ঢাকা: দিনটা হতে পারতো মাশরাফি বিন মর্তুজা বাহিনীর। কিন্তু বোলিং, ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও সর্বৈব ব্যর্থতায় দিন শেষে আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো তার দলকে।
শ্রীলংকার বিপক্ষে পুল এ’র নিজেদের তৃতীয় খেলায় টসে হেরে যাওয়ার পর মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) ব্যাটিং স্বর্গে আগে ফিল্ডিং করার চ্যালেঞ্জটা বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। ইনিংসের প্রথম ওভারেরর চতুর্থ বলেই লংকান ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নেকে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছিলেন। কিন্তু এনামুল হক বিজয় ফেলে দেন লোপ্পা ক্যাচটি।
পুরো ম্যাচেই সেই আফসোস আর আক্ষেপ থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। হেরেছে ৯২ রানে। শ্রীলংকা আগে ব্যাট করে এক উইকেটে ৩৩২ রান জমা করে স্কোর বোর্ডে। ৩৩৩ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪৭ ওভারে ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় টাইগার বাহিনী।
থিরামান্নের ক্যাচ ছেড়ে সেই যে শুরু হলো, পুরো ম্যাচজুড়েই আক্ষেপ এবং আফসোসের যন্ত্রণায় পুড়েছে পুরো দল। থিরামান্নে শুধুই কি ক্যাচ দিয়েছেন, সাব্বিরের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ দিলেও মুশফিকুর রহিম তা কাজে লাগাতে পারেননি। ফের বেঁচে যান এই ওপেনার। বাংলাদেশি ফিল্ডারদের দিলখোলা কাণ্ডের সুযোগ নিয়ে লংকান ওপেনার খেলেন ৫২ রানের ইনিংস। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো রুবেল হোসেনের বলে তাসকিনের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে তিলকারত্নে দিলশানের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ১২২ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলের বড় সংগ্রহের শক্ত ভিত গড়ে যান তিনি।
এরপর কুমারা সাঙ্গাকারা আর দিলশান মিলে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে যা করলেন সেটাকে ছেলেখেলা বলাও সম্ভবত বেশি হবে না। দ্বিতীয় উইকেটে ২১০ রানের পার্টনারশিপ গড়লেন তারা। খুনে মেজাজে দিলশান ১৪৬ বলে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ১৬১ রানের ইনিংস।
লংকান ব্যাটিং লিজেন্ড সাঙ্গাকারাও নিজের ৪০০তম ওয়ানডেকে স্মরণীয় করে রাখলেন। অবশ্য সেজন্য তিনি ধন্যবাদ দিতে পারেন তাসকিন এবং মুমিনুলকে। দু’জনেই তার ক্যাচ ছেড়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনিও ৭৬ বলে ১০৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললে লংকানরা ৩৩২ রানের বড় পুঁজি পায়।
লক্ষ্যটা অনেক বড় বটে। কিন্তু মেলবোর্নের ব্যাটিং উইকেট দেখে বিশ্লেষকরা বলছিলেন, এই রান তাড়া করেও জেতা সম্ভব। তবে, ফিল্ডিং-বোলিংয়ের মতো এদিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও দেখিয়েছেন ষোলকলা ব্যর্থতা।
রানের গতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও প্রায় সব ব্যাটসম্যান কীসের যেন তাড়া থেকে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন, রান আউট হয়েছেন, স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদেও পা দিয়েছেন।
লাসিথ মালিঙ্গার প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই বোল্ড হয়ে দলকে খাদের কিনারে ফেলে যান ওপেনার তামিম ইকবাল। অবশ্য, ওয়ানডাউনে নামা সৌম্য সরকারের কাউন্টার অ্যাটাক স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে সমর্থকেদের। পরে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিতে গিয়ে সাঙ্গাকারার হাতে ক্যাচ দিলে তার ১৫ বলে ২৫ রানের সম্ভাবনাময় ইনিংসটির অপমৃত্যু হয়। এরপর মুমিনুল হক যখন ঠিক একইভাবে আউট হন, তখন বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় তিন উইকেটে ৪১ রান।
ব্যর্থতার জন্য বেশি কাঠগড়ায় দাঁড়াতে পারেন এনামুল হক বিজয়। লংকান ব্যাটসম্যানদের তিনি সুযোগ দিয়েছিলেন, তারা সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। জবাবে লংকান ফিল্ডাররাও তাকে সুযোগ দিয়েছিলেন। দু’টো সহজ ক্যাচ এবং দু‘টো রান আউট থেকে বেঁচে যান বিজয়। কিন্তু এরপরও তিনি ২৯ রানের বেশি করতে পারেননি। এই ওপেনার যখন রান আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন দলের স্কোর চার উইকেট খুইয়ে ৮৪ রান। এর কিছুক্ষণ পর ২৮ রান করে পেরেরার বলে হেরাথের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তখনও ইনিংসের বাকি ১৮২ বল।
শেষ ২০ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৮৮ রান। টি-টোয়েন্টির ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ের যুগে অসম্ভব কোনো সমীকরণ মনে করা হচ্ছিল না সেটিও। কিন্তু উইকেট যে অনেক বেশি ঝরে গেছে স্কোরবোর্ড থেকে।
সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ৬৪ রানের আশা জাগানিয়া পার্টনারশিপের পর ইনিংসের ৩৫তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১৭৬। এই সময় লংকানদের সংগ্রহ ছিল ১৭৫। কিন্তু উইকেটের দিকে তাকিয়ে ঘাড় নোয়াতে হয়েছে টাইগারদের। কারণ এই সময়ে লংকানদের এক উইকেটের বিপরীতে মাশরাফির দলের উইকেট খোয়া গেছে ছয়টি।
শেষ পর্যন্ত অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে সাব্বির রহমানের ক্যারিয়ারের প্রথম ও রেকর্ড গড়া অর্ধশতক ও তার আগে সাকিব আল হাসানের ৪৬ এবং মুশফিকুর রহিমের করা ৩৬ রানের ওপর ভর করে কেবলই পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ।
এই ম্যাচে জয়ের ফলে পুল এ’র পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় স্থান থেকে এক ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। শ্রীলংকা উঠে গেছে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। তাদের পরে আছে অস্ট্রেলিয়া। আর শীর্ষে আছে দুরন্ত নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫
** বিশ্বকাপে প্রথম পরাজয় টাইগারদের
** পারলেন না মুশফিকও
** আশা জাগিয়ে সাকিবের বিদায়
** টাইগারদের ব্যাটিং বিপর্যয়
** রান আউটে কাটা বিজয়-রিয়াদ জুটি
** বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার চেষ্টা টাইগারদের
** তামিম, সৌম্যর পর ফিরলেন মমিনুলও
** ব্যাটিংয়ে নেমেই বিদায় তামিমের
** টাইগারদের সামনে ৩৩৩ রানের টার্গেট
** তিন অংকের ঘরে দিলশান
** বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত লংকান বাহিনীর
** উইকেটের অপেক্ষায় টাইগাররা
** রুবেল এনে দিলেন কাঙ্ক্ষিত ব্রেক-থ্রু
** রান বাড়ছে লংকানদের
** দারুণ বোলিং করছেন মাশরাফি
** মাশরাফির গোলায় বিপাকে থিরামান্নে
** লংকা বধে বোলিংয়ে মাশরাফি বাহিনী
** টসে হেরে বোলিংয়ে টাইগাররা
** লংকান বাধা পেরোতে প্রত্যয়ী টাইগাররা