ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাকিব নৈপুণ্যে মুশফিকের পরাজয়

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
সাকিব নৈপুণ্যে মুশফিকের পরাজয় ছবি : শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরপুর থেকে: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম ম্যাচে মাঠে নামে রংপুর রাইডার্স এবং সিলেট সুপারস্টারস। আরেকটি লো-স্কোরিং ম্যাচে উত্তেজনা ছড়ানো পারফর্ম করলো দুই দলই।

বিপিএলের তৃতীয় আসরে শেষ ওভারে ম্যাচ গড়ানো যেন বৈশিষ্ট্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) দিনের প্রথম ম্যাচে ৬ রানে সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্স হারিয়েছে মুশফিকুর রহিমের সিলেট সুপারস্টারসকে।

টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন রংপুরের দলপতি সাকিব আল হাসান। মুশফিকের সিলেটের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে রংপুর ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১০৯ রান সংগ্রহ করে। সিলেটের পেসার মোহাম্মদ শহীদ একাই তুলে নেন ৪টি উইকেট। জবাবে সিলেট ১৯.২ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ১০৩ রান তোলে। সাকিব একাই তুলে নেন সিলেটের তিনটি উইকেট।

মন্থর উইকেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি রংপুরের। দলীয় ১৯ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় দলটি। ওপেনার সৌম্য সরকারকে সাজঘরে পাঠিয়ে উইকেটের আনন্দে মাততে থাকে সিলেটের বোলাররা। সৌম্য ব্যক্তিগত ৭ রান করে মোহাম্মদ শহীদের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন। আরেক ওপেনার লিন্ডল সিমন্স দলীয় ২৩ রানের মাথায় বিদায় নেন। ১৪ বলে দুটি বাউন্ডারিতে ১৩ রান করে রান আউট হন এ ক্যারিবীয়ান।

দ্রুত বিদায় নেন চার নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিথুন। নাসুম আহমেদ ইনিংসের সপ্তম ওভারে মুশফিকের হাতে ধরা দিতে বাধ্য করেন মিথুনকে (৪)। দলীয় ৫৪ রানের মাথায় রান আউট হয়ে ফেরেন জহুরুল ইসলাম (৮)। থিসারা পেরেরা ১৬ বলে দুটি ছক্কায় ২১ রান করে রবি বোপারার বলে বোল্ড হন। স্বদেশী অজন্তা মেন্ডিসকে টানা দুই বলে বিশাল ছক্কা মারলেও দলকে বিপদে রেখে সাজঘরে ফেরেন পেরেরা।

ড্যারেন স্যামি (৫) নাজমুলের বলে হিট উইকেটে বিদায় নেন। সাচিত্রা সেনানায়েকের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৭ রান। শহীদের দ্বিতীয় শিকারে বোপারার তালুবন্দি হন তিনি।

সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিল দেখতে থাকা সাকিব আল হাসান তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে করেন শেষ ওভারে শহীদের বলে জসুয়া কবের তালুবন্দি হয়ে আউট হওয়ার আগে করেন ৩৩ রান। তার বিদায়ের পরের বলেই শহীদ ফিরিয়ে দেন আরাফাত সানিকে। সানি ব্যাট হাতে করেন ৩ রান। সাকিবের ৩৭ বলের ইনিংসে ছিল দুটি চার আর একটি ছক্কা।

সিলেটের হয়ে ৪ ওভারে ৪১ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন অজন্তা মেন্ডিস। উইকেট শূন্য থাকেন ৪ ওভারে ১৯ রান খরচ করা মুনাবেরা। রবি বোপারা ৪ ওভার বল করে মাত্র ৮ রানের বিনিময়ে নেন একটি উইকেট। একটি করে উইকেট তুলে নেন নাজমুল ইসলাম এবং নাসুম আহমেদ। সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট দখল করেন ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দেওয়া মোহাম্মদ শহীদ।

মাত্র ১১০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৫ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় সিলেট। তবে, ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিবকে চার মেরে রানের খাতা খোলা সিলেটের ইনিংস দেখে মনে হচ্ছিলো খুব দ্রুতই জিততে চলেছে মুশফিক বাহিনী। চতুর্থ বলে উইকেট হারালেও পরের ওভারের প্রথম দুই বলে আরাফাত সানিকে মাঠছাড়া করেন মুমিনুল হক। তৃতীয় ওভারে সাকিবের বদলি হয়ে সেনানায়েকে আক্রমণে আসলে তাকে পরপর দুই বলে ওভার বাউন্ডারি আর বাউন্ডারি হাঁকান সিলেটের ব্যাটসম্যান মুনাবেরা। কিন্তু সময় যত গড়ায়, ততই শ্লথ হয় সিলেটের ইনিংসের গতি। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে রানের সংখ্যা।

সিলেটের ওপেনার জসুয়া কবকে ফিরিয়ে দেন টাইগার অলরাউন্ডার রংপুরের দলপতি সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে সাকিব এলবির ফাঁদে ফেলেন কবকে (০)। আরেক ওপেনার মুনাবেরাকেও ফিরিয়ে দেন সাকিব। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে পেরেরার হাতে ধরা দিতে বাধ্য করেন ১১ বলে দুটি চার আর একটি ছক্কা হাঁকানো মুনাবেরাকে।

এরপর সিলেটের ব্যাটিংয়ে হাল ধরেন দুই টাইগার। মুশফিক আর মুমিনুল হক মিলে দলকে সহজ জয়ের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন। এ জুটি থেকে আসে আরও ২১ রান। পেরেরা এ জুটি ভাঙেন দলীয় অষ্টম ওভারে মুমিনুলকে এলবির ফাঁদে ফেলে। ২৩ বল মোকাবেলা করে মুমিনুল ৬টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে করেন ২৯ রান।

নবম ওভারে বিদায় নেন নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা নাজমুল ইসলাম। সেনানায়েকের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সিলেটের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে নাজমুলের ব্যাট থেকে কোনো রানই আসেনি। দশম ওভারে রবি বোপারাকে ফিরিয়ে দেন আরাফাত সানি। সিলেটের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সানির বলে এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন এক রান করা রবি বোপারা।

স্কোরবোর্ডে আরও ১৭ রান যোগ করেন মুশফিক-নাসুম আহমেদ জুটি। ইনিংসের ১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে আবু জায়েদ ফিরিয়ে দেন নাসুমকে। উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো মোহাম্মদ মিথুনের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরার আগে নাসুমের ব্যাট থেকে আসে ৭ রান। তবে, ব্যাট হাতে ক্রিজের আরেক প্রান্ত আগলে রাখেন সিলেটের দলপতি মুশফিক।

বল হাতে নিজেকে যেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার থেকে বিশ্বসেরা স্পিনার বানিয়ে ফেলেছেন সাকিব। ইনিংসের ১৭তম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই নাজমুল হোসাইন মিলনকে (৫) বোল্ড করেন সাকিব। দলীয় ৮৫ রানের মাথায় সিলেট তাদের সপ্তম উইকেটটি হারায়।

১৮তম ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ৯ রান করা নুরুল হাসান। অষ্টম উইকেট হারানো সিলেটের শেষ দুই ওভারে দরকার হয় ১৪ রান। ১৯তম ওভারে ড্যারেন স্যামির করা প্রথম বলে কোনো রান নিতে না পারা মোহাম্মদ শহীদ পরের বলেই চার হাঁকান। তৃতীয় বলে বোল্ড হয়ে সিলেটের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। চতুর্থ বলে কোনো রান নিতে পারেননি সিলেটের অজন্তা মেন্ডিস। পঞ্চম বলে ২ আর ষষ্ঠ বলে ১ রান তুলে শেষ ওভারের স্ট্রাইক নেন তিনি।

সিলেটের শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ৭ রান। প্রথম বল থেকে কোনো রান সংগ্রহ করতে পারেননি মেন্ডিস। পরের বলে আবু জায়েদের বলে সেনানায়েকের তালুতে বন্দি হন মেন্ডিস (৩)। অপরপ্রান্তে অপরাজিত থেকে হারের স্বাদ নিতে হয় মুশফিককে। মুশফিক ৩৪ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।

রংপুরের হয়ে সাকিব ৪ ওভারে ৩১ রান খরচ করে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট তুলে নেন। আবু জায়েদ দুটি উইকেট পান। এছাড়া একটি করে উইকেট তুলে নেন আরাফাত সানি, সেনানায়েকে, পেরেরা আর স্যামি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, ২৬ নভেম্বর ২০১৫
এমআর

** শহীদের পেস তাণ্ডবে ১০৯ রানে অলআউট রংপুর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।