ক্যারিয়ারের ৪০০ তম ওয়ানডে ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে এর চেয়ে ভালো মঞ্চ আর উপলক্ষ কি হতে পারতো তার জন্য? এর চেয়ে ভালোভাবে আর কিভাবে উদযাপন করতে পারতেন তিনি এই ম্যাচটাকে?
ক্যারিয়ারের ৪০০ তম ম্যাচ। সেটা অবার বিশ্বকাপে, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।
ক্যারিয়ারের এই ম্যাচটা সাঙ্গাকারা চাইলেই কি খুব তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবেন? না, পারবেন না। কিন্তু বাংলাদেশ খুব তাড়াতাড়ি এই ম্যাচটা ভুলে যেতে চাইবে। কারণ সাঙ্গাকারার সেঞ্চুরির পেছনে তাদের ফিল্ডারারও ভাল অবদান রেখেছেন। ২৩ আর ৬০ রানে দু’দুবার ‘লাইফ’ পেলে সাঙ্গাকারার মতো ব্যাটসম্যান যা করার তাই করলেন।
কিন্তু স্কোর কার্ডে কি লেখা থাকবে তাসকিন আর মুমিনুলের সৌজন্যে সেঞ্চুরি সাঙ্গাকারার। মোটেও না। বরং সবাই মনে রাখবে তার ৪০০ তম ম্যাচের সেঞ্চুরিকে। আর এই সেঞ্চুরির বন্দনা শুরু হয়েছে। কারণ সেঞ্চুরি সব সময়ই সেঞ্চুরি।
তাই সাঙ্গাকারার ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরিটাকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। বরং এমসিজির বিশ্বকাপ এবং তার ৪০০ তম ম্যাচের কারণে সেটা বাড়তি মর্যাদা পাচ্ছে। প্রশংসা আদায় করে নিচ্ছে সাবেক বড় বড় তারকাদের কাছ থেকেও।
‘ব্রিলিয়ান্ট নক’। বললেন সাঙ্গাকারাদের সাবেক কোচ টম মুডি। আর বলবেন না কেন? লাইফ-টাইফ তো ক্যারিয়ারে অনেকেই পেয়েছেন, পাচ্ছেন, আগামীতেও পাবেন।
কিন্তু চারশো তম ম্যাচ খেলার সুযোগ ক’জনের হয়েছে। আর ক’জনই বা সেই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন। কুমার সাঙ্গাকারা করে দেখালেন। তাও এমসিজিতে এবং বিশ্বকাপ ম্যাচে। হোক প্রতিপক্ষের নাম বাংলাদেশ।
‘কুমার তাঁর গ্রেটনেস আগেই প্রমাণ করেছেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসেও সে প্রমাণ করে যাচ্ছেন। এখনও রানের খিদে তাঁর মধ্যে প্রবল। ক্রিকেটবিশ্ব নিশ্চয়ই ওকে মনে রাখবে একজন বড় ব্যাটসম্যান হিসেবে। একজন ভাল মানুষ হিসেবে। আমার সুযোগ হয়েছে ওর সঙ্গে কাজ করার। কাছ থেকে দেখার। আমি সাঙ্গাকারায় মুগ্ধ অনেক কারণে। আমার মনে হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপেও আরও কিছু করে দেখাতে পারবে ও । এমসিজির মিডিয়া বক্সে বসে এসব কথা বলছিলেন টম মুডি।
যেহেতু টম মুডি সাঙ্গাকারার এক সময়ের কোচ ছিলেন। সুতরাং তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন সাঙ্গকারাকে। আর তার সাবেক টিমমেট রাসেল আরনল্ড যিনি সাঙ্গাকারাকে বাইশ গজের অন্য প্রান্ত থেকেও দেখেছেন।
সেই রাসেল ছিলেন ধারাভাষ্যে সাঙ্গাকারা যখন তিন অঙ্কের ফিগারে পৌঁছালেন। মধ্য বিরতিতে তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম সাঙ্গাকারার ইনিংস সম্পর্কে।
রাসেল খুব ছোট্ট একটা শব্দ উচ্চারণ করলেন,‘সুপার’।
হ্যাঁ, ‘সুপার’ তো বলতেই হবে। লাইফ-টাইফের কথা ভুলে গেলে দিন শেষে আপনাকে মনে রাখতে হবে সেঞ্চুরিটাকেই। সেটা তিনি করেছেন এবং সেটা স্যার ডনের দেশে।
এর আগে সেখানে তার কোনো সেঞ্চুরি ছিল না। তার এই স্মরণীয় ম্যাচে এই স্মরণীয় পারফরম্যান্স সাবেক টিমমেটের মুখ থেকে ‘সুপার’ শব্দটা আদায় করে নিলো।
সাঙ্গাকারার ওই ইনিংস সম্পর্কে ‘গ্রেট’ হিসেবে বর্ণনা করলেন ডিন জোন্স।
‘বড় ক্রিকেটাররা বড় অকেশনকে বেছে নেন কিছু একটা করে দেখানোর জন্য। সাঙ্গাকারাও তাই করলো। বিশ্বকাপের ম্যাচতো শুধু নয়, এটা ওর চারশো তম ম্যাচও। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওর তেমন বড় ইনিংস ছিল না। তাই হয়তো এই ম্যাচটিকেই বেছে নেয় বড় কিছু করার জন্য। এবং সেটা করেও দেখালো। ৩৭ বছর বয়সে এসে সে এরকম একটা ইনিংস খেললো। এখনও প্রচুর ক্রিকেট অবশিষ্ট আছে তার মধ্যে সেই ইঙ্গিতটাও দিয়ে দিলো। যতদূর জানি, বিশ্বকাপেই শেষ হচ্ছে ওর ওয়ানডে ক্যারিয়ার। সেখানে ভালো কিছু করে দেখাতে চাইবে এটা খুব স্বাভাবিক। গ্রেটরা এরকমই হয়। ’ এ মন্তব্য ডিন জোন্সের।
‘ব্রিলিয়ান্ট-সুপার-গ্রেট। ’ যে শব্দ দিয়েই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, কুমার সাঙ্গাকারার ইনিংসকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও এই ইনিংসের কথা উঠলে দু’একটা শব্দ নিশ্চয়ই উচ্চারণ করবেন। ‘ইস.! ওরকম ক্যাচ যদি না ড্রপ করতাম!’ কিন্তু তারপরও কুমার সাঙ্গাকারা গ্রেটের তালিকায়ই থাকবেন। এই একটা ইনিংস হয়তো তাকে অমরত্ব এনে দেবে না। তিনি যে অন্য জাতের ব্যাটসম্যান সেটাই সাক্ষ্য দেবে তার অবিস্মরণী সব পারফরমেন্স।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫