ঢাকা: নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত ১১৩ রান ও অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ১১৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো সুপার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ যুবারা। বাংলাদেশের দেয়া ২৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫ বল বাকি থাকতে ১৪২ রানে অলআউট হয় স্কটিশরা।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দলীয় ১৭ রানে পিনাক ঘোষ ও জয়রাজ শেখ’র উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে যাওয়া বাংলাদেশের হাল ধরেন ওপেনার সাইফ হাসান ও টপ অর্ডার নাজমুল হোসেইন শান্ত।
তৃতীয় উইকেটে এই দুই ব্যাটসম্যানের লড়াকু ১০১ রানের জুটিতে যখন স্বাগতিকরা বেশ স্বাচ্ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন দলীয় ১১৮ ও ব্যক্তিগত ৪৯ রানে সাইফ হাসান ফিরে গেলেও ক্রিজের অপর প্রান্তে বাংলাদেশের লাগাম বলতে গেলে একমাত্র শান্তই ধরে রাখেন।
আর দলটির বিপক্ষে ক্ষুরধার ব্যাটিংয়ে এই ম্যাচ দিয়েই যুব ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান করে নতুন এক রোকর্ড নিজের থলিতে পুড়েছেন শান্ত। পাকিস্তানের সামি আসলামের ১৬৯৫ রান টপকে অ-১৯ ক্রিকেট অনন্য এই রেকর্ড গড়েন বাংলাদেশের এই যুবা ব্যাটসম্যান।
শুধুই কী শান্ত? ক্রিজের অপর প্রান্ত থেকে ব্যাট হাতে দলকে বড় রানের পুঁজি এনে দিতে বেশ সাবলীল ব্যাট করেছেন টাইগার যুবা অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজও। চতুর্থ উইকেটে এই দুই ব্যাটসম্যান দলকে ১০০ রানের পুঁজি এনে দেয়ার পর ৪৮ তম ওভারে মোহাম্মদ গাফফারের বলে ম্যাকক্রিয়েথের হাতে বল তুলে দিয়ে দলীয় ২১৮ ও ব্যক্তিগত ৫১ রান করে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন মিরাজ।
তবে, এই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে একাই বুক চিতিয়ে লড়ে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাঁর অপরাজিত ১১৩ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে বাংলাদেশ যেমন পেয়েছে একটি চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ, তেমনি তিনিও পেয়েছেন যুবা ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৭৪৭ রানের এক মাইলফলক স্পর্শকারী সংগ্রহ। যা কীনা যুবাদের যে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান।
পরে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ৩, সাইদ সরকারের ১৬ রানে ৬ উইকেটের বিনিময়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের যুবারা ২৫৬ রান সংগ্রহ করে।
বল হাতে স্কটিশদের হয়ে মোহাম্মদ গাফফার ৪টি, রায়ান ব্রাউন ও মিচেল রাও নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
জবাবে, জয়ের জন্য ২৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী উইকেটে কিছুটা ধীর গতিতে শুরু করেছিলেন স্কটিশরা। তবে তাদের সেই ধীর গতির ব্যাটিং মুখ থুবরে পড়ে মিরাজের বোলিংয়ের সামনে।
১৩তম ওভারে মিরাজের চতুর্থ বলটি নেইল ফ্ল্যাক শান্তর হাতে তুলে দিয়ে ব্যক্তিগত ২৮ ও দলীয় ৪৮ রানে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানলে শুরু হয় স্কটিশ ইনিংসের ভাঙ্গন। সেই যে তাদের পশ্চাতপদতা শুরু। এরপর, দলের সঙ্গে কোন রান যোগ না করেই ব্যক্তিগত শূণ্য রানে রান আউট হয়ে ফিরে যান ওয়াইজ শাহ।
ওয়াইজ শাহ’র পর তৃতীয় উইকেটে দলের সঙ্গে মাত্র ৮ রান যোগ করে ব্যক্তিগত ২০ রানে আরিফুল ইসেলামের বলে এলবি’র ফাঁদে পড়েন ররি জনস্টন।
ররি’র ফিরে যাবার পর চতুর্থ উইকেটে আজিম দার ও জ্যাক ওয়ালারের জুটিতে ঘুড়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল স্কটল্যান্ড। কিন্তু ২৯তম ওভারে আরিফুলের পঞ্চম বলে ব্যক্তিগত ২৪ রানে ওয়ালার সালেহ আহমেদের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে তাদের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।
এরপর দলটির হয়ে বলতে গেলে একাই রড়ে গেছেন আজিম দার। তাতে অবশ্য খুব বেশি লাভ হয়নি। কেননা, টাইগার যুবাদের বোলিং তোপে আগেই টপ অর্ডাররা আউট হওয়ায় চাপে পড়া দলটিকে তিনি আর বেশিদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। ক্রিজের এক প্রান্ত তিনি আকড়ে থাকলেও বাদ বাকিরা ক্রিজের অপর প্রান্তে ঝড়ে গেছে শুকনো পাতার মতো।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য আলিম দারও থাকেতে পারেননি। ৪৮ তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের দারুণ এক ডেলিভারি হাকাতে গেলে ধরা পড়েন সালেহ আহমেদ শাওনের হাতে। এর আগে অবশ্য খেলেছেন ব্যক্তিগত ৫০ রানের ইনিংস। আর তাতেই ১৪২ রানের সম্মানজনক স্কোর গড়তে সক্ষম হয়েছে স্কটল্যান্ড।
ফলে গ্রুপ পর্বে টানা দুই ম্যাচ হেরে সুপার লিগের লড়াই থেকে ছিটকে যেতে হয় তাদের।
বাংলাদেশ যুবাদের হয়ে বল হাতে সালেহ আহমেদ শাওন ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ৩টি, আরিফুল ইসলাম ২টি ও মেহেদি হাসান মিরাজ নিয়েছেন ১টি উইকেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬
এইচএল/আরএম
** দাপুটে জয়ে সুপার লিগ নিশ্চিত টাইগার যুবাদের
** জয় থেকে দূরে নেই স্বাগতিকরা
** স্কটিশদের পাঁচ ব্যাটসম্যান সাজঘরে
** ৩৬ ওভারে স্কটল্যান্ড ১০৯/৪
** ২৮ ওভার শেষে স্কটল্যান্ড ৮৮/৩
** স্কটিশদের তৃতীয় উইকেটের পতন
** স্কটিশ উইকেটের অপেক্ষায় টাইগাররা
** জয়ের লক্ষ্যে ফিল্ডিংয়ে টাইগার যুবারা
** টাইগার যুবাদের সংগ্রহ ২৫৬
**শান্তর দুর্দান্ত শতক, বাংলাদেশ ২২৬/৪
** ৪৭ ওভার শেষে বাংলাদেশ ২১৮/৩
** মাইলফলক স্পর্শ করলেন শান্ত
** সর্বোচ্চ রানের পথে নাজমুল শান্ত
** ৩১ ওভার শেষে বাংলাদেশ ১০৯/২
** বাংলাদেশের দুই উইকেটের পতন
** পিনাকের দ্রুত বিদায়