মিরপুর থেকে: তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং সফরকারী জিম্বাবুয়ে। টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা।
মুশফিকুর রহিমের অনবদ্য সেঞ্চুরি, তামিম ইকবাল আর সাব্বির রহমানের দারুণ ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তুলেছে ২৭৩ রান।
ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়ায় টাইগারদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস।
প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না লিটন দাস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে লুক জঙ্গোর করা বলের লাইন মিস করলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে গ্রায়েম ক্রেমারের তালুবন্দি হন লিটন। আউট হওয়ার আগে ৬ বল মোকাবেলা করলেও কোনো রান আসেনি তার ব্যাট থেকে। লিটনের বিদায়ে ব্যাটিংয়ে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
শুরুতে লিটন দাসের উইকেট হারালেও বেশ ভালোই এগিয়ে চলছিল স্বাগতিকরা। তবে, ইনিংসের নবম ওভারের তৃতীয় বলে পানিয়াঙ্গারার বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ১২৩ ওয়ানডে খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিদায় নেওয়ার আগে ২০ বল খেলে একটি চারে মাত্র ৯ রান করেন তিনি। দলীয় ৩০ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে তামিমের সঙ্গে ২৮ রানের জুটি গড়েন রিয়াদ।
দলীয় একশ রানের মাথায় আউট হন তামিম ইকবাল (৪০)। ২৪তম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে জঙ্গোর তালুবন্দি হওয়ার আগে বাঁহাতি এ ওপেনার ৬৮ বলে তিনটি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকান। আউট হওয়ার আগে মুশফিকের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি গড়েন তামিম। আরও ২৩ রান যোগ হতেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন সাকিব আল হাসান (১৬)। সিকান্দার রাজার বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
এ ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতকের দেখা পান ১৫৬ ওয়ানডে খেলা মুশফিকুর রহিম। ৮টি বাউন্ডারি আর একটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে মাত্র ১০৪ বলে মুশফিক তার শতক তুলে নেন। এর আগে ৪৫তম ওভারে ছক্কার পর চার হাঁকিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে নেন সাব্বির। তবে, বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৫৭ রান করে রান আউট হয়ে ফেরেন সাব্বির। আউট হওয়ার আগে ৫৮ বল মোকাবেলা করে তিনি চারটি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকান। মুশফিকের সঙ্গে ইনিংস সর্বোচ্চ ১১৯ রানের জুটি গড়েন সাব্বির।
সাব্বিরের বিদায়ে ব্যাট হাতে নামেন নাসির হোসেন। চিবাবার তালুবন্দি হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে কোনো রান আসেনি। একই ওভারে রান আউট হয়ে ফেরেন মুশফিক (১০৭ রান)। টাইগারদের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে তিনি ১০৯ বলে ৯টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান।
শেষ ওভারের প্রথম বলে ডেঙ্গুজ্বর থেকে ফেরা অধিনায়ক মাশরাফি চার হাঁকিয়ে পরের বলেই বিশাল ছক্কা হাঁকান। তৃতীয় বলে আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দেন তিনি। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ১৪ রান। আরাফাত সানি তিনটি চারে ১৫ রান করেন।
চার মাস পর আবার হোম সিরিজ খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা বধের পর বাংলাদেশের সামনে এবার তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। দুই দলের মোট ১৪ সিরিজে পরিসংখ্যানে এগিয়ে টাইগাররা। বাংলাদেশ জিতেছে ৮টি সিরিজে আর জিম্বাবুয়ে জিতেছে ৬টি সিরিজে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ছিল পরাজয়ের বৃত্তে বন্দী। তবে, বিশ্বকাপের আগে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই শেষ প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের মাটিতে নেমেছিল মাশরাফি বাহিনী।
গতবার বাংলাদেশ সফরে টাইগারদের বিপক্ষে সব আন্তর্জাতিক ম্যাচ হেরেছিল জিম্বাবুয়ে। প্রস্তুতি ম্যাচেও জিততে পারেনি তারা। একটি ম্যাচ ড্র করেছিল অতিথিরা; হেরেছিল অন্যটিতে। সর্বশেষ সাক্ষাতে গত বছর বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডেতে ৫-০, টেস্টে ৩-০ ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা নিয়ে ফেরে জিম্বাবুয়ে। সিরিজ জয়ের অভিজ্ঞতাও নেই জিম্বাবুয়ের বর্তমান দলটির কারোরই। আর দেশের মাটিতে ২০০৪ সালের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কোনো সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের সাফল্য রেখা যতটা উপরে ততটা তলানিতে সফরকারীরা। চলতি বছরের শেষ সিরিজে টাইগাররা চায় অতিথিদের হারিয়ে সিরিজটি নিজেদের করে রাখতে। এ বছর ১৫ ওয়ানডের ১০টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ে চলতি বছর ২৬টি ওয়ানডেতে জয়ের দেখা পেয়েছে মাত্র ৭টিতে।
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, নাসির হোসেন, আরাফাত সানি, মুস্তাফিজুর রহমান, আল আমিন হোসেন।
জিম্বাবুয়ে দল: এলটন চিগুম্বুরা (অধিনায়ক), সিকান্দার রাজা, চামু চিবাবা, ক্রেইগ আরভিন, গ্রায়েম ক্রেমার, রিচমন্ড মুতুম্বামি, শন উইলিয়ামস, লুক জঙ্গো, টিনাশে পানিয়াঙ্গারা, মুজারাবানি এবং ম্যালকম ওয়ালার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ০৭ নভেম্বর ২০১৫
এমআর
** সাব্বির-নাসির-মুশফিকের বিদায়, বাংলাদেশ ২৪৩/৭
** সাব্বিরকে নিয়ে মুশফিকের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি
** মুশফিক-সাব্বিরের ব্যাটে বাংলাদেশ ২১১/৪
** হাতি পেটানোর মতো ছক্কা মারলেন তামিম!
** মুশফিকের দারুণ ব্যাটিংয়ে টাইগারদের ১৭৫/৪
** ছন্দে মুশফিক, টাইগারদের সংগ্রহ ১৩৬/৪
** তামিমের পর ফিরলেন সাকিব, বাংলাদেশ ১২৩/৪
** দলীয় শতকের পর তামিমের বিদায়
** মুশফিক-তামিমের জুটিতে ৮৪/২
** ক্রিজে তামিম-মুশফিক, বাংলাদেশ ৬২/২
** রিয়াদের বিদায়, স্বাগতিকরা ৩০/২
** ৫ ওভার শেষে টাইগাররা ১৯/১
** শুরুতেই ফিরলেন লিটন
** ব্যাটিংয়ে তামিম-লিটন
** ব্যাটিংয়ে নামবে টাইগাররা