ঢাকা: ক্রিকেটারদের কাছে সবচেয়ে বড় অভিশাপ বলতে ‘ইনজুরি’ শব্দটাই। বিশেষত পেস বোলারদের কাছে।
উল্টো পিঠে আশার কথাও আছে। এ ইনজুরিকে জয় করে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এমন তারকাও কম নেই ক্রিকেটবিশ্বে। এই আশার কথাকেই মনে প্রেরণা হিসেবে যোগান ইনজুরিতে ভোগা ক্রিকেটাররা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপরও লেগে আছে ইনজুরির অভিশাপ। শাহাদাত হোসেন রাজীবের পর এখন এ অভিশাপে ভুগছেন তাসকিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম ও রুবেল হোসেন। এরা তিনজনই ‘এ’ দলের হয়ে ভারত সফরে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছেন।
টেস্ট দলের মূল পেসার রুবেল হোসেন চার মাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ইনজুরিতে পড়েলেন। গত মে মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে প্রথমবার ইনজুরিতে পড়েন তিনি। এরপর বাংলাদেশের টানা চারটি টেস্টে খেলা হয়নি তার। নতুনভাবে ফেরার মানসে চলমান জাতীয় লিগকে টার্গেট করেছিলেন বাগেরহাটের এই পেসার।
কিন্তু ভারতে গিয়ে ফের ইনজুরিতে পড়ায় নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজে রুবেলকে দেখা যাবে কিনা তা নিয়েই এখন শঙ্কা বাড়ছে। ইনজুরি, ক্যারিয়ার ও দলসহ জাতীয় ক্রিকেটের নানা দিক নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) মিরপুরে বিসিবির একাডেমি মাঠে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন রুবেল হোসেন।
বাংলানিউজ: ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে এখন কী কী করছেন?
রুবেল হোসেন: কাফ স্ট্রেইনে (মাংসপেশীর) ইনজুরি হয়েছে। যে এক্সারসাইজ প্রয়োজন ওগুলো করছি এখন। ভারতের (এ দল) সঙ্গে যে শেষ তিনদিনের ম্যাচ ছিল ওইটাতে প্রথমদিনেই আমার কাফ স্ট্রেইনে ইনজুরি হয়।
বাংলানিউজ: বিসিবির চিকিৎসকরা কী বলেছেন?
রুবেল হোসেন: আমাকে বলা হয়েছে ফিট হতে চার সপ্তাহের মতো লাগবে। ৮-৯ দিন হয়ে গেছে আমার ইনজুরি। এখন আগের চেয়ে বেটার। জোরে হাঁটলে অনেক ব্যথা করতো। আজ থেকে পেছনে বেল্ট বেঁধে ওজন নিয়ে হাঁটা শুরু করেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে হয়তো রানিং শুরু করতে পারবো। তখন বোঝা যাবে আমার পায়ের কী অবস্থা।
বাংলানিউজ: মে মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে ইনজুরিতে পড়েছিলেন। তারপর আর টেস্ট খেলা হয়নি...।
রুবেল হোসেন: সবসময়ই চেষ্টা করি সুস্থ থাকার। ইনজুরির কারণে দলের বাইরে থাকা অনেক কষ্টকর। ইনজুরি যেন না হয় ওভাবেই প্রস্ততি নিই, পরিশ্রম করি। কিন্তু পেস বোলারদের ইনুজরি আসবেই। আসল ব্যাপার হলো, রানিং ও ট্রেনিং যথাযথভাবে করা।
বাংলানিউজ: ইনজুরি আপনাকে পিছিয়ে দিচ্ছে কিনা? টেস্ট দলে প্রতিযোগিতা তো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি...।
রুবেল হোসেন: এটা ভালো, প্রতিযোগিতা বাড়লে নিজের পারফরম্যান্স শো করতে হবে। এমন একটা পরিস্থিতি চলে আসবে যে, আমি খারাপ খেললে আমার জায়গায় অন্য একজন সুযোগ পাবে। এতে পারফরম্যান্সটা টিমের সঙ্গে যোগ হবে। তখন দেখবেন টিমের ফলাফল ভালো হবে। শহীদ ও মুন্তাফিজের মতো ভালো পেসারও উঠে আসছে। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক।
বাংলানিউজ: বিসিবি আবার পেসার হান্ট চালু করতে যাচ্ছে। আপনিও পেসার হান্টের আবিষ্কার। এ দেশের ক্রিকেটে পেসার হান্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়?
রুবেল হোসেন: এটা খুব ভালো একটা উদ্যোগ বিসিবির। আগে চালু করলে আরও ভালো হতো। এ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে পেসার আছে, যারা সুযোগ পায় না, তারা সামনের দিকে আসতে পারবে।
বাংলানিউজ: আপনি পেসার হান্ট থেকে কীভাবে উঠে এলেন?
রুবেল হোসেন: আমি প্রথমবারের পেসার হান্টে গিয়েছিলাম। প্রথমবার আমার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৭২ কি.মি. উঠেছিল। পরেরবারও পেসার হান্ট হয়। সেটাতে আমি বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হই। তারপর আমাদের ২৪ জনের একটা স্কোয়াড ঘোষণা করে ঢাকায় নিয়ে এসে আরেকটা বাছাই করা হয়। এটাতেও আমি প্রথম হই। ওখান থেকে কোচ সারোয়ার ইমরান আমাকে অনুশীলনের সুযোগ করে দেন। পরে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগও পাই।
বাংলানিউজ: এখন পর্যন্ত স্মরণীয় ম্যাচ কোনটি আপনার?
রুবেল হোসেন: স্মরণীয় ম্যাচ দুইটা আছে। নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট। আর গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি।
বাংলানিউজ: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই পারফরম্যান্সটার জন্য ক্রিকেটভক্তরা আপনাকে আলাদাভাবে স্মরণ করেন। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ ওভারে তিন বলের ব্যবধানে স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস এন্ডারসনকে বোল্ড করেছিলেন। সেদিন বল হাতে অদম্য হয়ে উঠেছিলেন আপনি...।
রুবেল হোসেন: সেদিন বোলিংটা খুব উপভোগ করছিলাম (হাসি)। অ্যাডিলেডের ম্যাচটা ‘ডু অর ডাই’ ছিল আমাদের জন্য। আমরা ইংল্যান্ডকে টার্গেট করেছিলাম। ওদের বিপক্ষে জিতেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে চেয়েছি। দলের সবার ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ওদের হারাই আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৫
এসকে/এইচএ/