল্ডের সঠিক পরিচর্যায় বদলে গেছে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ। বিশ্বমানের স্পিন আক্রমণের সঙ্গী এখন তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গড়া পেস আক্রমণ।  

গত বিপিএলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান এবং বোলার নজরকাড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। তাদের জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া নির্বাচকদের দৃষ্টিভঙ্গির শুভ পরিবর্তন। হাথুরু পুনরায় যোগদান করে পেয়েছেন অ্যালান ডোনাল্ড আর রঙ্গনা হেরাথের মতো উঁচুমানের ক্রিকেট কোচকে। কোচিং স্টাফ দলকে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলায় স্বাধীনতা দিয়েছে। পাশাপাশি সাকিবকে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি দলের এবং তামিমকে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

বাংলাদেশ যখন সকল ফরম্যাটে ক্রমাগত পরাজয়ের বৃত্তবন্দী ছিল, তখন লিখেছি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে না। দেশে ধীর, নিচু ঘূর্ণি উইকেট বানানোর সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী। তাসকিন, এবাদতের মতো পেসারদের ওপর ভরসা করা হয়নি। দেশে ভালো খেলা তরুণ বা কয়েকজন মাঝবয়সী প্রতিভাবানদের সুযোগ দেয়া হয়নি। দল নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে। সাকিব, মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যাগুলো সঠিক সময় তুলে ধরায় কিছু শুভ পরিবর্তন হয়েছে। আর এগুলোর সম্মিলিত ফলাফল নতুন বাংলাদেশের ক্রমাগত সাফল্য। তবে বিশ্ব ক্রিকেটে দেশের বাইরে সাফল্য পেতে আরো অনেক কিছুই করতে হবে।  

তিন ফরম্যাটের জন্য অন্তত ৫০ জন ভালো মানের ক্রিকেটারকে পরিচর্যা করে সংরক্ষিত করতে হবে। স্মরণে রাখতে হবে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জাতীয় দল কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই এখন পর্যন্ত শিরোপা জয় করেনি। আশা করি বিচক্ষণ হাথুরু সঠিক কোচিং স্টাফ এবং মেধাবী ক্রিকেটারদের নিয়ে বাংলাদেশকে অধরা শিরোপা এনে দেবেন এশিয়া এবং বিশ্ব অঙ্গন থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।