‘চোক’ শব্দটাকে ক্রিকেট অভিধানে ‘জোক’ হিসেবে জায়গা দেয়ার সুযোগ নেই। এবং সেটা সাউথ আফ্রিকানদের সৌজন্যে।
কিন্তু সাউথ আফ্রিকার সমস্যাটা কোথায়? টেকনিক্যাল নাকি মানসিক? অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল যেমন বিশ্বাস করেন, আফ্রিকানদের সমস্যা স্নায়ুর নয়। ট্যাকটিক্যাল। ইয়ানের বিশ্বাসকে উড়িয়ে দেবেন কিভাবে? ’৯৯ এর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এজবাস্টনে যা ঘটেছিল তা প্রেসবক্সে বসে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তার আগে একের পর এক অতিমানবীয় ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছিলেন সেই বিশ্বকাপে ল্যান্স ক্লুসনার। বিশ্বকাপের সেরা প্লেয়ারও হয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালেও অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় ছিটকে দিতে চলেছিলেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু ডোনাল্ডের রান আউটে সাউথ আফ্রিকাই ছিটকে গিয়েছিল সেই বিশ্বকাপ থেকে। টাই ম্যাচে ফাইনালে চলে গেলো অস্ট্রেলিয়া। এবং স্টিভ ওয়াহ’র অস্ট্রেলিয়া কাপ জিতেই দেশে ফিরেছিল। ডোনাল্ড যেভাবে রান আউট হয়েছিলেন সেটা নার্ভের কারণে, তা বিশ্বাস করার কোন কারন নেই। বরং বলতে হবে ক্রিকেটের প্রাথমিক পাঠ মনে হয় সে সময় তিনি ভুলে গিয়েছিলেন! যে সময় তিনি উইকেটে এসেছিলেন তখন দারুনভাবে উইকেটে সেট ছিলেন ক্লুসনার। বল বাউন্ডারিতে পাঠাতেও কোন সমস্যা হচ্ছিলো না তার। ইনিংসের গোটা দুয়েক বলও ছিল। কিন্তু সেই মুর্হুতে নিজেদের করণীয় কি সেটা ঠিক করতে পারেননি তারা। উইকেটের মাঝখানে এসে দু ব্যাটসম্যানের কথা বলা ট্যাকটিকসের অংশ। নিজেদেও পরিকল্পনাটা শেয়ার করা জরুরি ছিল। কিন্তু ক্লুসনার এবং ডোনাল্ড সেটা করেননি। যে কারণে অহেতুক রান আউট হয়েছিলেন ডোনাল্ড! এরপর নিজেদের মাঠে ২০০৩ এ যেভাবে নক আউট পর্বের আগেই ছিটকে গিয়েছিল তারা সেটা ছিল আরো হাস্যকর। শ্রীলংকার বিপক্ষে বৃষ্টির কারণে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে। কিন্তু সে সময়ে, হিসাবেই গন্ডগোল করে ফেললেন শন পোলকের দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলাফল নিজের মাঠে নক আউট পর্বও খেলতে পারলো না সাউথ আফ্রিকা! কি বলবেন একে, স্নায়ুর চাপ নিতে না পারা নাকি ট্যাকটিক্যাল ভুল।
সাউথ আফ্রিকার কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো অবশ্য ঐসব মানসিক চাপটাপের কথা মানতে নারাজ। তিনি বিশ্বাস করেন, ক্রিকেটারদের স্কিল থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কোন কঠিন কাজ নয়। যে কারণে দশ জনের বেশি কোচিং স্টাফ নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে আসা সাউথ আফ্রিকান দলে কোন মনোবিদ রাখা হয়নি। যার কাছ থেকে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন সেই গ্যারি কারষ্টেন অবশ্য মনোবিদ তত্ত্বে বিশ্বাসী। গত বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন ভারতীয় দলের কোচ। আর তার সাথে ছিলেন সাউথ আফ্রিকান মনোবিদ আপটন। রাসেল দায়িত্ব নিয়ে দল থেকে ছেটে ফেলেছেন সেই মনোবিদকে। তিনি কি ছেঁটে ফেলতে পারবেন সাউথ আফ্রিকানদের গা থেকে ‘চোকার ’ শব্দটাকে। মনোবিদের সাহায্য ছাড়া সব চেষ্টাই তিনি করছেন। দলের ক্রিকেটারদের প্রায় সমান সংখ্যক যার কোচিং স্টাফ সেই ভদ্রলোক বিশ্বকাপের জন্য দলের ব্যাটিং কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান মাইক হাসিকে। সঙ্গে গ্যারি কারস্টেন! চালর্স ল্যাঙ্গাভেল্টকে সংগে এনেছেন ‘ডেথ ওভার’ বোলিং কোচ হিসেবে। আবার তার বোলিং কোচের নাম অ্যালেন ডোনাল্ড! ডোনাল্ডের চেয়ে ভাল ডেথ বোলিং বোলার ক’জন ছিলেন তার সময়ে! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে রাসেল কি এবার ‘পাওয়ার প্লে’ ব্যাটিং কোচ হিসেবেও কাউকে নিয়োগ দেবেন? সব মিলিয়ে সাউথ আফ্রিকান দলের কোচিং স্টাফদের নাম আর পদবী দেখে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হচ্ছে, আসলে কার কি কাজ! দলের চৌদ্দ-পনের জন ক্রিকেটারের জন্য চৌদ্দ পনের জন কোচ নিয়োগ দিতে না হয় আগামীতে! তবে এই প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত যদি সফল হন রাসেল তাহলে বলতেই হবে, সাউথ আফ্রিকানদের কোন মনোবিদের দরকার ছিল না। সমস্যা ছিল টেকনিক এবং ট্যাকটিকস-এ। কিন্তু সেটাই বা বলবেন আপনি কিভাবে? আইসিসি র্যাংকিং-এ বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স আর এক নম্বর ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন যে দলে আছেন সেই দলটার টেকনিক্যাল সমস্যা-ই বা কি থাকতে পারে?
কিন্তু তারপরও কেন তারা চোকার? তার ব্যাখ্যা যে যার মতো করেই দিচ্ছেন। তবে অপবাদ ঘোচাতে হলে সাউথ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপটা জিততে হবে। অস্ট্রেলিয়ানরা কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে কাপ জিতে নেবে সাউথ আফ্রিকানরা! তাদের সেই বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণ করার দায়িত্ব এখন এবিডি এবং তার দলের।
বাংলাদেশ সময় ১৫১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫