ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

‘বনবাসে’ শচীনের ইতিহাসগড়া ডাবল সেঞ্চুরির ভেন্যু

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২৪
‘বনবাসে’ শচীনের ইতিহাসগড়া ডাবল সেঞ্চুরির ভেন্যু

সর্বকালের সেরা ফিল্ড হকি খেলোয়াড়ের ছোট তালিকাতেও থাকবে ধ্যানচাঁদের নাম। জাদুকর খ্যাত এই খেলোয়াড়ের ভাই ক্যাপ্টেন রুপ সিংও কম যাননি।

তিনিও কিংবদন্তি হিসেবে সমাদৃত। তাকে সম্মান জানাতেই গোয়ালিয়রের স্টেডিয়ামটির নামকরণ হয় তার নামে। তবে স্টেডিয়ামটির সঙ্গে চিরকাল জড়িয়ে থাকবেন ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার।

এই ভেন্যুতেই দেখা মিলেছিল ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির। সেটা আর কেউ নয়, বরং শচীনের ব্যাট থেকেই আসে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন ভারতীয় কিংবদন্তি। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এরপর আর এই ভেন্যুতে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি।  

ভেন্যুর অবস্থা অবশ্য আর আগের মতো নেই। জরাজীর্ণতার  ছাপ পড়তে পড়তে। মরিচা ধরে গেছে বড় স্কোরবোর্ডটিতে, তিন পায়ার ফ্লাডলাইটগুলোর অব্যবহৃত অনেকদিন, প্যাভিলিয়ন ধুলোয় মজ্জিত, স্ট্যান্ডগুলো ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তাই সমসপ্তভুজ আকৃতির মাঠ সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভালো। তবুও একজন কিংবদন্তির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার গর্ব আছে সেটির।

গোয়ালিয়রের সব ক্রিকেটীয় কার্যক্রম এখন শ্রিমান্ত মাধাভরাও শিন্দিয়া স্টেডিয়ামকে ঘিরেই। যেখানে আগামী রোববার বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলবে ভারত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি সেখানে গেলে মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের স্কোরার সুনীল গুপ্তা বলেন, ‘আপনি এখানে এসেছেন তো, এখানকার মাটি নিয়ে যান। কারণ ক্রিকেট ইশ্বর এখানে ইতিহাস লিখেছিলেন। ’ 

স্টেডিয়ামের রিসিপশনে টাঙানো শচীনের ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো সেই ম্যাচের স্কোরশিটটি প্রদর্শন করে ৫২ বছর বয়সী এই স্কোরার বলেন, ‘শচীন তখন ১৮৬ রানে ব্যাট করছিলেন। ৪৩ ওভারের পর হঠাৎই তিনি যখন ধীরে খেলা শুরু করেন, তখন আরেক পাশ থেকে বড় শট মারছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ৪৯তম ওভারে ধোনি একাই সবগুলো বল মোকাবিলা করেন এবং শেষ বলে সিঙ্গেল নেন। ’

‘আমি চিৎকার করে বলেছিলাম। একটি সিঙ্গেল তো তাকে (শচীন) নিতে দাও। কেবল সেদিনই আমি পক্ষপাতিত্ব করেছিলাম। শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন ধোনি এবং স্ট্যান্ডে থাকা সমর্থকরা তাতে কোনো উল্লাসই করছিল না। দ্বিতীয় বলে যখন সে সিঙ্গেল নিল, পুরো স্টেডিয়াম ফেটে পড়ল। তারপর ৫০তম ওভারের তৃতীয় বলে মাইলফলকে পৌঁছালেন শচীন। আমাদের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এসেছিল, সম্ভবত এখানেই আমি শেষবার কাঁদি। ’  

ভেন্যু তো বটেই গোয়ালিয়র শহরে এরপর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি। গত বছর ইরানি ট্রফি অনুষ্ঠিত হয়েছিল রুপ সিং স্টেডিয়ামে।

আবেগাপ্লুত হয়ে সুনীল গুপ্তা বলেন, ‘বনবাস কাটানোর পর ক্রিকেট আবারও ফিরছে এই শহরে। ’

নতুন স্টেডিয়াম যার নামে করা সেই শিন্দিয়ার বদৌলতেই আজ স্কোরার ভূমিকায় সুনীল। তাকে নোটবুকে কলম দিয়ে ওয়াগন হুইল আকতে দেখেছিলেন শিন্দিয়া।

সুনীল বলেন, ‘মাধভরাও শিন্দিয়া একজন ক্রিকেটপাগল মানুষ ছিলেন। ১৯৮৭ সালের শীতকালে আমি স্কুল পালিয়ে শুধু স্কোরগুলো লিখছিলাম এবং এর সঙ্গে ওয়াগন হুইলও আঁকছিলাম। এখানে (প্যাভিলিয়ন এন্ডে) বসেছিলাম আমি এবং শিন্দিয়া আউট হওয়ার পর আমার আঁকা দেখে বলল আমি কী করছি। তিনি কোন অঞ্চলে ঠিক কত রান করেছেন সেটাই আমি তাকে বলেছি এবং ড্রয়িংও দেখিয়েছি। তিনি আমাকে বললেন, আমি একজন দুর্দান্ত স্কোরার হব এবং এখন পর্যন্ত আমি ৭২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ কাভার করেছি। ’

স্মৃতিতে ভেসে গিয়ে দুটি মজার ঘটনা মনে করালেন সুনীল। একটি ছিল ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের এবং অন্যটি একই দলের মধ্যকার ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত একটি ওয়ানডের।

সুনীল বলেন, ‘১৯৯৬ সালে দ্বৈরথটি ছিল শচীন বনাম লারার। ম্যাচটি নিয়ে বেশ আগ্রহ ও উত্তেজনা ছিল। লারা অল্পতেই আউট হয়েছিলেন, শচীন করেন ফিফটি (৭০) এবং ভারত জিতেছিল। ফ্লাডলাইট লাগানো হয়েছিল স্টেডিয়ামে এবং ইনিংস বিরতিতে দিল্লির নাঠু সুইটস থেকে সমর্থকদের বিনামূল্যে ৩০ হাজার খাবার বিতরণ করেন। ’

রুপ সিং স্টেডিয়ামের পিচ বরাবরই ব্যাটারদের সহায়তা করে আসছে। ১৯৮৮ সালে সাবেক ক্যারিবিয়ান পেসার প্যাট্রিক প্যাটারসনের সেই ভয়ানক স্পেল কখনো ভুলতে পারবেন না সুনীল।  

‘ম্যানুয়াল স্কোরবোর্ডে আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলাম। আমি কখনোই কাউকে এতো গতিময় বোলিং করতে দেখিনি। প্যাটারসন দ্রুতই শ্রীকান্ত, অরুন লাল ও মহিন্দর অমরনাথকে সাজঘরে পাঠান। রকেটের মতো বোলিং করছিল সে। আমি আমার জীবনে কখনো এমন কিছু দেখিনি। সেটা ভয়ঙ্কর ছিল। ’

ক্যাপ্টেন রুপ সিং স্টেডিয়ামে এখনো ঘরোয়া ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২৫ বছরের লিজ আগামী বছর শেষ হতে যাচ্ছে। স্টেডিয়ামের ভেঙে পড়া অবকাঠামো ইঙ্গিত দিচ্ছে, এটি কেবল স্মৃতিময় জায়গা হয়ে থাকবে। তবে শচীনের সঙ্গে নিজের একটি ছবি দেখিয়ে সুনীল বলেন, ‘শচীনের ডাবল সেঞ্চুরি কেউই এই মাঠ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। ’


বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২৪
এএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।