কক্সবাজার শেখ কামাল একাডেমি স্টেডিয়াম থেকে: নামিবিয়া ইনিংসের ৩১ ওভারের পঞ্চম বলটা জোরের ওপরই ছুড়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাতেই স্রেফ বোকা বনে গেলেন ভ্যান উইক।
এরপর বাংলাদেশ অধিনায়ক দু’হাতে উপরের দিকে ঘুষি ছুঁড়লেন। যেন উঠতে চাইলেন আকাশে। ততক্ষণে সতীর্থরা এসে গেছে। একটু পরেই তাদের কাঁধে সওয়ার তিনি।
আগেও অনেকবার এভাবে কত ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন তার হিসেবে খুঁজতে গুগল ছাড়া যথেষ্ট হবে না। কিন্তু এত উদযাপন কেনো?
হবেই বা না কেনো, যুবাদের সর্বোচ্চ উইকেটধারী কে? গত আট বছর ধরে এ প্রশ্নের উত্তরে নাম এসেছে একজনেরই, পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিম।
আজ থেকে ইমাদ ওয়াসিম মুছে গেল, রেকর্ডটি কেবলই এখন মেহেদি হাসান মিরাজের। ভ্যান উইকের আউটের মাধ্যমে তার নামের পাশে যুক্ত হলো ৭৪ উইকেট। এ অর্জন তো উদযাপনের দাবি রাখে। তা নয় কি?
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ককে রেকর্ডের কথা বলতেই, প্রথমে দলের জয়ের কথা বললেন। দল না জিতলে ব্যক্তিগত অর্জনে কি যায় আসে?
তাই মেহেদি হাসান মিরাজ বলেন, ‘আমার কাছে খুব ভালো লাগছে যে, আজকের ম্যাচেও আমরা জিতলাম, তারপর আমার রেকর্ডটাও হলো, আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হলাম। এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। ’
রেকর্ড সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ যুব নেতা বলেন,‘যখন আমি শেষ উইকেটটা পাই, তখন সবাই আমার কাছে আসে, জড়িয়ে ধরে, আমাকে খুব উৎসাহ দেয়-বলে তুই খুব বেটার রেকর্ড করেছিস। ’
স্কটল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে। ওইদিন নাজমুল হোসেন শান্ত’র সর্বোচ্চ রানধারী হওয়ার পর অধিনায়কের সে কি উচ্ছ্বাস। যেন রেকর্ডটি তিনিই করেছেন। ক্যাপ্টেন তো এমনই হয়।
তবুও যাদের মনে নেই তাদের জন্য আর একবার-
৩১ জানুয়ারি স্কটল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ ইনিংসের ৩৭ ওভারের প্রথম বলে দারুণ এক চার মেরে নাজমুল হোসেন শান্ত পাকিস্তানের সামি আসলামকে পেছনে ফেলে হন যুবাদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক। এমন সময় উইকেটে শান্তর সঙ্গী মিরাজ ছুটে এসে অভিবাদন জানালেন তাকে।
এ পর্যন্ত যতটুকু ঘটেছে তাকে স্বাভাবিকই বলা যায়। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ অধিনায়ক যা করলেন তাকে তো আর ‘স্বাভাবিক’ শব্দে বেধে রাখা যায় না। মিরাজ পেছনে ফিরে আবারও আসলেন এবং আবারও অভিনন্দনে ভাসালেন শান্তকে। নিশ্চয়ই সহ অধিনায়কের কৃর্তীর ক্ষণে আলাদা আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছিল অধিনায়ককে।
ওইদিন ম্যাচ শেষে মেহেদি ও শান্ত দু’জনই সেই আবেগের কথা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন।
আজও সেই আবেগের একটা খণ্ডচিত্র দেখা গেল। মিরাজ রেকর্ড করার পর শান্ত ছুটে এসে প্রথমে জড়িয়ে ধরলেন মিরাজকে, এরপর কাঁধে তুলে নিলেন।
এ সম্পর্কে মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমার রেকর্ড হওয়ার পর বিশেষ করে শান্ত অনেক বেশি এক্সসাইটেড ছিল, তারপর আরও যারা ছিল সবাই অনেক খুশি। আমার কাছেও খুব ভালো লেগেছে। ’
মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ছয়বছর ধরেই দু’জনের দোস্তি। একসঙ্গে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলে এখন অনূর্ধ ১৯ দলে তারা।
দলের ব্যাটিং বোলিংয়ের নিউক্লিয়াস তো বটেই দু’জনের কাঁধেই আবার বাংলাদেশ অধিনায়ক ও সহঅধিনায়কের ভার। খুব কম সময়ের ব্যবধানে দুই বন্ধুর রেকর্ড হয়ে গেল। নিশ্চয়ই দুই বন্ধুর দিকে আরও বেশি সময় ধরে ভালো কিছু চাইবে পুরো দেশ...
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
টিএইচ/আইএসএ/টিসি