ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

তামিমের মনেই হয়নি বাংলাদেশ রান তাড়া করছিল

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
তামিমের মনেই হয়নি বাংলাদেশ রান তাড়া করছিল

অস্ট্রেলিয়ার পর ভারতের কাছে হেরে সুপার এইট থেকেই বিদায় নেওয়ার শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ। গতকাল অ্যান্টিগায় ভারতের ১৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে পুরো ২০ ওভার খেলেও ৮ উইকেটে ১৪৬ রান করেছে শান্তবাহিনী।

ম্যাচটি তারা হেরে গেছে ৫০ রানে। এমন ম্যাচে টাইগারদের রান তাড়ার অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তামিম ইকবাল।  

বড় লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম ৩৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। লিটন এক ছক্কা ও এক চারে ১০ বলে ১৩ রান করে আরও একবার ব্যর্থতার নজির স্থাপন করলেন। এরপর তানজিদ আর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্ত তারাও রান তুলছিলেন ধীরেসুস্থে। যে কারণে ৩১ বলে ২৯ রান করা তানজিদ যখন দশম ওভারে বিদায় নেন, বাংলাদেশের রান তখন মাত্র ৬৬।  

এরপর একে একে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন তাওহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলী। এর মধ্যে ১২তম ওভারে সাকিব যখন নামেন, তখন বাংলাদেশের আরও ওভারপিছু ১৪.২৩ করে ১২১ রান লাগে। সাকিব নিজে ৭ বলে ১১ রান করে বিদায় নেন। ৩২ বলে ৪০ রান করা শান্তও ম্যাচ শেষ করে আসার সুযোগ পেয়ে আজে লাগাতে পারেননি। শেষদিকে রিশাদের ১০ বলে ২৪ রান তাই শুধু ব্যবধানটাই কমিয়েছে। দলের এমন হারার আগেই হেরে যাওয়ার মানসিকতার সমালোচনা করছেন অনেকেই। তামিমও তাদের একজন।

'ইএসপিএন-ক্রিকইনফো'র ম্যাচ পরবর্তী লাইভ অনুষ্ঠানে তামিম বলেন, 'আমার মনে হয়, অ্যাপ্রোচের দিক থেকে বাংলাদেশ দল হেরেছে। ভারতের কুলদিপ যাদব ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটারদের অ্যাপ্রোচের কারণেই সে লুপ এবং ফ্লাইট দিতে পেরেছে...। শুরু থেকে আমার মনেই হয়নি তারা (বাংলাদেশের ব্যাটাররা) রান তাড়া করছে। বাংলাদেশ হয়ত ১৪৬ রান করেছে। কিন্তু রিশাদ হোসেনের ১০ বলে ২৪ রান তাদের ওই পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমার কোনও পয়েন্টেই মনে হয়নি বাংলাদেশ রান তাড়া করছিল। ' 

ব্যাটিং নিয়ে হতাশার পাশাপাশি টস জিতে ভারতের বিপক্ষে বোলিং বেছে নেওয়ায় অবাক হয়েছেন তামিম, 'পুরো আসরেই বাংলাদেশের ব্যাটিং হতাশাজনক। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজে পেতে হবে। ব্যাটাররা যখন রান করে, তখন ১৬০-১৭০ রান তাড়া করা যায়। কিন্তু যখন আপনি জানেন ব্যাটাররা হিমশিম খাচ্ছে... আমি অবাক হয়েছিল বাংলাদেশ আগে বোলিং নেওয়ায়। এই ম্যাচে দলের অনেকগুলো সিদ্ধান্ত আমাকে অবাক করেছে। '

বাংলাদেশ দল এ ম্যাচের একাদশে তাসকিন আহমেদকে রাখেনি। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেশি রান খরচ করায় একাদশে জায়গা হারান তিনি। তার জায়গায় বাড়তি একজন ব্যাটার খেলোনোর চিন্তা থেকে সুযোগ দেওয়া হয় জাকের আলীকে। কিন্তু তাসকিন দলের সহ-অধিনায়ক এবং বোলিং আক্রমণের নেতাও। এমন একজনকে দলে না রাখায় অবাক হয়েছেন তামিম, 'তাসকিন না খেলায় আমি অবাক হয়েছি। দুই স্পিনার (সাকিব আল হাসান ও মাহেদী হাসান) অনেক রান খরচ করেছে। '

'একটা সময় তানজিম সাকিবের জোড়া শিকারে চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। তাসকিন থাকলে ওই সময় বাংলাদেশ ভারতকে আরও বেশি আক্রমণ করতে পারতো। আমরা শিভব দুবের শর্ট বলে দুর্বলতার কথা জানি। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট গতি ছিল তাসকিনের। '

তামিমের মতে, মোস্তাফিজকে নতুন বল না দেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ বলা হয়, ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা বাঁহাতি পেসের বিপক্ষে তুলনামূলক দুর্বল। তাছাড়া তৃতীয় ওভারেই তানজিমকে এনে আবার দেরিতে বোলিং দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তামিম, 'বাঁহাতি ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে রোহিতের দুর্বলতার কথা অনেকেই বলেন। ম্যাচে এটার একটা প্রভাব পড়তে পারতো। বাংলাদেশ শুরুটা করতে পারতো বাঁহাতি পেসারকে দিয়েই। ভারত ১৯৬ রান করেছে ঠিকই, কিন্তু রোহিত যেভাবে শুরুটা করে দিয়েছে সেটা তার দলের জন্য কাজে দিয়েছে। '

'তানজিদ আগের ম্যাচগুলোতে নতুন বলে ভালো করেছে। কিন্তু আজকে (গত রাতে) তাকে নতুন বল দেওয়া হয়নি। কেন আপনাকে শুরু একজনের (রোহিত) জন্য পুরো সেটআপ বদলাতে হবে, যখন কেউ (তানজিম) অসাধারণ বোলিং করছে?

বাংলাদেশ দল যে ভালো ব্যাটিং পিচে খেলে অভ্যস্ত নয়, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তামিম, 'বাংলাদেশ দল ব্যাটারদের জন্য কঠিন এমন পিচে খেলে অ্যভস্ত। ভালো উইকেটে খেললে তারা সেভাবে রান করতে পারে না। যেকোনো পিচে রান করতে জানতে হবে। আপনাকে নিজের সামর্থ্য বুঝে শট খেলতে হবে। আমার মনে হয়, ভালো উইকেটে খেলার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকা দরকার। যেটা তারা মিরপুরে পায় না। '

তামিমের মতে, ঘরের মাটিতে জিততেই হবে এমন মানসিকতা থেকেই অমন পিচ বানানো হয়। যেটার দ্রুত পরিবর্তন চান তামিম, 'বাংলাদেশে আমরা শুধু ফলাফল দেখতে চাই। আমরা যদি এক ম্যাচে ভালো উইকেটে খেলে হেরে যাই, তাহলেই কিছু মানুষ এটাকে স্পিন-বান্ধব পিচ বানানোর চেষ্টা করে। এমন মানসিকতা থেকে কোচ, খেলোয়াড় এবং বিসিবিকেও বেরিয়ে আসতে হবে। দরকার হলে আরও ৬ মাস হারবো, কিন্তু এমন পিচ বানানো হোক যেখানে ব্যাটার ও বোলাররা যেন শিখতে পারে। কেবল এভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যেতে পারে। '

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।