ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের সার্কিট হাউজ মাঠের বিশাল আকৃতির মঞ্চ। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যদের মাঝখানে চেয়ারে বসে আছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
মঞ্চে মাইক হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন ময়মনসিংহের গর্ব মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। গোটা সার্কিট হাউজ মাঠ তখন অন্যরকম উত্তেজনায় কাঁপছে। প্রিয় জেলার মানুষের সান্নিধ্যে রিয়াদ স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছিলেন না। আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ছেন বার বার।
বিশ্বকাপে বাঘা বাঘা বোলারদের ঘাম ঝরিয়ে ছাড়লেও এতো মানুষ আর অফুরান ভালবাসায় রিয়াদ ঠিকই নার্ভাস হয়ে পড়েন। মাহমুদুল্লাহর নিজের মুখে থেকে শোনা গেল সেই কথা, এত মানুষের সামনে কখনো কথা বলিনি। এটা আমার প্রথম অভিজ্ঞতা।
এরপর খানিকটা সময় চুপ থেকে আবারো বলতে থাকলেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে টানা দু'সেঞ্চুরি হাঁকানোর অনন্য রেকর্ড গড়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখানো রিয়াদ। সামনে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সিরিজ। দলের জন্য আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
ময়মনসিংহের সার্কিট হাউজ মাঠ থেকেই বেড়ে উঠেছিলেন রিয়াদ। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা একজনের কণ্ঠেও ভেসে আসলো সেই কথা। এই সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে আন্তজার্তিক মাঠে নিজের নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন রিয়াদ। হয়তো নিজের চেনা সেই মাঠের বিশাল মঞ্চে দাঁড়িয়ে বারবার নস্টালজিক হয়ে পড়েন তিনি।
অনেক কথাই বলতে চাচ্ছি। বলতে পারছি না। নিজেকে নার্ভাস লাগছে। এ ধরনের সিচুয়েশনে কখনো পরিনি বললেন, বাংলাদেশের নতুন রানগড়ার এ কারিগর।
আবেগ সংবরণ করে এবার বললেন, দেশের জন্য ময়মনসিংহের হয়ে আরো ভাল পারফর্ম করতে চাই। ভাল সময়, খারাপ সময়-দুসময়েই আমাদের পাশে থাকবেন। আমরা যেন আরো ভাল খেলতে পারি, সুস্থ থাকি এ দোয়া করবেন। মাত্র ৩ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় এসব কথা বলেন রিয়াদ।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ময়মনসিংহের ছেলে মাহামুদুল্লাহ রিয়াদকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান।
জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন এমপি, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবু আহাম্মদ আল মামুন, রিয়াদের বাবা ওবায়েদ উল্লাহ, বড় ভাই এমদাদুল্লাহ রাজু ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম.এ.হান্নানকে অনুষ্ঠান মঞ্চে বসতে দেখা যায়নি। গোটা অনুষ্ঠানে তিনি দর্শক সারিতেই বসে ছিলেন। এ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়।
ধীর-স্থির কিংবা ব্যাকরণসম্মত ব্যাটিং এ অনন্য মাহমুদুল্লাহ। তিনি চলছেন নিজস্ব স্টাইলে। ব্যাটে আছে নান্দনিকতা আর সৃষ্টিশীলতা। প্রতিভা, সাহস আর প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি গোটা বিশ্বকে টাইগারদের গর্জন শুনিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য রকম উ”চতায় বলেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু।
আর জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকি বললেন, দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই স্বাধীন দেশের স্বাধীন সন্তান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিতে পেরেছিল। যেই সন্তান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত পতাকাকে বিশ্বের বুকে পত পত করে উড়িয়েছেন তাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
গোটা অনুষ্ঠানস্থল জুড়ে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে প্রাণের উন্মাদনায় দর্শকরা যেন খেঁই হারিয়ে ফেলেন। মঞ্চে রিয়াদকে পেয়ে ফুলেল শুভে”ছা জানাতে যখন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হুমড়ি খেয়ে পড়েন তখন শুরু হয় বিশৃঙ্খলা।
পরে ধর্মমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য অনন্য গৌরব বয়ে আনায় মাহমুদুল্লাহর জন্য একটি বাড়ি তৈরির জায়গা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশ সময় ২০৫৪ ঘন্টা এপ্রিল ০৭, ২০১৫
কেজেড/