ঢাকা: দীর্ঘ ২৩ বছর পর এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এগারোতম এ আসরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুগ্মভাবে আয়োজক হিসেবে আছে নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বকাপের পঞ্চম (১৯৯২) আসরেও যুগ্মভাবে আয়োজক ছিল প্রতিবেশী এই দেশ দুটি। সেই আসরে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই হট ফেভারিট ছিল আগের আসরের (১৯৮৭) চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সমর্থকদের হতাশ করে লিগ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় অ্যালেন বোর্ডারের দল।
তবে বিশ্বকাপের গত দশ আসরের মধ্যে চারবারই শিরোপা ঘরে তুলেছে প্রশান্ত মহাসাগর তীরের এই দেশটি। ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ আসরে শেষ হাসি হেসেছেন অজি অধিনায়কেরাই।
১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই অপ্রতিরোধ্য ছিল অজিরা। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং, মাইকেল বেভান, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস, গ্লেন ম্যাকগ্রাদের মতো ক্রিকেটাররা রাজত্ব করেছেন দীর্ঘ সময় ধরে।
কিন্তু ২০১১ বিশ্বকাপের পর থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে অজিদের সেই দাপট খুব একটা নেই। তবে এবারের টুর্নামেন্টটা হবে নিজ দেশের উঠোনে। তাই মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বে স্বাগতিকরাও শিরোপার অন্যতম দাবিদার এ কথা বললে খুব বেশি বলা হবে না। অন্যদিকে এই কথাও অনেকে বলছেন যে গত ১৫ বছরের মধ্যে অজিদের এই বিশ্বকাপ দলটি সবচেয়ে দুর্বল।
এদিকে কিছুদিন আগে সতীর্থ ফিলিপ হিউজ মারা গেছেন খেলার মাঠেই। তার জন্যে এবারের বিশ্বকাপ জিততে চায়বে অজিরা। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা যদিও পেশাদার, তবুও হিউজের মৃত্যুর পর পেশাদারিত্ব ছাপিয়ে ক্রিকেটারদের আবেগের খোলামেলা প্রকাশ দেখা গেছে। বিশ্বকাপের ট্রফিটি অজিরা হিউজের জন্যেই জিততে চায়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এবারের দশম আসরে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরেছে বাংলানিউজ।
অজিদের সম্ভাবনা: অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান স্কোয়াডের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো প্রায় প্রত্যেকে ব্যাট হাতে অবদান রাখতে সক্ষম। অজিদের ব্যাটিং গভীরতা যে কোনো দলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দলটি তুলনামূলকভাবে তরুণ হলেও শেন ওয়াটসন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মাইকেল ক্লার্কের সঙ্গে বোলিংয়ে মিচেল জনসন, জোস হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্কের মতো পারর্ফমার রয়েছে, যারা নিজেদের দিনে যে কোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারে।
অজিদের সমস্যা: নিজেদের দিনে যে কোনো দলকে হারানোর দক্ষতা থাকা সত্বেও অজিদেরও রয়েছে কিছু সমস্যা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বোলিংয়ের ক্ষেত্রে স্পিনে কোনো বৈচিত্র্য নেই। এছাড়া শেন ওয়াটসন, মিচেল জনসন ও মাইকেল ক্লার্কের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর দলটি। অন্যদিকে মাইকেল ক্লার্কের ইনজুরি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে যেকোনো সময়।
ওপেনিং নিয়ে দুঃশ্চিন্তা নেই: এবারে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বড় ভরসা দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ। ওয়ার্নার এ পর্যন্ত ৫৩ ম্যাচে করেছেন ১৬৯০ রান, গড় ৩৩.১৩। অন্যদিকে অ্যারন ফিঞ্চ ৪০ ম্যাচে করেছেন ৩৮.০৭ গড়ে ১৪৪৭ রান। সাম্প্রতিক ফর্মও বেশ ভালো তাদের। তাই টিম ম্যানেজম্যান্ট এই দুই ওপেনারের ওপর নির্ভর করতেই পারেন।
মিডল অর্ডারের কান্ডারি: বিশ্বকাপে কোনো কারণে টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে তা সামাল দিতে অজিদের খেলায় ফিরিয়ে আনতে কান্ডারির মতো ভূমিকা রাখতে পারেন মাইকেল ক্লার্ক, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও জর্জ বেইলি। তাই তাদের ওপরই নির্ভর করবে অজি মিডল অর্ডার। বিশেষ করে গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান যে কোনো বোলিং আক্রমনের বিপক্ষে কার্যকরী এক ব্যাটসম্যান।
অন্যদিকে মাইকেল ক্লার্ক ও জর্জ বেইলি দুজনেরই আছে দলের বিপদে লম্বা পার্টনারশিপ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা।
অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন: বিশ্বের প্রথম সারির অলরাউন্ডারদের মধ্যে শেন ওয়াটসন অন্যতম। দলের প্রয়োজনে ওয়ান ডাউন থেকে শুরু করে চার নম্বর পর্যন্ত যেকোনো পজিশনেই ব্যাট করতে সক্ষম তিনি। বোলিংয়েও মাইকেল ক্লার্কের অন্যতম ভরসার নাম হতে পারেন ওয়াটসন।
ফিনিশার স্টিভ স্মিথ: শেষ ১৫ ওভারে অস্ট্রেলিয়া যার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে তিনি হলেন স্টিভ স্মিথ। পাঁচ কিংবা ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাট করবেন এই ব্যাটসম্যান। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই তরুণ ক্রিকেটারের। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে টিম ম্যানেজম্যান্টের অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক স্মিথ।
বোলিং অ্যাটাক নির্ভর করছে মিচেল জনসনের উপর: অজিদের বোলিং আক্রমণে সবচেয়ে অভিজ্ঞ হলেন মিচেল জনসন। এছাড়া তার সঙ্গে থাকবেন জোস হ্যাজেলউড এবং মিচেল স্টার্ক।
তবে অজিদের স্পিন বোলিং একাই সামলাত হবে বাহাতি স্পিনার জেভিয়ার ডোহার্টিকে।
গ্রুপ প্রতিপক্ষ: ‘এ’ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপ প্রতিপক্ষ দলগুলো হলো- নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া দল: মাইকেল ক্লার্ক (অধিনায়ক), জর্জ বেইলি, শেন ওয়াটসন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, মিচেল জনসন, জেভিয়ার ডোহার্টি, জেমস ফকনার, জোস হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্ক, ব্র্যাড হাডিন (উইকেট কিপার) প্যাট্রিক কামিন্স।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫