ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে প্রথমবার ক্রিকেটের মূল স্রোতে অনিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে প্রথমবার ক্রিকেটের মূল স্রোতে অনিক

মিরপুরের বড় মাঠে ছোট ছোট অনেক মুখ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররা দুই ভাগ হয়ে ম্যাচ খেলছিলেন।

এর মধ্যেও সব চোখ একজনের দিকে, অনেকগুলো ক্যামেরারও আকর্ষণ তিনি। তার চেহারায় ভিন্নতা, উচ্চতাও বাকিদের চেয়ে বেশি। কে তিনি?

জানা গেল পরে- অনিক দেব বর্মন নামের এই ক্রিকেটারের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানায়। গ্রামের নাম কালিগুচিয়া। বাকিদের চেয়ে অনিক আলাদা কোথায়? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিরল এক কাণ্ডই গড়েছেন তিনি। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজনের ক্রিকেটে এতদূর আসার কথাই শোনা যায়নি এর আগে।  

বহু বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে অনিক এখন ক্রিকেট কাঠামোর কেন্দ্রে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। শনিবার নিজের স্নায়ুচাপকে সঙ্গী করেই অনিক শুনিয়েছেন তার উঠে আসার গল্প।  

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেকেই ফুটবলে এসেছেন অনেক দূর, নিজেদের ভেতরও খেলা নিয়ে আগ্রহটা বেশি। কিন্তু ঘরে থাকা সাদা-কালো টিভি দেখে অনিক প্রেমে পড়ে যান ক্রিকেটের। তখন ভারতের খেলা দেখতেন, দেখতেন শোয়েব আক্তার-ব্রেট লিদেরও। এরপরই আগ্রহ বাড়ে একটু একটু করে।  

হবিগঞ্জে অনিক যেখানে থাকতেন, মাঠ ছিল ছোট্ট। ওখানেই শুরু পেস বোলিংয়ের, হাত ভেঙে বল করতেন তখনও। এরপর ধীরে ধীরে শিখে যান ক্রিকেট বলে খেলা। ভর্তি হন শ্রীমঙ্গলের স্কুল ও একাডেমিতে। বদলে যেতে থাকে অনিকের জীবনও। জেলা পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬তে ট্রায়াল দেন।  

এরপর তার টিকে যাওয়ার পেছনের গল্প শুনিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেস বোলিং কোচ নাজমুল ইসলামও। অনিক যখন জেলা পর্যায়ে ট্রায়াল দেন, তখনই একটা ফোন আসে নাজমুলের কাছে; বলা হয় ‘একটা ছেলে আছে। ’

নাজমুল প্রথম আগ্রহী হন উচ্চতার কথা শুনে। ছয় ফুট তিন ইঞ্চি শুনে সম্মতি দেন তাকে রাখতে। সঙ্গে জেলার কোচদের বলেন, বোলিংয়ের ভিডিও পাঠাতে। ওই ভিডিও দেখার পর মুগ্ধ হলেও আর কিছু করতে হয়নি নাজমুলকে। ইয়ুথ ক্রিকেট লিগে পারফর্ম করে অনিক এখন চলে এসেছেন ক্রিকেটের মূল স্রোতে।  
 
শুরুর দিকে পালিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন, খেয়েছেন মারও। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ছেলেকে ক্রিকেটে দেখতে চাননি তার ড্রাইভার বাবা। কিন্তু ছেলের সাফল্য দেখে এখন তিনি প্রতিদিন রাতেই একবার ফোন করেন, খোঁজ নেন ভালো-মন্দের।

ক্রিকেট শুরুর বছর দেড়েক পর বাবা বুট কিনে দিয়েছিলেন, তখনই অনিক বুঝতে পেরেছিলেন বুটের প্রয়োজনীয়তা। ওই জুতোজুড়া এখনও সঙ্গী অনিকের। পুরোনো বুটজোড়া পরেই অনিক স্বপ্ন বুনেন তার আইডল তাসকিন আহমেদের মতো জাতীয় দলের জার্সিটুকু গায়ে জড়ানোর। সেটি তিনি পারবেন কি না, উত্তর দেবে সময়। তবে আপাতত, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী অনেকের মনেই তিনি বুঁজে দিতে পেরেছেন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
এমএইচবি/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।