ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে।। অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে।। অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে ছবি: সংগৃহীত

ভুল দেখলাম না তো! এরকম একটা প্রশ্ন নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কারণ  ‘বাঙালী বীর’ বরণের এমন আয়োজন বাংলায় ছাড়া কি সম্ভব! আর যে দলটাকে ঘিরে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে এই আয়োজন সেটা কি সত্যিই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে শেষ প্র্যাকটিস ম্যাচে যারা আয়ারল্যান্ড নামক দেশটার কাছে হেরেছিল। তারাই কি না বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এমন দাপট দেখাল! বোমা-গোলা-ড্রন নয়, ব্যাট আর বলে আফগানিস্তান নামক দলটাকে এভাবে গুড়িয়ে দিলো। অথচ বিশ্বকাপের আগে আফগানদের হুমিক-ধামকি কম শোনেনি বাংলাদেশ। কিন্তু পারফরম্যান্সের চেয়ে ভাল কি অস্ত্র-ই বা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে আফগানদের জবাব দেয়ার জন্য? হ্যাঁ, ব্যাট আর বলেই বাংলাদেশ জবাব দিল। সেই সঙ্গে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

প্রতিপক্ষ তুলনামুলক দুর্বল। কথাটা মাথায় রেখেও লিখতে হচ্ছে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের। কারণ, ম্যাচ শুরুর আগে শঙ্কার একটা চোরা স্রোত বইয়েই যাচ্ছিল বাংলাদেশ জুড়ে। আফগানদের কাছে আবার হারতে হবে না তো! না। হার নয়। হার শুব্দটাকে বাউন্ডারি লাইনের বাইওে উড়িয়ে মেরে বাংলাদেশ ক্যানবেরা থেকে উড়াল দিচ্ছে ব্রিসবেনে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। এবারের বিশ্বকাপে টপ ফেভারিটের তালিকার শীর্ষে যে দলটা, তার নামও অস্ট্রেলিয়া। তাদের মুখোমুখি হওয়ার আগে এরকম একটা জয় বাংলাদেশের জন্য ‘টনিক’  হিসেবে কাজ করবে। অন্তত এই বিশ্বাস নিয়ে ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে আমজনতা সবাই মাঠ ছাড়লেন।

লেখার শুরুটাই বিষ্ময় মেশানো জিজ্ঞাসা দিয়ে যা দেখলাম তা ঠিক দেখলামতো! আবারও সেই প্রশ্ন যা যা দেখলাম তা ঠিক তো। হ্যাঁ, সবই ঠিক। বাংলাদেশ জিতলো। কিন্তু জয়ের নায়ক কে? অফিসিয়াল স্কোর কার্ডে লেখা আছে, মুশফিকুর রহিম। কিন্তু আনঅফিসিয়ালি বোধহয় বলতে হবে; এই পারফরম্যান্সের পর দলের ভেতর নায়ক খোঁজা  ঠিক হচ্ছে না। গোটা দলইতো পারফরম্যান্স করলো।   কিন্তু এই ম্যাচের নায়ক বললে বলতে হবে অন্য একটা দলকে! হ্যাঁ, অন্য দল। যারা মাঠে ছিলেন। কিন্তু বাইশ গজের লড়াইয়ে ছিলেন না। তারা লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে গ্যালারিতে বসেছিলেন। ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!!’ -বলে গলা ফাটালেন। বাংলাদেশের সমর্থকারই এ ম্যাচে সেরা।

বাংলাদেশ দলটার আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল প্র্যাকটিস ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে হারার পর। সেই প্রশ্নটাও তারা উড়িয়ে দিলেন। বরং অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার রসদ তারা পেয়ে গেলেন এ ম্যাচে। যদিও বিশেষজ্ঞরা হয়তো বলবেন এবারের বিশ্বকাপে রানের ছড়াছড়ি হচ্ছে। সেখানে আফগানিস্তারের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংস আরো বড় হ্ওয়া উচিৎ ছিল। হয়তো তাই। কিন্তু হয়নি। তার কারণ, তামিম আর বিজয়ের সর্তকতার সংগে ইনিংসের শুরু। আবার ওটা না করেও কি পথ খোলা ছিল। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যদি আরো বড় বিপর্যয় আসতো তাহলে কাঠগড়ায় তাদেরই দাঁড়াতে হতো। সব থেকে বড় কথা। দলের জয়। সেই জয় নিয়ে যখন দল শুরু করেছে, তখন  পেছনের সব কিছুকে ভুলে যাওয়া ভাল। তবে এটাও ঠিক  পরের ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য বড় পরীক্ষা। কারণ, প্রতিপক্ষের নাম অস্ট্রেলিয়া। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সটা এমন না হয় যেন আবার বলতে হয়, এই কি সেই বাংলাদেশ, যাদের দেখেছিলাম ক্যানবেরায়!

শঙ্কিত হতে চাই না। কারণ, এই লেখার সময়ও যে স্টেডিয়ামের বাইরে হাজার কন্ঠে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শ্লোগান চলছে।

বাংলাদেশ সময় ২২৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।