ঢাকা: ২০১২ সালের এশিয়া কাপের কথা মনে আছে? ২২ মার্চ মিরপুরে অনুষ্ঠিত ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানের ব্যবধানে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় টিম বাংলাদেশ। হারের বেদনায় অঝরে কেঁদেছিলেন সাকিব-মুশফিকরা।
বুধবার (২ মার্চ) পাকিস্তানের বিপক্ষে একই মাঠে আবারও মুখোমুখি হতে যাচ্ছে টাইগাররা। এ ম্যাচে মাঠে নামার আগে হয়তো সাকিব-মুশফিকের মনে ফিরে ফিরে আসবে সেই স্মৃতি।
যদিও ওই ম্যাচটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল ছিল, আর বুধবারের ম্যাচটি ফাইনাল না হলেও বাংলাদেশের জন্য অলিখিত ফাইনালই বলা যায়। কেননা আফ্রিদিদের বিপক্ষে ম্যাচটি জিততে পারলে এবারের আসরে বাংলাদেশের ফাইনাল খেলা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাবে, নয়তো তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলের জয়-পরাজয় আর রানরেটের সমীকরণের দিকে।
২০১৪ সালের এশিয়া কাপের দ্বাদশ আসরও মিরপুরেই বসেছিল। সেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ মুখোমুখিও হয়। তবে সেই আসরে বাংলাদেশ শুরু থেকেই ছন্দে ছিল না। ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ছন্দ হারিয়ে ফেলায় আনামুল, ইমরুল ও মুমিনুলদের চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ৩২৬ রান করেও জয় পায়নি বাংলাদেশ। আহমেদ শেহজাদ, ফাওয়াদ আলম ও আফ্রিদির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান ৩২৯ রান করে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে।
ফলে আসরটিতে টাইগারদের ফাইনালে খেলা নিয়ে স্বপ্নের জাল ততটা বোনা যায়নি যতটা এবারের আসরে বোনা যাচ্ছে।
এশিয়া কাপের এবারের আসরের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে বাংলাদেশ হেরে গেলেও পরের ম্যাচেই আমিরাতের বিপক্ষে জিতে জয়ের ধারায় ফিরে পরের ম্যাচেই দাপুটে জয় পেয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আর এই দুই জয়েই টাইগাররা ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছেন যা পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেলে সত্যি হয়ে ধরা দেবে।
আর এই স্বপ্ন সত্যি করতে হলে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে কী করতে হবে? এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর শফিকুল হক হীরাকে।
উত্তরে তিনি বললেন, অবশ্যই নিজেদের সেরা খেলাটি খেলতে হবে। বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই জ্বলে উঠতে হবে।
তার কথা নিশ্চই অমূলক নয়। কেননা আইসিসি টি-টোয়েন্টি ৠাংকিংয়ে ৭ নম্বরে পাকিস্তান আর ১০ নম্বরে বাংলাদেশ। শুধু কি তাই পাকিস্তান আফ্রিদির দল যার নেতৃত্বে খেলছেন; মোহাম্ম হাফিজ, শারজিল খান, শোয়েব মালিক, উমর আকমল ও খুররাম মঞ্জুরের মতো ব্যাটসম্যান আর মোহাম্ম আমির, মোহাম্মদ ইরফান, মোহাম্মদ সামি ও ওয়াহাব রিয়াজের মতো বোলাররা। তাই তিন বিভাগে জ্বলে উঠার বিকল্পই বা কী?
পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দিতে হলে বল হাতে জ্বলে উঠতে হবে টাইগার বোলারদের। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেরতে পারবেন না মুস্তাফিজুর রহমান। তাই বোলারদের একটু বাড়তি দায়িত্ব নিতে বললেন হীরা। ‘মুস্তাফিজ নেই তাই সাকিবসহ অন্যান্য যারা বল করবেন তাদের দায়িত্বটা বেশ সতর্কতার সাথেই পালন করতে হবে। পাকিস্তান টি-টোয়েন্টিতে বেশ দক্ষ। আরব আমিরাতের বিপক্ষে দলীয় ১৭ রানে প্রথম তিন উইকেট হারানোর পরও শোয়েব মালিক ও উমর আকমল দলকে জিতিয়েছেন। তাই সিরিয়াস হতে হবে।
শুধু বোলিংই নয়, ব্যাটসম্যানদের জন্যও পরামর্শ দিলেন হীরা। বললেন, পাকিস্তানের মতো বিশ্বসেরা বোলিং লাইনআপের সামনে দাঁড়ানোটা সহজ নয় কিন্তু সেটা করে দেখাতে হবে। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ৬ ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর এই ক’টি ওভারে রান কম এলেও উইকেট হারানো যাবে না। ওপেনার ও টপ অর্ডারদের পাশাপাশি মিডল অর্ডারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। বেশি কিছু লাগবে না দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিডল অর্ডাররা যেভাবে খেলেছে এই ম্যাচেও সেই ধারাবাহিকতা থাকলেই চলবে।
এদিকে, মুস্তাফিজের ইনজুরির সুবাদে দলে ফিরেছেন সদ্য পিতা হওয়া টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। মুস্তাফিজের ইনজুরি হীরাকে ব্যথিত করলেও তামিম ইকবাল দলে ফেরায় হীরা বেশ আপ্লুত। ‘তামিম খেললে দল উজ্জীবিত থাকবে। তাছাড়া ওর সাম্প্রতিক ফর্মও ভালো। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের ঘরোয়া লিগ ‘পিএসএল’ খেলে এসেছেন। তাই এই ম্যাচে প্রতিপক্ষের অনেক খেলোয়াড় সম্পর্কেই ওর ধারণা আছে যা দিন শেষে দলের জন্য একটি ভালো ফলাফল বয়ে আনবে। ’
এ ম্যাচে টাইগারদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? পাকিস্তানের বিপক্ষে আরেকটি হারের বেদনা নাকি এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানকে প্রথমবার হারানোর হাসি? ফলাফল যাই হোক আরেকটি রোমাঞ্চকর ম্যাচ হতে যাচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়ামে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই!
বাংলাদেশ সময়: ০০১২ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৬
এইচএল/এমজেএফ