অকল্যান্ড থেকে: ‘ডেথ ওভার’ কথাটা প্রায়ই শোনা যায় ওয়ানডে ক্রিকেটে। বিশ্বকাপ কি তার ব্যতিক্রম! মনে হয় না।
ভুল! একটু ভুল বলা হচ্ছে। ডেথ ওভার বলেও একটা জিনিস থাকছে। সব ম্যাচে কি আর ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখাতে পারছেন? যদি তাই পারতেন তাহলে অস্ট্রেলিয়ার মতো ব্যাটিং লাইন আপ কেন ১৫১ রানে গুটিয়ে যাবে! আবার তার জবাবে নিউজিল্যান্ড কেন ১৫২ রান তুলতে ৯ উইকেট হারাবে! ইংল্যান্ডতো ডেথ ওভারে বাংলাদেশকেই খেলতে পারলো না। শ্রীলংকাও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭ তম ওভারে এসে ২৩৩ রানে গুটয়ে গেল! তবে এর বেশিরভাগ ঘটেছে নিউজিল্যান্ডে। যেখানে বোলারার মনে হচ্ছে একটু বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারছেন উইকেট থেকে। তবে শুধু কি নিউজিল্যান্ডের বোলাররা স্বাগতিক হিসেবে একটু বাড়তি ফায়দা লুটছেন এখানকার উইকেট থেকে?
না। নিউজিল্যান্ডের মূল স্ট্রাইক বোলার টিম সাউদি কিন্তু পরিষ্কার বলে দিলেন ;‘‘আমরা ডেথ ওভার বলে কিছু ভাবছি না। দলের যখন প্রয়োজন তখনই উইকেট নেয়ার কথা ভাবি। যখন রান আটকানোর কাজ করতে হবে তখন তা-ই করি। সেটা যে উইকেটই হোক না কেন। সেখানে বল সুইং করুক বা নাই করুক। তাছাড়া যখন বল সুইং করবে না তখন তো আপনাকে অন্য পথ খুঁজে নিতে হবে। আমরা সেটা করতে পারছি বলেই সফল। ’
টিম সাউদির কথাটাকে উড়িয়ে দেবারও কারণ নেই। যদিও অন্যরা একটু অন্য কথাও বলছেন। অন্যদের কথা হচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের বাইরে এসে কাজটা সহজ হবে না কিউই বোলারদের জন্য। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণও টেনে আনছেন তারা। ডেথ ওভারে নিউজিল্যান্ড বোলারার তেমন পরীক্ষার মুখে পড়লেনইবা কোথায়? আর ইনিংসের শেষ দশ ওভার বলই বা করতে হলো কোথায় তাদের?
হ্যাঁ, পরিসংখ্যানও কিন্তু সেই কথাই বলছে। একমাত্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কিছুটা ছাড়া ডেথ ওভারে কিউইদের বল করার দরকার পড়েনি। এবি ডি ভিলিয়ার্স, মহেন্দ্র সিং ধোনি যারা শেষ ওভারগুলোতে রান তোলার মাস্টার তাদের মুখোমুখি এখনো হতে হয়নি নিউজিল্যান্ড বোলারদের। হলে কি হবে সেটা পরের ব্যাপার। টিম সৌদির পাল্টা যুক্তি ‘আমরা জানি ওদের কিভাবে আটকাতে হবে। ’ তবে তাদের হয়ে একটা ম্যাচ কিন্তু কথা বলছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইডেন পার্কের ম্যাচ।
সেখানে ডেথ ওভাবের বিপজ্জনক আর এক ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যিনি তিনশ আশি ব্যাট ঘুরিয়ে বোলারকে মাঠের বাইরে ফেলতে পারেন। এবং প্রায়ই কাজটা করছেন তাকে কিন্তু আটকে দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড বোলাররা। অবশ্য সেখানে ডেথ ওভার আসার অনেক আগেই ‘ডেড’ হয়ে গিয়েছিল অজিদের ইনিংস। তাই অনেক আগেই ব্যাট-হাতে আসতে হয়েছিল ম্যাক্সওয়েলকে। আবার সেই ইডেন পার্কে পাকিস্তানের বোলাররা কিন্তু সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে দেখিয়েছিলেন ডেথ ওভারের বোলিংটা কেমন হওয়া উচিৎ। আর সেই পাকিস্তানেরই ড্রেসিংরুমে কোচ হিসেবে এমন একজন লোক বসেছিলেন যাকে তার সময়ের সেরা ‘ডেথ ওভার বোলার’ বললে খুব বাড়িয়ে কিছু বলা হবে না। ওয়াকার ইউনিস। ইন সুয়িং ইয়র্কারকে এখনো যিনি মনে করেন সেরা ডেথ ওভারের সেরা ডেলিভারি।
তবে যে ডেথ ওভার বোলিং নিয়ে এতো কথা, সেরকম পরিস্থিতিতে কিন্তু নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরাও পড়েননি। পড়লে কি হয় সেটা দেখার বিষয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে ডেথ ওভার খেলতে হলে রুবেল-তাসকিনের মতো তরুণ গতিমান বোলারদেও মুখোমুখি হতে হবে তাদের। অনেকে বলতে পারেন, যারা অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ক, জনসন, কামিন্সদের খেলে ফেললেন তাদের আবার অতো ভাবতে হবে কেন বাংলাদেশকে নিয়ে। সেই লোকগুলোর জন্য একটা কথাই বলার আছে: ইংল্যান্ড কিন্তু ডেথ ওভারে বাংলাদেশ বোলারদের জবাব দিতে ভুলেই গিয়েছিল। শুধু কি ব্রড আর অ্যান্ডারসন! না। ইয়ান বেল আর ইয়ান মর্গানও কিন্তু রুবেলের বল খেলতে পারেননি!
আসলে ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন সব নিয়মই ব্যাটসম্যানদের জন্য। খেলাটা ব্যাটসম্যানদের হয়ে গেছে। ব্যাট বড় হচ্ছে। মাঠ ছোট হচ্ছে। সুইপার হিসেবে ত্রিশগজী বৃত্তের বাইরে চারজনের বেশি ফিল্ডার রাখা যাচ্ছে না। এসব কিছু মিলিয়ে ডেথ ওভারের আগেই বোলারদের অঘোষিত মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি ম্যাচে।
দেখা যাক বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে সেডন পার্ক বোলার না ব্যাটসম্যান কাদের হয়ে কথা বলে। নাকি এ ম্যাচেও ডেথ ওভার বলে কিছু দেখা যাবে না!
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৫
** ক্লাস অব জিরো এইট! || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অ্যাডিলেডে শরতের রংও যেন লাল-সবুজ | অঘোর মন্ডল, অ্যাডিলেড থেকে