ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রিকেট

এশিয়া কাপের প্রতিশোধ নিয়েছে টাইগাররা

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৪
এশিয়া কাপের প্রতিশোধ নিয়েছে টাইগাররা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: এশিয়া কাপে যে আফগানিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছিলো বাংলাদেশ, সেই আফগানদের উড়িয়ে দিয়ে বাংলার টাইগাররা নিজেদের প্রতিশোধ নিয়েছে। চিনিয়েছে তাদের জাতিকে বলে মন্তব্য করেছে উচ্ছ্বসিত দর্শকরা।



রোববার সন্ধ্যায় খেলা শেষে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কেবল একই জয়ধ্বনি- বাংলাদেশ, বাংলাদেশ। কেউবা আবার বাসার ছাদের ওপর ঢোল নিয়ে ব্যস্ত। উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয় মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকায়।


খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়ের মিছিলে যেন ভাসতে থাকে মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকা। একের পর এক বাংলাদেশ বাংলাদেশ প্রতিধ্বনিতে মিছিল বের হয়। সেই মিছিল কখনো ছিল দেশের পতাকাতলে, কখনো বা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে।

ধানমণ্ডির ইউল্যাবের ১৩ জন বন্ধু একসঙ্গে এসেছিলেন খেলা উপভোগ করতে। যাওয়ার সময় পুরো রাস্তা মিছিল করতে করতে যাবেন বলে জানান তাদের একজন রবিন।

তিনি বলেন, খেলার শুরু থেকেই মাঠে দাপটে ছিলেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা। পুরো খেলাটা উপভোগ করেছি। এর পর থেকে বাংলাদেশের খেলা থাকলে দেখবেন, টিকিট নিয়ে কি কাড়াকাড়ি শুরু হয়!

পাশ থেকে রবিনের বন্ধু ফয়সাল বলেন, আরে নানা শুধু ধানমণ্ডি পর্যন্ত হেঁটে যাবো কেন, জিগাতলা গিয়েই আমাদের মিছিল রাউন্ড দেবে।

রবিন, ফয়সালদের মতো উচ্ছ্বসিতভাবে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন প্রবীণ দর্শকরাও।   প্রশাসনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী হাসেন বলেন, বাংলাদেশ সচরাচর ভালো কম খেলে এটা ঠিক। কিন্তু যেদিন খেলে সেদিন বোঝা যায়, বাংলার সন্তানদের রক্ত কেমন গরম। খেলা দেখে আমি আমার যৌবনে ফিরে গিয়েছিলাম। এ ধরনের উন্মাদনা এক সময় আমাদের মধ্যেও ছিলো। কিন্তু তখন আমরা আনন্দ করতাম ফুটবল নিয়ে।

খেলা শেষে বের হয়ে আসার সময় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাফি বলেন, টাইগাররা জাত চিনিয়ে দিয়েছে। এবার বুঝল মজা।

এইভাবে বাংলাদেশ মাঠে নামলে যেকোনো দলই তাদের সামনে উড়ে যাবে বলে মনে করেন ব্যাংক কর্মকর্তা রিফাত হোসেন। বলেন, খেলায় বাংলাদেশ হারলেও কিছু এসে যায় না। কিন্তু আজ যেভাবে মাঠে তারা খেলেছেন সেভাবে যদি খেলে তাহলে কোনো দিনও কেউ দাঁড়াতে পারবে না বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের সঙ্গে। দরকার শুধু সাহসী আর আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া।

ঠিক এমন একটা খেলাই দেখতে চেয়েছিলেন ইডেন কলেজেন শিক্ষার্থী আশা রহমান। বলেন, অনেক দিন পর টাইগাররা এভাবে খেলল। মাঠে আসার আগে ঠিক এভাবেই খেলা দেখতে চেয়েছিলাম। আর তা হলোও বটে।

অন্যদিকে ভেঁপু বাজাতে বাজাতে বের হয় শিশু তানভীর। বাবার সঙ্গে খেলা দেখতে আসা তানভীর বলে, বাংলাদেশ জিতেছে, জিতেছে। না আর কথা বলার সময় নেই যেন তানভীরের। ভেঁপু বাজিয়ে যাচ্ছে তানভীর।

তানভীরের বাবা আক্তার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জিতেছে এতে খুব খুশি হয়েছি। আরো খুশি হয়েছি ছেলের আনন্দ দেখে। আর তা হয়েছেই খেলায় বাংলাদেশের জয়ের কারণে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সত্যি অনেক ধন্যবাদ।

বাংলার টাইগারদের আগের রূপে ফিরে আসার কারণে সব দর্শকই ছিলেন আনন্দিত। সাকিব-মাশরাফিরা ১৭ ওভারে গুটিয়ে দিয়েছে আফগানদের। অন্যদিকে ১২ ওভারে লক্ষ্যে পৌছে যায় মুশফিকের দল। এটা অনেক বড় সার্থকতা বলেও মনে করেন দর্শকরা।

জয়ের এ ধারা যাতে বজায় থাকে- সেটিও চান দর্শকরা। একমাত্র মেয়ে নিয়ে খেলা দেখতে আসা মোবারক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ আজ ভালো খেলেছে। বাচ্চাকে নিয়ে এসেছিলাম, খেলা দেখলাম। আসাটা সফল হয়েছে। আমরা চাই বাংলার বাঘেরা এমনিই খেলুক সারা বছর। এবারের টি-২০টির প্রতিটি ম্যাচ টাইগারদের একই রূপেই দেখতে চাই।

রোববার আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির উদ্বোধনী ম্যাচে ৯ উইকেটে আফগানিস্তানকে পরাজিত করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে মাশরাফি-মুর্তজার উইকেট নেওয়ার উল্লাস শেষ পর্যন্ত ছিল। সাকিব আল হাসান ও আব্দুর রাজ্জাকের ঘূর্ণিতে এক নিমিষেই গুটিয়ে যায় আফগানরা।

বিশ্ব আসরে সর্বনিম্ন রানে সব উইকেট হারানোর লজ্জা এদিন পায় আফগানিস্তান। ১৭ ওভারে ৭২ রানে গুটিয়ে যায় তারা। এর আগে গত দু’টি আসরে ৮০ রানের সর্বনিম্ন গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড ছিল তাদের। আর বাংলাদেশও প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিপক্ষকে এত কম রানে গুটিয়ে দেয়।

৭৩ রানে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং ক্রিজে নেমে এনামুল হকের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে জয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে এনামুলের সঙ্গী ছিলেন ম্যাচসেরা সাকিব। চার ওভার দুই বলের এ জুটিতে হার না মানা ৩৩ রান আসে। এনামুল ৩৩তম বলে তৃতীয় ছয় হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। চারটি চারের মারও রয়েছে তার ৪৪ রানের এই অপরাজিত ইনিংসে। সাকিব টিকে ছিলেন ১০ রানে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘন্টা, মার্চ ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।