ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ভারতকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
ভারতকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছবি: শোয়েব মিথুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরপুর থেকে: বাংলাদেশের মাটিতে আয়োজিত আইসিসি যুব বিশ্বকাপের একাদশতম আসর পেলো নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।

শিরোপা প্রত্যাশী ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৫ উইকেটে হারিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ক্যারিবীয় যুবারা।

যুব বিশ্বকাপের এবারের আসরে ভারত জিতলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চারবার শিরোপাজয়ী দল হয়ে নাম লেখাতে পারতো ইতিহাসের পাতায়। তবে, রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে খেলতে আসা দুর্দান্ত ভারতকে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সমান তিনবার করে যুব বিশ্বকাপের শিরোপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। এর আগে ২০০৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল ক্যারিবীয় যুবারা।

এবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্বাগতিক বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে দিয়ে তিন উইকেটের জয়ে ফাইনালে ‍নাম লেখায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর শ্রীলঙ্কাকে ৯৭ রানে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপে পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে ওঠে ভারত।

রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয় ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ম্যাচটি শুরু হয় সকাল ৯টায়।

টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ক্যারিবীয় দলপতি শিমরন হেটমায়ার। বোলাররা তার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই প্রমাণ করেছেন। আসরের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলা ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম থেকেই ক্যারিবীয় যুবাদের বোলিং দাপটে ধুঁকতে থাকে। রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে খেলতে নামা টিম ইন্ডিয়া ৪৫.১ ওভারে অলআউট হয় মাত্র ১৪৫ রানে। জবাবে, সহজ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবীয়দের বেশ ঘাম ঝরিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করতে হয়। বলা চলে, সহজ ম্যাচ কঠিন করেই জেতে তারা। ৪৯.৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে ক্যারিবীয় যুবারা।

টস হেরে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন রিশব পান্ত ও ইশান কিশান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন সরফরাজ খান। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। যার মাঝে ১৬ রানই আসে ওয়াইড বল থেকে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান রিশব পান্ত। আলজারি জোসেফের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন এক রান করা রিশব। নিজের দ্বিতীয় আর দলের তৃতীয় ওভারে জোসেফ তুলে নেন অলমোলপ্রিতের (৩) উইকেট। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভারতীয় এ ব্যাটসম্যান। দলীয় ৮ রানেই দুই উইকেট হারায় ভারত।

এরপর উইকেটে থেকে সাময়িক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন দলপতি ইশান কিশান ও ওয়াসিংটন সুন্দর। তবে, ইনিংসের সপ্তম ওভারে জোসেফের আরেক দুদার্ন্ত ডেলিভারিতে সাজঘরের পথ ধরেন ভারতের দলপতি ইশান। এলবির ফাঁদে পড়ে আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪ রান।

দলীয় ২৭ রানে তিন উইকেট হারানো ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল দলীয় ৪১ রানের মাথায় চতুর্থ ব্যাটসম্যানকে হারায়। ৪১ বলে ৭ রান করা ওয়াসিংটন সুন্দর ইনিংসের ১৫তম ওভারে জনের বলে জোসেফের তালুবন্দি হন। দলীয় ৫০ রানের মাথায় আরমান জাফর (৫) বিদায় নিলে টপঅর্ডারের পঞ্চম ব্যাটসম্যানকে হারায় ভারত। ইনিংসের ১৮তম ওভারে স্প্রিংগারের বলে কেমো পলের হাতে ধরা পড়েন জাফর।

দলীয় ৫০ রানেই ফেরেন রিশব পান্ত, অলমোলপ্রিত, ইশান কিশান, ওয়াসিংটন সুন্দর ও আরমান জাফর। সেখান থেকে জুটি গড়ে দলকে টেনে নিয়ে চলেন মহীপাল ও সরফরাজ খান। তবে, ৩৭ রানের এ জুটি ভাঙে ইনিংসের ৩০তম ওভারে। কেমার হোল্ডারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১৯ রান করা মহীপাল। ইনিংসের ৩৭তম ওভারে জনের দ্বিতীয় শিকারে সাজঘরের পথ ধরেন মায়াঙ্ক দাগার (৮)। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে কার্টির দারুণ এক বিদায় নিতে হয় দাগারকে। ৪০তম ওভারে কেমো পল তার প্রথম উইকেটের দেখা পান। আভিস খানকে (১) জনের হাতে ধরা দিতে বাধ্য করেন পল।

দলকে টেনে নিয়ে চলা ইনফর্ম সরফরাজ খান ৫১ রান করে বিদায় নেন। জন তার তৃতীয় শিকার তুলে নিতে সরফরাজকে এলবির ফাঁদে ফেলেন। শেষ দিকে রাহুল বাথাম ২১ রান করেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তিনটি করে উইকেট তুলে নেন জোসেফ ও রায়ান জন। দুটি উইকেট দখল করেন কেমো পল। আর একটি করে উইকেট পান হোল্ডার ও স্প্রিংগার।

১৪৬ রানের টার্গেটে ক্যারিবীয়দের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন গিডরন পোপ ও তেভিন ইমলাচ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান পোপকে ফিরিয়ে দেন ভারতীয় পেসার আভিস খান। টপএজ হয়ে খলিল আহমেদের তালুবন্দি হওয়ার আগে তিনি করেন ৩ রান। ইনিংসের অষ্টম ওভারে খলিল আহমেদের এক্সট্রা বাউন্সে লমরোরের হাতে ধরা পড়েন ইমলাচ (১৫)।

দুই ওপেনারকে হারানোর পর দলীয় ৬৭ রানে অধিনায়ক শিমরন হেটমায়েরকে হারায় ক্যারিবীয়রা। ৫৩ বলে ২৩ রান করে মায়ঙ্ক দাগারের বলে আউট হন তিনি। বিদায়ের আগে কার্টিকে নিয়ে ৩৯ রানের জুটি গড়েন ক্যারিবীয় দলপতি। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে দাগারের দ্বিতীয় শিকারে বিদায় নেন স্প্রিংগার (৩)। দলীয় ৭১ রানে টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারায় ক্যারিবীয়রা।

দাগারের আরেক দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বিদায় নেন ৩ রান করা গোলি। দাগার তার তৃতীয় উইকেটটি নিতে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন। এরপরই ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে ভারতের যুবারা। চেপে ধরে ক্যারিবীয় যুবাদের। তবে, সে প্রচেষ্টা কাজে লাগেনি। দলীয় ৭৭ রানে পাঁচ উইকেট হারানো দলকে টেনে নেন কেচি কার্টি আর কেমো পল। ১০২ বল মোকাবেলা করে তারা ৫০ রান তুলে নেন। ৬৯ রানে অবিচ্ছিন জুটি গড়েন তারা। কার্টি ৫২ আর পল ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন।

মিরপুরে ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ১৮ দিনের ক্রিকেটযজ্ঞ। ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় যুব বিশ্বকাপের একাদশতম আসর। টেস্ট খেলুড়ে ৯টি দেশ ও আইসিসি’র ৭টি অ্যাসোসিয়েট-অ্যাফিলিয়েট সদস্য দেশকে নিয়ে চারটি শহরের আটটি ভেন্যুতে শুরু হয় বিশ্বকাপ আসর।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
এমআর

** ৪৬ ওভার শেষে ক্যারিবীয়রা ১২৮/৫
** দাগার আঘাতে ক্যারিবীয়দের চতুর্থ উইকেটের পতন
** ২১ ওভার শেষে ক্যারিবীয়রা ৬২/২
** ক্যারিবীয়দের প্রথম উইকেটের পতন
** ১৪৫ রানেই গুটিয়ে গেল ভারত
** ধুঁকছে ভারতের যুবারা
** ৩৫ ওভার শেষে ভারত ১১৪/৬
** ভারতের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যানের বিদায়
** ২৯ ওভার শেষে ভারত ৮৭/৫
** চরম বিপর্যয়ে ভারতের যুবারা
** ১৪ ওভার শেষে ভারত ৪১/৩
** ব্যাটিং বিপর্যয়ে ভারত
** ফাইনালের মঞ্চে ব্যাটিংয়ে টিম ইন্ডিয়া

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।