কথাটা বার বার বলা হয়েছে, ফাইনালের আগে ফাইনাল! তারপরও বলতে হচ্ছে, ফাইনালের আগে ফাইনাল। যদিও ম্যাচটার গায়ে লেখা থাকবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল।
তবে সিডনিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া যে ম্যাচটা হলো, তাকে নিছক একটা সেমিফাইনাল ভাবারও কারণ নেই! এ ম্যাচ ২০০৩ সালের জোহানেসবার্গ ফাইনালের কথা কি মনে করিয়ে দিলো না? মনে না পড়লে ফ্ল্যাশব্যাকের মতো করে একটু দেখে নিন। অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। সেদিন যিনি ভারতের অধিনায়ক ছিলেন, এ ম্যাচে তিনি কমেন্ট্রি বক্সে। সৌরভ গাঙ্গুলি কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে বলেছিলেন, টস বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। সেই টস মাইকেল ক্লার্কই জিতলেন এবং প্রত্যাশিতভাবেই আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপর যা করার তাই করলো অস্ট্রেলিয়া। বড় একটা স্কোর দাঁড় করালো। বার বছর আগে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৩৫৯ রান। এ ম্যাচে তারা করলো ৩২৮ রান। শুধু রিকি পন্টিংয়ের ইনিংসটা ক্লার্কের পরিবর্তে খেললেন স্টিভ স্মিথ। পন্টিঙের ১৪০ এর জায়গায় স্মিথ খেললেন ১০৫ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার ৩৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের ইনিংস শেষ হয়ে গিয়েছিল ২৩৪ রানে। এ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৩২৮ রানের জবাবে ভারত থামে ২৩৩-এ। রান তাড়া করে ম্যাচ জেতানোর রেকর্ড যতোই থাকুক এম এস ধোনির, সেটা শুধু পরিসংখ্যানের খাতাতেই থাকলো মাইকেল ক্লার্কের মাঠে। যদিও যতক্ষণ ধোনি উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ মিট মিট করে ভারতীয়দের আশার একটা সলতে জ্বলছিলো। তার রান আউটে এসসিজির গ্যালারি ফাঁকা হতে আর বেশি সময় লাগেনি। দর্শকদেরও দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারাও জেনে গিয়েছিলেন, ম্যাচ শেষ।
আসলে ম্যাচ শেষ আরও একটু আগে। শচীন টেন্ডুলকার আউট হওয়ার পর জোহানেসবার্গের দর্শকদের বুঝতে বাকি ছিল না, ম্যাচ জেতা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। সিডনিতেও প্রায় তাই। ১৩ বল খেলে বিরাট কোহলি যখন ১ রানে আউট হলেন, ম্যাচ তখনই ভারতের হাত ফসকে গেছে। গ্যালারির দর্শকদের বুঝতে একটু দেরি হলেও, এসসিজির ডেসিংরুমের উপরে বসা এক ভারতীয়র বুঝতে দেরি হয়নি। টেলিভিশন ক্যামেরা যখন তার মুখের ক্লোজ শট ধরছিলো, তখন আনুশকা শর্মার অভিব্যক্তি পড়তে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বিরাট কোহলির সঙ্গে তার সম্পর্কটা যতোই মধুর হোক না কেন, মিচেল জনসন তাকে ওভাবে খাদ্য বানিয়ে ফেলবেন, তা অনেকের ধারণা ছিল না। এমনকি ব্রায়ান লারাও না। ম্যাচের আগের দিন তিনিও বলেছিলেন, বিরাটই হতে পারেন এ ম্যাচের কি প্লেয়ার। কিন্তু আসলে বিরাটের যেটা করার কথা, সেটা করলেন স্টিভ স্মিথ। ৮৯ বলে সেঞ্চুরি করলেন তিনি ওয়ান ডাউনে নেমে। বিশ্বকাপে স্মিথের প্রথম সেঞ্চুরিটা থেমে যায় ১০৫ রানে।
কিন্তু ম্যাচের ‘কি প্লেয়ার’ যিনি সেই মিচেল জনসন কিন্তু মনে করিয়ে দিলেন ২৩ বছর আগে এক বাহাতি পাকিস্তানির কথা। মনে করিয়ে দিলেন, ৯২ এর ফাইনালকে। ইংল্যান্ড যখন পাকিস্তানের রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখছিল, সেই সময় ওয়াসিম আকরামের একটা ওভারের দু’টো বল শেষ করে দেয় সেই স্বপ্ন। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া অ্যালেন ল্যাম্ব আর ক্রিস লুইসকে বোল্ড করে ইমরান খানের হাতে কাপ এনে দেন তিনি। সেই মেলবোর্নে মাইকেল ক্লার্কের হাতে এবার কাপ উঠবে কিনা পরের ব্যাপার। তবে ভারতের কাপ জয়ের স্বপ্নে কফিনে সবচেয়ে বড় দু’টো পেরেক ঠুকে দেন অস্ট্রেলিয়ার বাহাতি ফাস্ট বোলার মিচেল জনসন। বিরাট কোহলি আর উইকেটে সেট হয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যিনি, সেই রোহিত শর্মার উইকেট দু’টো নিয়ে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন তিনি। যদিও জেমস ফকনারের নামের পাশে ৫৯ রানে ৩ উইকেট। তবে জনসন ওয়াসিম আকরামের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ব্যাট হাতেও। মাত্র ৯ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসটা ৭ উইকেটে ৩০০ রানের গন্ডি পেরুলো, সেখানে এ বাহাতির অবদানকে মনে রাখতেই হবে। যেমন তিনি মনে করিয়ে দিলেন, ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালেই এমসিজির এক ফাইনালের ওয়াসিম আকরামের কথা। তাহলে এ ম্যাচটাকে ফাইনালের আগে ফাইনাল বলায় খুব দোষের কিছু ছিল কি!
তবে মিচেল জনসনের কথা মনে রাখলেও ভুলে থাকবেন কিভাবে স্টিভ স্মিথের ইনিংসটাকে। ম্যাচের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তিনি। শুধু কী সেঞ্চুরি! আসলে ম্যাচের মোড় ঘোরানো ইনিংস। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটাও তাই স্মিথের হাতেই উঠলো। যেটা ২০০৩ এর ফাইনালে উঠেছিল ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নামা রিকি পন্টিংয়ের হাতে। এতো কিছুর পর মনে হচ্ছে, ওটাই ঠিক, সিডনির ম্যাচটা আসলে ফাইনালের আগে ফাইনাল! আর বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশনে ফাইনালে পা রাখা দূরে থাক, সেমিফাইনালের হার্ডলটাও পেরুতে পারলো না ধোনির ভারত।
হ্যাঁ, এমসিজিতে ২৯ মার্চের ফাইনালে সেরা দু’টো দলই খেলতে নামবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলো না আর। সুতরাং অস্ট্রেলিয়া ফাইনালের আগে ভারতের বিপক্ষে আসলে ফাইনালের একটা মহড়া দিয়ে রাখলো।
বাংলাদেশ সময় ২৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫
** ভারতীয়দের প্রশংসায় অস্ট্রেলিয়া!॥ অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** সিডনিই বলে দেবে বিশ্বকাপটা সত্যিই ‘আউট সাইড এশিয়া’ কিনা! | অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** মহাতারকাদের ক্রিকেট আড্ডায়ও বাংলাদেশ। । অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** আবেগ মেলবোর্নে, যুদ্ধটা সিডনিতে॥ অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** তবু ‘চোক’ শব্দটাকে এড়ানো যাচ্ছে না | সিডনি থেকে অঘোর মন্ডল
** জয়ের চেয়ে ভাল প্রস্তুতি আর কি হতে পারতো!| অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হ্যাডলিও || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** মাহমুদুল্লাহর ইনিংস টেনে আনলো মার্টিন ক্রো-কে। । অঘোর মন্ডল, হ্যামিল্টন থেকে
** ক্লাস অব জিরো এইট! || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অ্যাডিলেডে শরতের রংও যেন লাল-সবুজ | অঘোর মন্ডল, অ্যাডিলেড থেকে
** ওয়ানডে-তে বোলাররা এখন শ্রমিকের ভূমিকায়! অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অনেক নাটক জন্ম দিতে পারে ইডেন পার্ক ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইয়র্কার এখন বিরল ডেলিভারি!॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে